প্রতীকী ছবি।
সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের প্রায় ২০০টি ট্রায়াল চলছে। তার মধ্যে চার-পাঁচটি ভ্যাকসিনই এখনও পর্যন্ত গবেষণার দিক থেকে কার্যকারিতায় এগিয়ে রয়েছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক গবেষক মহল। তবে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কত শতাংশ হলে তা ব্যবহারযোগ্য হবে, এ নিয়ে ভিন্ন মত উঠে এসেছে। এমনকি, যেগুলি গবেষণার দিক থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত কিছু বলার সময় এখনও আসেনি বলেই জানাচ্ছে গবেষক মহল।
তাদের বক্তব্য, যে কোনও ভ্যাকসিনের দু’টি দিক সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তা হল ভ্যাকসিনের সুরক্ষা ও কার্যকারিতা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ভ্যাকসিন গবেষণার ফলাফলে দেখা গিয়েছে, এক বার অথবা চার সপ্তাহের ব্যবধানে দু’বার এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন বিরোধী অ্যান্টিবডি এবং টি-লিম্ফোসাইট কোষ তৈরি হচ্ছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও তেমন দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু এখনও তৃতীয় পর্যায়ের গবেষণা সম্পূর্ণ না হওয়ায় তা বাজারে আসতে পারেনি।
কী এই তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা?
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধকারী ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে এই ভ্যাকসিনটির মতোই দেখতে প্যাকেজে মোড়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন অন্য কিছু বা ওষুধ দেওয়া হয়েছে (প্ল্যাসিবো)। প্রথম দলটিকে বলা যেতে পারে ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত দল এবং দ্বিতীয় দলটিকে বলা হয় নিয়ন্ত্রক দল বা ‘কন্ট্রোল গ্রুপ’। তবে অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবীরা কেউই জানতে পারবেন না যে কে ভ্যাকসিন পেয়েছেন আর কে পাননি।
আরও পড়ুন: দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ফের ৩ হাজার ছাড়াল, রাজ্যে সুস্থতার হার ৮১ শতাংশের বেশি
কেন তাঁরা জানতে পারবেন না, এর কারণ ব্যাখ্যা করে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর সংক্রামক রোগ চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবীদের আচরণগত পরিবর্তন হতে পারে কে কোনটা পেয়েছেন জানলে। যার প্রভাব পড়তে পারে গবেষণার ফলাফলে। অর্থাৎ, যিনি ভ্যাকসিন পেলেন, তিনি নিজেকে নীরোগ মনে করে কম হাত ধোয়া, মাস্ক না পরা-সহ সংক্রমণ রোখার বিভিন্ন পদ্ধতি না-মানতে পারেন। আবার যিনি ভ্যাকসিনের মতোই দেখতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ওষুধটি পেলেন, তিনি সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে বেশি করে সতর্ক হতে পারেন। সায়ন্তনবাবুর কথায়, ‘‘কিন্তু দুই দলের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা যেমন একই থাকা দরকার, তেমনই দুই দলের বিহেভিয়োরাল প্যাটার্নও একই থাকা দরকার। না হলে তুল্যমূল্য বিচার করা সম্ভব হবে না।’’ এর পর কয়েক মাস ধরে এই স্বেচ্ছাসেবীদের বিজ্ঞানসম্মত ভাবে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন বিজ্ঞানীরা। তুলনা করে দেখা হবে যে ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত দল এবং নিয়ন্ত্রক দলের মধ্যে কত জন স্বেচ্ছাসেবক এই পর্যবেক্ষণ কালে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: কৃষিতে স্বনির্ভর হওয়ার ডাক প্রধানমন্ত্রীর, বিনিয়োগ কই?
সেখানেই প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার বিষয়টি। মার্কিন চিকিৎসক অ্যান্টনি ফাউচি-সহ বিজ্ঞানীদের একাংশ জানাচ্ছেন, কেবলমাত্র পঞ্চাশ শতাংশ কার্যকরী ভ্যাকসিন পেলেই যথেষ্ট। কিন্তু ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর এমেরিটাস-বিজ্ঞানী নরেন্দ্র কে মেহরা জানাচ্ছেন, দু’টি ভ্যাকসিন এই মুহূর্তে গবেষণার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন ও আমেরিকার মডার্না সংস্থার ভ্যাকসিন। তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু যার ভ্যাকসিনই হোক না কেন, তার কার্যকারিতা কমপক্ষে সত্তর শতাংশ হতে হবে। না হলে তো কোনও লাভ হবে না! এখনও পর্যন্ত গবেষণায় ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে। তবে চূড়ান্ত উত্তর পেতে এখনও অপেক্ষা করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy