Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Ayodhya Ram Mandir

মোদীর ক্রিয়াকর্মের পরের ৪২ দিন, অযোধ্যায় ফিরবে করসেবার স্মৃতি, দেশ জুড়ে প্রস্তুতিতে শামিল বাংলাও

এখন মন্দির তৈরির আনন্দ অযোধ্যায়। একই সঙ্গে সেই আনন্দ গোটা দেশের গেরুয়া শিবিরের মধ্যেও। তবে দীর্ঘ আন্দোলনের যে স্মৃতি, তা-ও স্মরণ করাতে চায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তারও প্রস্তুতি চলছে পাশাপাশিই।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:০১
Share: Save:

করসেবা এবং করসেবক। অযোধ্যায় রামমন্দির আন্দোলন পর্বে গোটা দেশে পরিচিত হয়ে উঠেছিল এই দু’টি শব্দ। সেই সময়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিল, নিজের করে (হাত) যাঁরা মন্দির তৈরির সেবা (কাজ) করবেন তাঁরাই ‘করসেবক’। আর সেই কর্মসূচির নাম ‘করসেবা’।

১৯৯০ সালে তখন পরিষদের আন্তর্জাতিক সভাপতি অশোক সিংঘলের নেতৃত্বে হয়েছিল করসেবা আন্দোলন। যে আন্দোলনকে বড় চেহারা দিয়েছিলেন তৎকালীন বিজেপি সভাপতি লালকৃষ্ণ আডবাণী দেশ জুড়ে তাঁর ‘রামরথ যাত্রা’র মধ্য দিয়ে। নিজে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সঙ্গে হাজার করসেবকও গ্রেফতার হয়েছিলেন অযোধ্যা যাওয়ার পথে বা অযোধ্যায়।

সেই করসেবকদের অনেকেই এত দিনে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেছেন। কিন্তু যাঁরা এখনও রয়েছেন, তাঁদের সকলকেই অযোধ্যা নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে পরিষদ। ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে নতুন মন্দিরে রামলালার মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠার পরের ৪২ দিন ধরে চলবে এই কর্মসূচি। ২৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে কর্মসূচি চলবে ৪ মার্চ পর্যন্ত। মার্চের প্রথম সপ্তাহে লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যেতে পারে ভেবেই এই সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছে বলে পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে। যে করসেবকেরা অতীতে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন বা গ্রেফতার বরণ করেছিলেন, তাঁদের সপরিবারে অযোধ্যা নিয়ে গিয়ে নতুন মন্দির দেখানোর দায়িত্ব নিয়েছে পরিষদ। সেই সময়ের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাঁরা আর বেঁচে নেই, তাঁদের উত্তরসূরিদেরও নিয়ে যাওয়া হবে। এ জন্য ৪২ দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অযোধ্যায় পৌঁছনোর জন্য রেল দফতর ৪০০-র মতো বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করবে বলে দাবি করেছে পরিষদ।

দেশের অন্য রাজ্যের পাশাপাশি বাংলার জন্যও সেই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। অযোধ্যা আন্দোলনে যাঁদের মৃত্যু হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কলকাতার বাসিন্দা কোঠারি ভ্রাতৃদ্বয়। এ ছাড়াও পশ্চিম বর্ধমানের অভয় বারনোয়াল, যিনি গুলিতে গুরুতর জখম হয়েছিলেন। এঁদের পরিবারের লোকেদের তো বটেই, সেই সঙ্গে করসেবায় অংশ নিতে গিয়ে যাঁরা সেই সময়ে কারাবরণ করেছেন বা আন্দোলন সংগঠিত করেছেন, সেই সব প্রবীণ ‘কার্যকর্তা’-কেও অযোধ্যা নিয়ে যেতে চায় পরিষদ। বাংলা থেকে প্রথম ট্রেনটি ছাড়ার কথা ৫ ফেব্রুয়ারি। তাতে পাঁচ হাজার ‘করসেবক’ বা তাঁদের পরিবারকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ভাবে দেশের প্রতিটি রাজ্য থেকে এক বা একাধিক দিন স্থির হয়েছে। মূলত প্রবীণেরাই এই সফরে অংশ নেবেন। তাঁদের যাতে ভিড় ঠেলতে না হয়, তার জন্যই আলাদা আলাদা তারিখ। অযোধ্যায় প্রত্যেকের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা পরিষদ করলেও সকলকে নিজের পয়সা দিয়েই টিকিট কাটতে হবে। তবে এক সঙ্গে সকলের টিকিট কাটার ব্যবস্থা করে দেবে পরিষদ। ইতিমধ্যেই তালিকাভুক্তদের আধার কার্ড ও টিকিটের অর্থসংগ্রহের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

এই কর্মসূচিতে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘বাংলায় যাঁরা রামমন্দির আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের লড়াই অনেক বড় ছিল। বামশাসনের বাংলায় শিলাপূজন থেকে করসেবায় অংশ নিয়ে বামপন্থীদের তো বটেই, তাদের পুলিশের অত্যাচারও সহ্য করতে হয়েছিল তাঁদের। তার পরেও যাঁরা আন্দোলনে ছিলেন, সেই হিন্দুবীরদের সম্মান দেখাতেই এই অযোধ্যাযাত্রার পরিকল্পনা।’’ ট্রেন এবং টিকিট কাটা প্রসঙ্গে শচীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘যাঁরা নিজের হাতে সেবা দেওয়ার জন্য করসেবক হয়েছিলেন তাঁরা নিজেদের অর্থেই অযোধ্যায় যাবেন। রামলালার মন্দির দেখবেন। যার স্বপ্ন তাঁরা দেখেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন বছরের পর বছর।’’

প্রসঙ্গত, ‘রামশিলা পূজন’ কর্মসূচিতে দেশের অন্যান্য জায়গার মতো বাংলাতেও ‘শ্রীরাম’ খোদাই করা ইটের পুজো হয়েছিল। সেই ইট অযোধ্যা পৌঁছায়। এর পরে প্রথম ‘করসেবা’ কর্মসূচি হয় ১৯৯০ সালের ২১ অক্টোবর। এর পর সেই বছরেরই ৩০ অক্টোবর বড় সংখ্যায় ‘করসেবক’রা অযোধ্যামুখী হন। যাত্রাপথেই অনেককে গ্রেফতার করে তখনকার মুলায়ম সিংহ যাদব সরকারের অধীন উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তবে পায়ে হেঁটে, সরযূ নদী সাঁতরে অনেকে পৌঁছে যান। সেই সময়েই কলকাতার রাম ও শরদ কোঠারি বিতর্কিত সৌধের উপরে গেরুয়া পতাকা লাগিয়ে দেন। গুলি চালায় পুলিশ। অনেকেই হতাহত হয়েছিলেন। আক্রান্ত হয় পুলিশও। এর পরে ১ এবং ২ নভেম্বর আবার করসেবকেরা বিতর্কিত সৌধের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। ২ তারিখেই কলকাতার ২২ এবং ২০ বছরের দুই ভাই পুলিশের গুলিতে মারা যান। সব শেষে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ‘করসেবা কর্মসূচি’-র দিনই অযোধ্যার সেই বিতর্কিত সৌধ পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়। সেই সময়ের পরিষদের কুশীলবেরাই হাজির হবেন অযোধ্যায়। টানা ৪২ দিন ধরে ফিরে আসবে সেই ‘অস্থির’ সময়ের স্মৃতি।

অন্য বিষয়গুলি:

Ayodhya Ram Mandir Ayodhya Ram Mandir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy