মোদী সরকারেরই দু’জন মন্ত্রী। বিরোধী শিবিরের তিন জন গুরুত্বপূর্ণ নেতানেত্রী। এক জন সাংবিধানিক পদে আসীন ব্যক্তি। চল্লিশ জনের বেশি সাংবাদিক। একগুচ্ছ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। নিরাপত্তা সংস্থার বর্তমান ও প্রাক্তন প্রধান। এ ছাড়াও সমাজকর্মী, সরকারি আমলা, আইনজীবী।
এঁদের মধ্যে মিল হল, এঁদের সকলের ফোনেই ইজরায়েলের এনএসও সংস্থার তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যারকে কাজে লাগিয়ে আড়ি পাতা হয়েছে বলে অভিযোগ। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতে ৩০০র বেশি ফোনে মোদী সরকার এই ভাবে আড়ি পাতার চেষ্টা চালিয়েছিল বলে ‘পেগাসাস প্রোজেক্ট’ নামে একটি তদন্ত রিপোর্টে দাবি। ভারত-সহ ১৬টি দেশের সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা মিলে এই তদন্ত চালিয়েছেন। তবে সরকারের দাবি, নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের উপরে সরকারি নজরদারির অভিযোগ ভিত্তিহীন। যে কোনও ফোনে আড়ি পাতা, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে নজরদারিতে সরকারি অনুমতি থাকে। আইন মেনেই ফোনে আড়ি পাতা হয়।
কোন কোন মন্ত্রী, বিরোধী শিবিরের নেতানেত্রী ও শিল্পপতিদের ফোনে আড়ি পাতার চেষ্টা হয়েছিল, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তা সামনে আসতে পারে। তবে যে সমস্ত সাংবাদিকের ফোন হ্যাক করে আড়ি পাতার চেষ্টা হয়েছিল, তাঁদের অধিকাংশের নামই প্রকাশ্যে এসেছে। সেই তালিকায় দিল্লিতে কর্মরত প্রথম সারির সংবাদপত্র, বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা যেমন রয়েছেন, তেমনই বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত সাংবাদিকরাও রয়েছেন।
সোমবার থেকেই সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তার ঠিক আগে কাদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল, তা নিয়ে রবিবার থেকেই রাজধানীর রাজনীতি সরগরম ছিল। শুধু সংসদে নয়, বিজেপির অন্দরমহলেও এই পেগাসাস-কাণ্ড ঝড় তুলতে পারে বলে রাজনীতিকরা মনে করছেন। কারণ সরকারের মন্ত্রীদের ফোনেও আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছে।
কে আড়ি পাতার নির্দেশ দিয়েছিল? অভিযোগের তির মোদী সরকারের দিকে। কারণ ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও আগেই জানিয়েছে, তারা শুধুমাত্র বিভিন্ন দেশের সরকারকেই তাদের পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিক্রি করেছিল। বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাই এই স্পাইওয়্যার কাজে লাগিয়ে ফোনে আড়ি পেতে থাকে। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রসচিবের অনুমতি ছাড়া আড়ি পাতা যায় না। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, মোদী সরকারই কি নিজের মন্ত্রীদের ফোনে আড়ি পাতার নির্দেশ দিয়েছিল! কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, পায়রার পায়ে বেঁধে পাঠানো বার্তাও কি এখন মোদীজির থেকে নিরাপদ?
কী ভাবে গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে এল? ইজরায়েলি সংস্থাটি যে সব দেশকে পেগাসাস বেচেছিল, তাদের তথ্যভাণ্ডার থেকেই প্রায় ৫০ হাজার ফোন নম্বর ফাঁস হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই এ দেশের ৩০০-র বেশি নম্বর রয়েছে। প্যারিসের অলাভজনক সংবাদ সংস্থা ‘ফরবিডেন স্টোরিজ’ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই তথ্যভাণ্ডার হাতে পেয়ে বিভিন্ন দেশের ১৬টি সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দেয়। ভারতে ‘দ্য ওয়্যার’ নামের পোর্টাল এই তথ্যভাণ্ডার হাতে পেয়েছিল। এই ১৬টি সংবাদমাধ্যম মিলে ‘পেগাসাস প্রোজেক্ট’ নামের তদন্ত শুরু করে। ওই তালিকায় থাকা ফোনে ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হয়। ৩৭টি ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়্যার থাকার স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। এই ৩৭টি ফোনের মধ্যে ১০টি-ই এ দেশের।
‘দ্য ওয়্যার’ জানিয়েছে, পেগাসাস প্রোজেক্টের তালিকায় সুপ্রিম কোর্টের একজন কর্মরত বিচারপতির ফোন নম্বরও রয়েছে। তবে ওই বিচারপতি এখনও সেই নম্বরটি ব্যবহার করছেন কি না, বা সেই নম্বর থেকে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ বা কোনও মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করতেন কি না, তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
এর আগে ২০১৯-এও আড়ি পাতার অভিযোগ সামনে এসেছিল। টরন্টো ইউনিভার্সিটির সিটিজেন ল্যাব জানিয়েছিল, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা, প্রফুল্ল পটেলের মতো রাজনীতিক থেকে প্রায় দু’ডজন সাংবাদিক, সমাজকর্মীর ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে। সে সময়ই সংসদে প্রশ্ন ওঠে, মোদী সরকার কি পেগাসাস স্পাইওয়্যার কিনেছে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক লোকসভায় তখন এ কথা অস্বীকার করেনি, আবার মেনেও নেয়নি। রাজ্যসভায় তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছিলেন, আড়ি পাতার কোনও বেআইনি নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
এখন মোদীরই মন্ত্রীদের ফোনে আড়ি পাতার চেষ্টা হয়েছে দেখে প্রশ্ন উঠছে, সরকার মন্ত্রীদের ফোনে আড়ি পাতছিল? তদন্তকারী সাংবাদিকদের থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। এ বারও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক পেগাসাস কাজে লাগানোর অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেনি। জানিয়েছে, ব্যক্তিপরিসরের অধিকার মৌলিক অধিকার। তার প্রতি সরকার দায়বদ্ধ। নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপরে নজরদারির অভিযোগ ভিত্তিহীন। যে কোনও ফোনে আড়ি পাতা, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে নজরদারিতে সরকারি অনুমতি থাকে। আইন মেনেই ফোনে আড়ি পাতা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy