প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
আদালত বলেছে, ঢেউ নয়, দেশে করোনার সুনামি আছড়ে পড়েছে। তার মধ্যেই করোনা প্রতিষেধকের দাম এবং জোগান নিয়ে দেশে বিতর্কের ঝড় বইছে। ঘুরপথে বিরোধীদের দাবি মেনে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের টিকার দাবি মানলেও সেই দায় কেন্দ্র নিজের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে রাজ্য এবং জনগণের ঘাড়েই চাপিয়েছে। এ নিয়ে রাহুল গাঁধী, মমতা বন্দোপাধ্যায়দের তোপের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেন। ৪৫-ঊর্ধ্বদের বিনামূল্যে প্রতিষেধক বণ্টনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি চালু থাকবে বলে জানিয়ে বাকিদের দায় তিনি রাজ্যের কোর্টেই ঠেলেছেন। দাবি করেছেন, কেন্দ্র সব রকম ভাবে রাজ্যের পাশে রয়েছে। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রের এই প্রকল্পের সুযোগ নিয়ে রাজ্যগুলি যত বেশি সংখ্যক টিকাকরণ করুক। কিন্তু ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের নিয়ে রা কাড়েননি। পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে অক্সিজেনের ভয়াবহ সঙ্কট এবং তার জেরে খাস রাজধানী দিল্লির হাসপাতালে প্রায় পঁয়তাল্লিশ জনের মৃত্যু নিয়ে একটিও কথা বলেননি মোদী। শুধু মাত্র জানিয়েছেন, অক্সিজেন উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।
নিজের রেডিয়ো বার্তায় মোদী দাবি করেছেন, প্রতিষেধক নিয়ে নানা গুজব বাতাসে ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন, “আমি দেশবাসীকে অনুরোধ করছি, কোভিড প্রতিষেধক নিয়ে কোনও গুজবে কান দেবেন না। আপনারা সবাই জানেন যে ৪৫ বছরের বেশি বয়স্করা বিনামূল্যে (সরকারি হাসপাতাল থেকে) প্রতিষেধক পাচ্ছেন। এ বার পয়লা মে থেকে ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা প্রতিষেধক পাবেন। সরকারের এই বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেওয়ার প্রকল্প যেটা এখন চলছে, সেটা চালু থাকবে। আমি রাজ্যগুলির কাছে আবেদন করছি, কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পের সুযোগ গ্রহণ করে, তারা যত বেশি সংখ্যক মানুষকে প্রতিষেধক দিক।” একই সঙ্গে এক বছর প্রস্তুতির সুযোগ পেয়েও করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় দেশ কেন এত বিপর্যস্ত, তা নিয়ে সব মহলের তোপের মুখে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘করোনার প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছিলাম আমরা। আত্মবিশ্বাস ছিল মনে। কিন্তু এই মুহূর্তে দেশ বিধ্বস্ত। করোনা আমাদের ধৈর্য ও সহনশীলতার পরীক্ষা নিচ্ছে।’’ টিকার ঘোর সঙ্কটের প্রসঙ্গ এড়িয়ে মোদীর দাবি, ‘‘ আপনারা জানেন সব রাজ্যে বিনামূল্য টিকা পাঠিয়েছি আমরা। ৪৫-এর ঊর্ধ্বে সকলে তার সুবিধা পাবেন। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাজ্যগুলিকে সর্বতো ভাবে সাহায্য করছে কেন্দ্র।’’ কিন্তু ১৮-ঊর্ধ্বদের নিয়ে কোনও কথাই বলেননি।
‘মন কি বাত'- এর আজ ৭৬তম পর্বে দু'জন চিকিৎসক, দু'জন নার্স এবং একজন অ্যাম্বুল্যান্স কর্মীর সঙ্গে কথা বলেন মোদী। তাঁদের অভিজ্ঞতা জানতে চান। করোনার মোকাবিলা কী ভাবে করা উচিত, টিকা নিয়ে যে বিভিন্ন ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে, সে বিষয়ে জানতে চান মোদী। বলেন, “ভরসাযোগ্য সূত্র থেকেই করোনা সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য আপনাদের আবেদন জানাচ্ছি। আপনারা আপনাদের পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আমি দেখেছি, অনেক চিকিৎসকই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন তথ্য জানাচ্ছেন এবং পরামর্শ দিচ্ছেন। অনেক হাসপাতাল তাদের ওয়েবসাইটে তথ্য দিচ্ছে।”
এ দিন তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই মোদী বলেন, “করোনার প্রথম ঢেউ যখন আছড়ে পড়েছিল, সফল ভাবেই তা সামলে উঠেছিলাম আমরা। কোভিড আমাদের ধৈর্য এবং যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতার পরীক্ষা নিচ্ছে। প্রিয়জনদের অনেকে অকালে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সব ক্ষেত্রের মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। কৃষক, প্রতিষেধক উৎপাদনকারী সংস্থা, অক্সিজেন উৎপাদন সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে।”
ইতিমধ্যে দেশে দৈনিক সংক্রমণ প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ছুঁয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘করোনাকে হারানোই এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য আমাদের। প্রতিষেধক নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনই সাবধানতা অবলম্বন করে চলা প্রয়োজন।’’ আজ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক এবং নার্সরা কোভিডের বিরুদ্ধে অসীম সাহসের সঙ্গে লড়ছেন। গত এক বছরে অতিমারির সঙ্গে নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁদের। চিকিৎসক, নার্সদের মতো অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরাও সাহসের সঙ্গে কাজ করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy