মঙ্গলবার ‘দিল্লি চলো’ যাত্রা শুরু করেছেন কৃষকরা। ছবি: পিটিআই ।
কেন্দ্রের কাছে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা পৌঁছে দিতে মঙ্গলবার ‘দিল্লি চলো’ যাত্রা শুরু করেছেন কৃষকরা। উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব এবং হরিয়ানা— মূলত এই তিন রাজ্যের কৃষকেরাই এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। অংশ নেওয়ার কথা প্রায় সাড়ে তিনশোটি ছোট-বড় কৃষক সংগঠনের। ২০২০ সালে কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা দেশ। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে লাগাতার আন্দোলন চলে। সেই আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ‘বিতর্কিত’ কৃষি বিল প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কৃষক সংগঠনগুলিও নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে। তা হলে কেন আবার নতুন করে আন্দোলনে নামলেন পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকেরা?
কৃষক সংগঠনগুলি যে দাবিগুলি নিয়ে দিল্লির রাস্তায় নামছে তার মধ্যে অন্যতম হল, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে। স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব মেনে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সমস্ত কৃষিঋণ মকুব করারও দাবি তুলেছেন বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা।
পাশাপাশি, ২০২০-২১ সালের প্রতিবাদে কৃষকদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা খারিজের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। জানানো হয়েছে বিদ্যুৎ আইন ২০২০ বাতিলের এবং লখিমপুর খেরিতে নিহত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবি। সোমবার রাতে বিষয়গুলি নিয়ে কেন্দ্র এবং কৃষক সংগঠনগুলির মধ্যে বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। সূত্রের খবর, সোমবার রাত ১১টার পর সেই বৈঠক বসে। ২০২০ সালের বিদ্যুৎ আইন বাতিল করার বিষয়ে কৃষকনেতাদের আশ্বস্ত করেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরির ঘটনায় কৃষকদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলেও জানানো হয়। কিন্তু কৃষকদের মূল তিনটি দাবি— ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, কৃষিঋণ মকুব এবং স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাবের রূপায়ণ নিয়ে দু’পক্ষ কোনও স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। ফলে কৃষকেরা নিজেদের সংকল্পে অটল বলেই জানিয়েছেন কৃষকদের এক প্রতিনিধি। তাঁর অভিযোগ, দু’বছর আগে কৃষকদের অর্ধেক দাবি মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কেন্দ্র কিছুই করেনি। কৃষকেরা শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেও সরকার সময় নষ্ট করেছে বলে অভিযোগ তাঁর।
সম্মিলিত কিষাণ মোর্চার (অ-রাজনৈতিক) জগজিৎ সিংহ দাল্লেওয়াল এবং কিষাণ মজদুর সংগ্রাম কমিটির সারওয়ান সিংহ পান্ধেরের মতো কৃষকনেতারা তাঁদের দাবি পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, কৃষকদের দিল্লিযাত্রা রুখতে সক্রিয় হয়েছে প্রশাসন। তড়িঘড়ি দু’টি বড় স্টেডিয়ামে অস্থায়ী জেল তৈরি করেছে হরিয়ানার মনোহর লাল খট্টরের সরকার। সিরসার চৌধরি দলবীর সিংহ ইন্ডোর স্টেডিয়াম এবং ডাবওয়ালির গুরু গোবিন্দ সিংহ স্টেডিয়াম দু’টিকে অস্থায়ী জেলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। কৃষকেরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে তাঁদের আটক করে ওই দু’টি জেলে রাখা হবে বলে সূত্রের খবর। হরিয়ানা সীমান্তে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মোতায়েন রয়েছে জলকামান। বিক্ষোভকারীরা যাতে অন্যান্য জেলা থেকে হরিয়ানায় ঢুকতে না পারেন, সেই উদ্দেশ্যে রাজ্যের সীমানায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত ৫০ কোম্পানি পুলিশ মোতায়েন করেছে সে রাজ্যের সরকার। হরিয়ানার সরকার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে।
কৃষকদের মিছিল নিয়ে সতর্ক দিল্লিও। কৃষকদের কর্মসূচির আগে দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে । ১২ মার্চ পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে রাজধানীতে। সিঙ্ঘু, গাজিপুর এবং টিকরি সীমানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সীমানা অবরুদ্ধ করতে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে জায়গায় জায়গায়। কংক্রিটের দেওয়াল তুলে কাঁটাতারের বেড়া এবং পেরেকের পাটাতন বসানো হয়েছে। মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। কৃষকদের দিল্লিতে ঢুকতে বাধা দেওয়ার ব্যবস্থার জন্য কেন্দ্রের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে বিরোধী দল এবং কৃষক সংগঠনগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy