গ্যাংস্টার বিকাশের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল কানপুর জেলা প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত।
দুষ্কৃতীদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর পার হয়ে গিয়েছে ৩৬ ঘণ্টারও বেশি। এখনও ধরা পড়েনি এক ডেপুটি পুলিশ সুপার-সহ আট পুলিশকর্মী খুনের মূল পাণ্ডা বিকাশ দুবেকে। শনিবার উত্তরপ্রদেশের ওই গ্যাংস্টার বিকাশের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল কানপুর জেলা প্রশাসন।
এ দিন বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে বিকাশের বাড়িতে যান কানপুর জেলা আধিকারিকেরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে নিয়ে বিকাশের বাড়ি ঘিরে রয়েছে সশস্ত্র পুলিশের একটি দল। ওই কড়া নিরাপত্তার আবহে বিকাশের বাড়ি ভাঙছে হলদে রঙের একটি বুলডোজার। বাড়ির দেওয়াল ভাঙা পড়েছে। ভেঙেছে বিকাশের ফাঁকা ঘরের ছাদও। সেই সঙ্গে ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে তার একাধিক গাড়ি। সব ক’টিই সাদা রঙের।
বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলেও বিকাশকে এখন পর্যন্ত পাকড়াও করতে পারেনি উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। বৃহস্পতিবার কানপুর থেকে মাত্র দেড়শো কিলোমিটার দূরে বিকরু গ্রামে তাকে ধরতে গেলে পুলিশকর্মীদের উপর তিন দিক থেকে আক্রমণ করে বিকাশ ও তার দলবল। দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত হন এক ডেপুটি পুলিশ সুপার, তিন সাব-ইনস্পেক্টর, চার কনস্টেবল-সহ মোট আট জন পুলিশকর্মী। ওই ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ বিকাশ। ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে চৌবেপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককে। ওই থানা এলাকার মধ্যেই পড়ে বিকরু গ্রাম। গোটা ঘটনায় চৌবেপুর থানার ওই আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইজি (কানপুর রেঞ্জ) মোহিত আগরওয়াল বলেন, “এনকাউন্টারের সময় ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন ওই আধিকারিক। তিনি দুষ্কৃতীদের মুখোমুখি হলে পরিস্থিতি হয়তো অন্য রকম হতে পারত।”
আরও পড়ুন: ফের তুতিকোরিন, আবারও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, কাঠগড়ায় সেই পুলিশকর্মীরা
তবে শুধুমাত্র এক জন আধিকারিককে শাস্তির মুখে ঠেলে দিয়ে গোটা কাণ্ড থেকেই কি নজর ঘোরাতে চাইছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ? উঠছে সে প্রশ্নও। ৬০টিরও বেশি অপরাধমূলক মামলা ঝুলছে যার বিরুদ্ধে, সেই বিকাশ দুবেকে এখনও কেন পুলিশ ধরতে পারল না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদিও বিকাশকে ধরতে চেষ্টার কসুর করছে না পুলিশ, এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের। ইতিমধ্যেই তার খোঁজ দিতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছে পুলিশ। বিকাশের খবরপ্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখার আশ্বাসও দিলেও তাতে অবশ্য লাভ হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, বিকাশের লোকেশন জানতে পাঁচশোরও বেশি মোবাইল ফোন স্ক্যান করেছে তারা। তা সত্ত্বেও বিকাশকে ধরা যাচ্ছে না।
অপরাধ জগতের পাশাপাশি রাজনৈতিক আঙিনাতেও ওঠাবসা রয়েছে বিকাশ দুবের। ছবি: সংগৃহীত।
গত শতকের নয়ের দশকে একটি খুনের ঘটনায় প্রথম শোনা যায় বিকাশের নাম। অপরাধ জগতে প্রবেশের সেই শুরু। এর পর বছরের পর বছর তার অপরাধের সংখ্যা বাড়তেই থেকেছে। খুন, অপহরণ থেকে শুরু করে টাকার দাবিতে বন্দি করা বা দাঙ্গা বাধানো— সবেতেই জড়িয়েছে বিকাশের নাম। ২০০১ সালে থানায় ঢুকে সন্তোষ শুক্ল নামে এক বিজেপি নেতাকে খুনও করে সে। পরের বছর আত্মসমর্পণ করলেও বেকসুর ছাড়া পেয়ে যায় বিকাশ।
আরও পড়ুন: কোন ধাপে রয়েছে করোনা টিকা, কী জানাচ্ছে ভারত বায়োটেক?
অপরাধ জগতের পাশাপাশি রাজনৈতিক আঙিনাতেও বিকাশের ওঠাবসা রয়েছে। ২০০২ সালে বহুজন সমাজ পার্টিতে যোগ দেয় বিকাশ। এর পর এক বার পঞ্চায়েত ভোটেও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখা যায় তাকে। সে ভোটে জিতেও যায়। স্থানীয়দের দাবি, বিকাশের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেন না। এক সময় নাকি পোষা গুন্ডাবাহিনীও ছিল তার।
এ হেন কুখ্যাত বিকাশের মা সরলা দেবী জানিয়েছেন, ছেলে পরিবারের লজ্জা। আত্মসমর্পণ না করলে বিকাশকে খুন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। সরলা দেবীর কথায়, “গত চার মাস বিকাশকে দেখিনি। লখনউতে ছোটছেলের সঙ্গে রয়েছি। বিকাশের জন্য খুব সমস্যায় পড়তে হয়। ওর জন্য আমাদের লজ্জা হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy