২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ের সন্ত্রাসবাদী হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে আমেরিকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে ভারতে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি বিমানবন্দরে নামার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। আপাতত ১৮ দিনের জন্য রানাকে হেফাজতে পেয়েছে তারা। শুক্রবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ। রানাকে জেরার জন্য এনআইএ-র সদর দফতরে বিশেষ কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে এনআইএ-র ১২ জন শীর্ষ আধিকারিক এই জেরা করবেন।
পাক বংশোদ্ভূত হলেও কানাডার নাগরিক রানা। দীর্ঘ দিন লস অ্যাঞ্জেলেসে বন্দি ছিলেন তিনি। তাঁকে ভারতে ফেরানো এবং বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা চলছিল। অবশেষে এনআইএ-র সেই চেষ্টা সফল হয়েছে। অভিযোগ, পাক বংশোদ্ভূত আর এক সন্ত্রাসবাদী ডেভিড হেডলির সঙ্গে রানার ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। তাঁরা দু’জনেই ২৬/১১ হামলার ছক কষেছিলেন। রানার যোগাযোগ ছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লশকর-এ-ত্যায়বার সঙ্গেও। মুম্বই হামলার কিছু দিন আগে ভারতে এসেছিলেন রানা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী-ও। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে এই ভারত সফর, লশকর-এ-ত্যায়বা এবং হেডলির প্রসঙ্গ উঠে আসতে পারে। সূত্রের খবর, ২৬/১১ হামলা সম্পর্কে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং অজানা তথ্য মিলতে পারে রানার কাছ থেকে। মূলত যে দিকগুলি এনআইএ আধিকারিকেরা তুলে আনতে চাইছেন—
আরও পড়ুন:
• ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে হামলা যখন শুরু হল, সেই মুহূর্তে কোথায় ছিলেন রানা? কী করছিলেন তিনি?
• ৮ থেকে ২১ নভেম্বরের মধ্যে রানা কেন ভারতে এসেছিলেন? এই সময়ে কোথায়, কাদের সঙ্গে দেখা করেছেন? সঙ্গে স্ত্রীকেই বা রেখেছিলেন কেন?
• হেডলির সঙ্গে রানার সম্পর্ক কেমন? কেন তাঁর জন্য ভুয়ো ভিসা তৈরি করে দিয়েছিলেন রানা? কী পরিকল্পনা ছিল?
• রানার ভারত সফরের সময়ে হেডলি তাঁকে কী কী তথ্য সরবরাহ করেছিলেন? কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল?
• হেডলির সঙ্গে বসেই কি মুম্বই হামলার বিশদ পরিকল্পনা করেছিলেন রানা?
• মুম্বই হামলায় বেশ কিছু ‘টার্গেট’ আগে থেকে ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল। কারা ছিলেন এই ‘টার্গেট’? তাঁদের আলাদা করে বাছাই করার ক্ষেত্রে রানার ভূমিকা কী ছিল?
• লশকর-এ-ত্যায়বার জন্য কার্যকর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে রানা কী ভাবে হেডলিকে সাহায্য করেছিলেন?
• মু্ম্বই হামলা সফল করার জন্য রানা অর্থ জুগিয়েছিলেন কি? কোথা থেকে কী ভাবে সেই অর্থ জোগাড় করেছিলেন?
• লশকর-এ-ত্যায়বার হাফিজ সইদের সঙ্গে কবে এবং কী ভাবে দেখা করেছিলেন রানা? তাঁদের সম্পর্ক কেমন ছিল? সংগঠনে রানার ভূমিকা কী ছিল? সেখান থেকে পরিবর্তে তিনি কী পেতেন?
আপাতত এনআইএ-র সদর দফতরে রাখা হচ্ছে রানাকে। দফতরের নীচ তলার ১৯৬ বর্গফুটের কুঠুরিতে সর্ব ক্ষণের সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে রয়েছেন তিনি। প্রতি ৪৮ ঘণ্টা অন্তর তাঁর শারীরিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রানা যাতে কোনও ভাবে নিজের ক্ষতি করতে না পারেন, তার জন্য সতর্ক কেন্দ্রীয় সংস্থা। ১৮ দিনের এনআইএ হেফাজত শেষে আবার রানাকে আদালতে হাজির করানো হবে। বিচারবিভাগীয় হেফাজতে তাঁকে তিহাড় জেলে রাখা হতে পারে। সেখানকার নিরাপত্তাও আঁটসাঁট করা হচ্ছে।