অবশেষে পুলিশের জালে বিকাশ দুবে। —ফাইল চিত্র
গত ৩ জুলাই শুক্রবার ভোরে বিকাশ দুবেকে তার গ্রামে ধরতে গিয়ে গুলিবৃষ্টির মুখে পড়েন পুলিশকর্মী-অফিসাররা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আট জনের। তার পর থেকেই বিকাশকে ধরতে হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার উজ্জয়িনীর একটি মন্দির থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কানপুরের বিকরু গ্রামের সেই শুটআউটের ঘটনা মানিয়ে দেয় বলিউডি সিনেমাকেও। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিকাশ দুবে ও তার গ্যাংকে ধরতে রাত দিন এক করে ফেলেছেন উত্তরপ্রদেশের পুলিশকর্তারা। উত্তরপ্রদেশের অপরাধ জগতের চোরাগলি থেকে রাজনীতির আনাচ কানাচ, সর্বত্রই অনায়াস গতি বিকাশের। এক কথায় ‘পাতাললোক’-এর বেতাজ বাদশা বিকাশ, যার মাথার উপর ঝুলছে ৬০-টিরও বেশি মামলা।
১৯৯০ থেকে অপরাধে হাতেখড়ি বিকাশের। তার পর যত সময় গড়িয়েছে ততই তার অপরাধের পাল্লা ভারী হয়ে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে খুন, ডাকাতি, অপহরণ, পণবন্দি করা, দাঙ্গা বাধানোর মতো একের পর এক অভিযোগ। খুনের দায়ে জেল খাটতেও হয়েছে বিকাশকে। কিন্তু এ সবে তাকে থামানো যায়নি। লখনউ থেকে ১৫০ কিমি দূরে কানপুরের বিকরু গ্রামে তার জন্ম। যুবক বয়সে অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে বিকাশ। তার পর অপরাধের একের পর এক ‘মাইলস্টোন’ পেরিয়ে গিয়েছে বিকাশ দুবে।
ঠান্ডা মাথার খুনি বিকাশ। ২০০০ সালে তারাচাঁদ ইন্টার কলেজের প্রিন্সিপাল সিদ্ধেশ্বর পাণ্ডেকে খুন করে সে। ২০০১-এ তার বিরুদ্ধে সন্তোষ শুক্ল নামে এক বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রীকে খুনের অভিযোগ ওঠে। সে খুনের ঘটনাও ছিল রোমহর্ষক। সন্তোষকে তাড়া করেছিল বিকাশ। প্রাণভয়ে সন্তোষ আশ্রয় নেন শিবলি থানায়। কিন্তু তাতেও রেহাই মেলেনি। থানায় ঢুকে সন্তোষকে গুলি করে খুন করে বিকাশ। ওই হামলায় দুই পুলিশ কর্মীরও মৃত্যু হয়। এই হাই প্রোফাইল খুনের পর থেকেই অপরাধ জগতে বিকাশের রমরমা বাড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন হয় যে বিকাশের বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে সাহস পাননি কেউই। বিকাশ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। প্রকাশ্যে থানার মধ্যে খুন করেও প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় সে। জানা গিয়েছে, সেই সময় জনতা দলের বিধায়ক হরিকিষণ শ্রীবাস্তবের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল বিকাশ। হরিকিষণের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিজেপি নেতা সন্তোষ শুক্ল।
আরও পড়ুন: কানপুরে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু আট পুলিশকর্মীর
নৃশংসতায় জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘পাতাললোক’-এর সিরিয়াল কিলার ‘হাতোড়া ত্যাগী’কেও হার মানিয়ে দেয় বিকাশ। জেলে বসেই নিজের আত্মীয়কে খুনের ছক কষেছিল সে। ২০১৮ সালে মাটি জেল থেকে নিজের তুতো ভাই অনুরাগকে খুনের পরিকল্পনা করে বিকাশ। তার হাত থেকে রেহাই পায়নি সাধারণ ব্যবসায়ীও। ২০০৪ সালে দীনেশ দুবে নামে এক কেবল টিভি-র ব্যবসায়ীকে খুন করে সে।
২০০২ সালে মায়াবতী মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বহুজন সমাজ পার্টিতে যোগ দেয় বিকাশ। তার নেতৃত্বেই কানপুরের বিলহারম, শিবরাজপুরী, রানিয়ার মতো এলাকা হয়ে উঠেছিল অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল। তৎকালীন শাসকদলেরও প্রয়োজন ছিল এমনই এক বাহুবলীর। জেলে বসেই শিবরাজপুরী এলাকা থেকে পঞ্চায়েত ভোটেও জেতে বিকাশ।
আরও পড়ুন: কেউ কেউ এখনও বিস্তারবাদে বিশ্বাসী, নাম না করে চিনকে বার্তা প্রধানমন্ত্রীর
কানপুরের সেই বিকরু গ্রামে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিকাশ আর তার দলবলের হাতে এ বার খুন হতে হয়েছে এক ডেপুটি পুলিশ সুপার, তিন সাব ইনস্পেক্টর, চার কনস্টেবল-সহ মোট আট জন পুলিশ কর্মীকে। চার জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই দিন তিন দিক থেকে পুলিশকে ঘিরে ধরে গুলি চালায় বিকাশ আর তার গ্যাং-এর সদস্যরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy