রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী-স্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কেন্দ্রের কিছু তপ্ত বাদানুবাদ হয়েছে। প্রতীকী ছবি।
একশো দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রের বকেয়া টাকা দ্রুত পশ্চিমবঙ্গকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির দেড় মাস অতিক্রান্ত। কিন্তু এখনও ওই টাকা ঝুলে রয়েছে। রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী-স্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কেন্দ্রের কিছু তপ্ত বাদানুবাদ হয়েছে। কিন্তু এরই পাশাপাশি ‘উপর মহলের চাপের’ কথাও ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। এর সঙ্গে রয়েছে রাজ্য বিজেপির উল্টো চাপও।
গত কাল তাৎপযপূর্ণ ভাবে একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা প্রসঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বার্তা দিয়েছেন যে, তিনি কলকাতায় গিয়ে বিষয়টি দেখবেন। উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় জট খুলবে কি না, তা সময়ই বলতে পারবে। কিন্তু আপাতত তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, এই বিষয়টি নিয়ে ‘উপর মহলের’ যে চাপ রয়েছে, সে কথা নাকি প্রকারান্তরে স্বীকার করেছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। বস্তুত, তৃণমূল সূত্রে দাবি করা হচ্ছে যে, এর আগে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ তৃণমূলের এক নেতার সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে ঘরোয়া আলোচনায় জানিয়েছিলেন, ‘উপর মহল’ থেকে এই নিয়ে তাঁর উপরে চাপ রয়েছে। যদি তৃণমূলের শীর্ষ নেত্রী সরকারের শীর্ষ নেতার সঙ্গে বসে, কথা বলে সুবিধাজনক সূত্রে ফয়সালা করে নেন, তা হলে সুরাহা সম্ভব। তবে তৃণমূল সূত্র এই দাবি করলেও কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বক্তব্য, এখানে ‘উপর মহলের’ চাপের কোনও ব্যাপার নেই। দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল বলেই পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। এখনও সে ব্যাপারে রাজ্যের ব্যাখ্যা মেলেনি বলেই তা ছাড়া হয়নি।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, গোড়া থেকেই কেন্দ্রের সঙ্গে দর-কষাকষিতে একটি ভুল হয়ে গিয়েছিল তৃণমূলের। অতিমারির কারণে লকডাউনের ঠিক আগে কেন্দ্র একটি প্রতিনিধি দল বাংলায় পাঠায় একশো দিনের কাজের রূপায়ণের দিকটিতে নজরদারির জন্য। ওই দল যে ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলির কথা উল্লেখ করে, সেগুলি ঘরোয়া ভাবে অনেকাংশে মেনেও নেয় রাজ্য।
জুন মাসে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক সংসদীয় দল গিরিরাজের সঙ্গে দেখা করে পাওনা টাকা দেওয়ার দাবি জানায়। ত্রুটি সংশোধনের কাজ যে শুরু হয়েছে, কেন্দ্রকে এই কথাও জানানো হয়।
এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, তৃণমূলের ওই সংসদীয় দলের সদস্য রাজ্যসভার এক সাংসদ এবং লোকসভার এক সাংসদ গিরিরাজের সঙ্গে উত্তপ্ত স্বরে কথা বলেন। রাজ্যসভার ওই সাংসদ নাকি দুর্নীতির প্রশ্নে গিরিরাজের রাজ্য বিহারের কথা তুলে বলেন, বাংলাকে নিশানা করা হচ্ছে, কিন্তু বিহারে কি কোনও দুর্নীতি হয়নি? সূত্রের বক্তব্য, বিহারের ভূমিহার ব্রাহ্মণ গিরিরাজ চরম রুষ্ট হন এই মন্তব্যে। ফলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পাওনা আদায়ের যে সম্ভাবনা ছিল, তা তখন কিছুটা রুদ্ধ হয়।
নভেম্বরের গোড়ায় রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার একশো দিনের কাজ-সহ গ্রামোন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পের বকেয়া টাকা দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে গিরিরাজের সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠক শেষে প্রদীপ বলেও দেন যে, কেন্দ্রের উল্লেখ করা প্রথাগত ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে সংশয়ের নিরসন হয়েছে। রাজ্য আগামী দিনে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সব শর্ত মেনে চলার আশ্বাস দিয়েছে।
দিল্লির রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, গিরিরাজের সঙ্গে দেখা করে প্রদীপ নিঃশব্দে কলকাতা ফিরে এলে বিষয়টি হয়তো রাজ্যের পক্ষে সুবিধাজনক হত। কারণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী টাকা ছাড়ার আশ্বাস দিয়েছেন, এ কথা শোনার পরে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারাও কেন্দ্রের উপরে চাপ সৃষ্টি শুরু করেন। তাঁরা বলেন, রাজ্যে তৃণমূল কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি করছে। তাই কোনও টাকা ছাড়ার আগে কেন্দ্র বিষয়টি বিবেচনা করুক। এই সব কিছুর ফলে গোটা প্রক্রিয়া ফের গড্ডালিকা স্রোতের মধ্যে পড়েছে বলে সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy