গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সোমবার সংসদে বাদল অধিবেশন শুরুর আগেই জাতীয় রাজনীতি সরগরম পেগাসাস কাণ্ডে। ইজরায়েলি এই স্পাইওয়্যার সরকার ও বিরোধী পক্ষের নেতা, মন্ত্রী থেকে শুরু করে ৪০ জনের বেশি সাংবাদিক, শিল্পপতি, সমাজকর্মী, বিচারপতিদের ফোন হ্যাক করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীরা আবার অভিযোগ তুলেছে সরকারের বিরুদ্ধে। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
কিন্তু কী ভাবে কাজ করে এই পেগাসাস স্পাইওয়্যার? কারা আক্রান্ত? সাধারণ মানুষই বা কতটা সুরক্ষিত?
ফোনে নজরদারির অস্ত্র পেগাসাস স্পাইওয়্যার কী?
এটি ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও-র তৈরি সফটওয়্যার, যা মোবাইলে আড়ি পাতার অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। ফোনে কী কথাবার্তা হচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপে কী আদান-প্রদান হচ্ছে সবই জানা যায়। ফোনে কী তথ্য, নথি, ছবি রয়েছে সেটাও দেখে ফেলা যায় এর মাধ্যমে। অথচ যাঁর মোবাইল হ্যাক করা হয়েছে, তিনি জানতেই পারেন না।
কী ভাবে কাজ করে এই স্পাইওয়্যার?
প্রথমে ফোনে একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক পাঠানো হয়। তাতে ক্লিক করলেই মোবাইলে পেগাসাস ইনস্টল হয়ে যায়। এ ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস কল বা ভিডিয়ো কল করেও পেগাসাস ঢোকানো যায়।
কারা ফাঁস করল এই স্পাইওয়্যারের কথা?
২০১৯ সাল থেকে ১৬টি সংবাদমাধ্যম মিলে ‘পেগাসাস প্রোজেক্ট’ নামে একটি তদন্ত করেছিল। রবিবার সেই রিপোর্টের কিছু অংশ সামনে এসেছে।
আক্রান্ত কারা?
দু’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তিন জন বিরোধী নেতা-নেত্রী, এক জন সাংবিধানিক পদাধিকারী, চল্লিশের বেশি সাংবাদিক, বহু ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, নিরাপত্তা সংস্থার বর্তমান ও প্রাক্তন প্রধান, সমাজকর্মী, আমলা, আইনজীবীরা আক্রান্ত এই স্পাইওয়্যারে।
সরকারের দাবি:
মোদী সরকার জানিয়েছে, ব্যক্তি পরিসরের মৌলিক অধিকারের প্রতি সরকার দায়বদ্ধ। নির্দিষ্ট কারও উপরে সরকারি নজরদারির অভিযোগ ভিত্তিহীন। ফোনে আড়ি পাতা, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে নজরদারিতে সরকারি অনুমতি লাগে। আইন মেনেই ফোনে আড়ি পাতা হয়।
কবে প্রথম খবরে আসে পেগাসাস?
২০১৯-এর অক্টোবরে ফেসবুকের মালিকানাধীন সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, চারটি মহাদেশের প্রায় ১৪০০ জনের মোবাইল পেগাসাসের মাধ্যমে হ্যাক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেসের প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা, এনসিপি-র প্রফুল্ল পটেল, ভীমা কোরেগাঁও মামলার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সমাজকর্মী, আইনজীবী ও সাংবাদিকরা।
প্রথম শোরগোলের পরে কী জানা গিয়েছিল?
২০১৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ দাবি করে, মে ও সেপ্টেম্বর মাসে তারা ভারত সরকারকে জানিয়েছিল, ভারতে ২০ জনের বেশি মানুষের মোবাইল হ্যাক হয়েছে। এ ছাড়া, ১২১ জনের মোবাইলে স্পাইওয়্যার হামলা হয়েছে।
এই ঘটনায় ইজরায়েলের ভূমিকা কী?
ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও-র দাবি, নিরাপত্তার জন্য নজরদারি চালানোর প্রযুক্তি তৈরি করাই তাদের কাজ। তারা শুধুমাত্র বিভিন্ন দেশের সরকার, সরকারি নিরাপত্তা সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাকে পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিক্রি করেছে।
তা হলে আড়ি পাতে কারা?
এই প্রশ্নের জবাব মেলেনি। ২০১৯-এ লোকসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মোদী সরকার কি পেগাসাস ব্যবহার করে? তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছিলেন, ফোনে আড়ি পাতার জন্য ‘বেআইনি কোনও নির্দেশ’ দেওয়া হয়নি। তবে মন্ত্রী জানান, সরকার নাগরিকদের ব্যক্তিগত পরিসর ও গোপনীয়তার প্রতি দায়বদ্ধ। নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারি সংস্থাগুলিকে কারও ফোনে আড়ি পাততে হলে নির্দিষ্ট প্রোটোকল মেনে শীর্ষস্তরের অফিসারদের অনুমতি নিতে হয়।
ভারতে ফোনে আড়ি পাতার নিয়ম কী?
নিরাপত্তার স্বার্থে তথ্যপ্রযুক্তি আইন ও টেলিগ্রাফ আইনে পুলিশ, গোয়েন্দা বা তদন্তকারী সংস্থাকে ফোনে, কম্পিউটারে আড়ি পাতার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের ১০টি সংস্থার হাতে এই ক্ষমতা রয়েছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে কেন্দ্রের বা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে এর অনুমতি নিতে হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে কেন্দ্রে ক্যাবিনেট সচিব ও রাজ্যে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি অনুমতির বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তবেই তা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy