Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Pinjra Tod Protest

খাঁচা ভাঙার লড়াই সর্বত্র, বলছেন দেবাঙ্গনা

দিল্লি হিংসায় অভিযুক্ত তিন পড়ুয়া দিল্লি হাই কোর্টের রায়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি।

দেবাঙ্গনা কলিতা

দেবাঙ্গনা কলিতা

চৈতালি বিশ্বাস
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২১ ০৭:৪৯
Share: Save:

দিল্লি হিংসায় অভিযুক্ত তিন পড়ুয়া দিল্লি হাই কোর্টের রায়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। তার মধ্যে মানসিক চাপ বাড়িয়েছিল শনিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষা। তবে বিকেলের পর তাঁরা নিশ্চিন্ত হন যে, তাঁদের জামিন বহালই থাকছে। তার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন দেবাঙ্গনা কলিতা, নাতাশা নারওয়াল এবং আসিফ তনহার।

শনিবার সন্ধেয় দেবাঙ্গনা দিল্লিতে বন্ধুর বাড়ি থেকে ফোনে জানালেন, ভাল আছেন। দেশের বিচারব্যবস্থার উপরে ভরসা রাখছেন। এখনও আইনি লড়াইয়ের অনেকটা পথ বাকি। আর আসিফ বলছেন, ‘‘আমি সন্ত্রাসবাদী নই, রায়ের পর এখন অন্তত জোর দিয়ে বলতে পারছি।’’

ফোনে আসিফ বলছেন, ‘‘ভাবতে পারিনি, জামিন পাব। তবে তার পরেও বলব—আমাদের তিন জনের জামিনই সব নয়। আমি চাই, এই ধারায় যে সকল পড়ুয়া দীর্ঘ দিন
ধরে জেলে রয়েছেন কিংবা ভীমা কোরেগাঁও মামলা কিংবা অসমের অখিল গগৈয়ের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, সকলে জামিন পান। হাই কোর্টের রায়ের পর আমার এটুকু বিশ্বাস, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই দেশদ্রোহিতার মামলার চার্জ আনার আগে ভাবা হবে।’’

দেবাঙ্গনাও বলছেন, ‘‘পিঞ্জরা তোড় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে আমরা নিজেরাই খাঁচার ভিতরে ঢুকে গেলাম। মনে আছে, আমাকে
আর নাতাশাকে যখন মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে জেলের ভিতরে ঢোকানো হচ্ছে, দেখতে পাচ্ছি— জেলের দরজায় পর দরজা, তালার উপর তালা। ওখানে বসে তখন ভাবছিলাম এটাই হয়তো সবচেয়ে বড় ফ্যালাসি। জেলে থেকে বুঝতে পেরেছি— জাতিভেদের বিরুদ্ধে, লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে, ধর্মের বিরুদ্ধে খাঁচা ভাঙার যে লড়াইয়ে আমরা নেমেছিলাম, তা শুধু বাইরের লড়াই না। জেলের ভিতরেও বৈষম্যের বিরুদ্ধে, পড়াশোনা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য, জেলবন্দিদের অধিকারের জন্য গলা তুলতে হবে। সেটাই করতাম।’’

সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে দেবাঙ্গনা বলেন, ‘‘মনে আছে, আমরা যখন দিল্লির রাস্তায় নেমে স্লোগান দিচ্ছি— ‘ফতিমা-সাবিত্রী অমর রহে’, দিল্লি পুলিশ এসে জানতে চাইল— ‘‘এরা কারা? কোথায় এরা!’’ হিন্দু-মুসলিমের একসঙ্গে নাম উচ্চারণ করা শুনে ঘাবড়ে যেত। পরে আমরা ওদের বুঝিয়ে বললাম, সাবিত্রী ফুলে, ফতিমা শেখের কথা। ফলে, আমাদের দেশে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন করে জেলে যাওয়ার ঘটনাটা খুব অবাক করার মতো নয়।’’

দেবাঙ্গনা জানাচ্ছেন সেই সব দিনের কথা— যখন নাতাশার বাবা অসুস্থ, অক্সিজেন স্যাচুরেশন ক্রমশ কমছে, অথচ বাবাকে দেখতে যাওয়ার অনুমতি পাননি তাঁদের বান্ধবী। তিনি বলেন, ‘‘জামিনের আবেদন করা হল শনিবার, বিচারক জানালেন সে দিন শুনতে পারবেন না, সোমবার শোনা হবে। পরের দিন কাকু ভেন্টিলেশনে চলে গেল। নাতাশার সঙ্গে কাকুর আর শেষ দেখাটুকুও হল না। আমরা সে সময়ে ওর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এমন যন্ত্রণা বোধ হয় এ ভাবে বন্ধুদের সঙ্গেও ভাগ করে নেওয়া যায় না। অথচ, কাকু আমাদের জেলের ভিতরের দিনগুলোয় অসম্ভব মনোবল বাড়াতে সাহায্য করেছিলেন।’’

দেবাঙ্গনা জানান, তাঁর মা-বাবা বর্তমানে অসমে রয়েছেন। হয়তো ওঁরা দেখা করতে আসবেন মেয়ের সঙ্গে। কিন্তু জামিনের শর্ত মেনেই দিল্লি ছেড়ে কোথাও যেতে পারছেন না তিনি। দেবাঙ্গনা আর আসিফ জানিয়ে দিতে ভোলেননি, যেহেতু মামলা এখনও সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন, তাই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান না তাঁরা। দেবাঙ্গনার কথায়, ‘‘দিল্লি হাই কোর্ট ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। গণতন্ত্র নিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ আমাদের নতুন করে প্রতিবাদ আর সন্ত্রাসের সংজ্ঞাটা বুঝিয়ে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট একে নজির হিসাবে পরবর্তী মামলায় ব্যবহার করায় স্থগিতাদেশ এনেছে। তবে দেশের বিচারব্যবস্থার উপরে পূর্ণ আস্থা রয়েছে। ১৯ জুলাই পরবর্তী শুনানি। আমার ধারণা, সেখানে আইনি পরিসবে গণতন্ত্রের জন্য জরুরি বিষয়গুলি আলোচিত হবে।’’ তাঁর প্রশ্ন— ‘‘আমরা না হয় এক বছরের মধ্যে জামিন পেলাম। কিন্তু যাঁরা শুনানির জন্য অপেক্ষা করতে করতে জেলেই দশটা বছর কাটিয়ে দিয়ে তার পর ছাড়া পাচ্ছেন, তাঁদের ওই সময় কে ফেরত দেবে?’’

অন্য বিষয়গুলি:

UAPA Pinjra Tod Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy