Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
cbi

বর্মা অপসারিত রাফাল ঢাকতে, তোপ রাহুলের, ‘মর্যাদা’ রাখতে হস্তক্ষেপ, সাফাই জেটলির

সিবিআই সঙ্কটের প্রেক্ষিতে মোদী সরকারকে শাঁখের করাতে ফেললেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। দু’দিন আগে তিনি বলেছিলেন, মোদী জমানায় ‘ধ্বংসের মুখে’ পৌঁছে গিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। আর সেই ‘ধ্বংস’ রুখতে কেন্দ্র যে পদক্ষেপ করল, তাকে আক্রমণ করে বুধবার কংগ্রেস সভাপতি বললেন, ‘রাফাল দুর্নীতি’ ঢাকতেই দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হল অলোক বর্মার হাত থেকে।

সিবিআই ঘিরে বাগ্‌যুদ্ধে সামিল সরকার ও বিরোধীরা। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

সিবিআই ঘিরে বাগ্‌যুদ্ধে সামিল সরকার ও বিরোধীরা। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৩৮
Share: Save:

সিবিআই সঙ্কটের প্রেক্ষিতে মোদী সরকারকে শাঁখের করাতে ফেললেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। দু’দিন আগে তিনি বলেছিলেন, মোদী জমানায় ‘ধ্বংসের মুখে’ পৌঁছে গিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। আর সেই ‘ধ্বংস’ রুখতে কেন্দ্র যে পদক্ষেপ করল, তাকে আক্রমণ করে বুধবার কংগ্রেস সভাপতি বললেন, ‘রাফাল দুর্নীতি’ ঢাকতেই দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হল অলোক বর্মার হাত থেকে।

অলোক বর্মা এবং রাকেশ আস্থানা— দুই আইপিএসের ‘যুদ্ধে’ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই) যে রকম টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে, আগে কখনও তেমন সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়নি সংস্থাটাকে। বেনজির সঙ্কটের মোকাবিলা করতে বিরল ভঙ্গিতে পদক্ষেপ করেছে সরকার। মাঝ রাতে দায়িত্ব কেড়ে নিয়েছে অলোক বর্মা এবং রাকেশ আস্থানার হাত থেকে। ওড়িশা ক্যাডারের আইপিএস এম নাগেশ্বর রাওকে অন্তর্বর্তী অধিকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। কেন্দ্রের পদক্ষেপকে এ দিন তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি।

রাহুল গাঁধী বুধবার ছিলেন রাজস্থানে। ঝালাওয়ারে এক নির্বাচনী জনসভা থেকে সিবিআই কাণ্ড নিয়ে তোপ দেগেছেন তিনি। ‘রাফাল দুর্নীতি’র নথিপত্র জড়ো করতে শুরু করেছিলেন অলোক বর্মা, সে সব বন্ধ করতে তথা চাপা দিতেই অলোক বর্মার হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হল সিবিআই-এর শীর্ষপদ— রাহুল গাঁধী জনসভায় দাঁড়িয়ে এমনই বলেছেন বুধবার।

আরও পড়ুন: মধ্যরাতে ‘অভ্যুত্থান’ সিবিআই দফতরে, কী ভাবে কী হল...

অলোক বর্মা এবং রাকেশ আস্থানার মধ্যে শুরু হওয়া গোলমালের দিকে গোড়া থেকেই তীক্ষ্ণ নজর রেখেছিল গোটা দেশের রাজনৈতিক শিবির। সরকার যে প্যাঁচে পড়তে পারে, তার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। তাই রাহুল টুইট করেছিলেন, ‘‘এই প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সিবিআই হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হাতিয়ার। নিজের সঙ্গেই যুদ্ধ করে ধ্বংসের মুখে পৌঁছে গিয়েছে সংস্থাটা।’’

অধিকর্তা অলোক বর্মা এবং বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানা পরস্পরের বিরুদ্ধে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন। গোলমাল ক্রমশ বাড়ছিল। কিন্তু আস্থানার নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) সদস্য তথা সিবিআই-এর ডিএসপি দেবেন্দ্র কুমার গ্রেফতার হতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তীব্র অস্বস্তির মুখে পড়তে হয় সরকারকে। সিবিআই-কে রাজনীতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছে বিজেপি এবং তার জেরে বিজেপির তথা ক্যাবিনেটের অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন সিবিআই-কে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে— তোপ দাগতে শুরু করেন বিরোধীরা।

আরও পড়ুন: যুদ্ধক্ষেত্র সিবিআই: ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হল বর্মা, আস্থানা দু’জনকেই

সরাসরি হস্তক্ষেপ করা ছাড়া উপায়ান্তর ছিল না নরেন্দ্র মোদীর সামনে। মঙ্গলবার রাত ১টা ৪৫ মিনিটে বর্মা-আস্থানাকে ছুটিতে পাঠিয়ে নাগেশ্বরকে দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়। বুধবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন অরুণ জেটলি ও রবিশঙ্কর প্রসাদ। জেটলি বলেন, ‘নিরপেক্ষ তদন্তের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং দেশের প্রধান তদন্তকারী সংস্থায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের সংহতি ও মর্যাদা ধরে রাখতে’ এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল। যত ক্ষণ না তদন্ত শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ ছুটিতেই থাকবেন বর্মা ও আস্থানা, জানান জেটলি।

কিন্তু এক দিকে রাহুল গাঁধী বলেছেন, রাফাল চুক্তির ‘দুর্নীতি’ ঢাকতে সরানো হয়েছে বর্মাকে। অন্য দিকে বর্মা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন এবং তাঁর হাত থেকে দায়িত্ব কেড়ে নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। সিবিআই-কে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়ার যে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট আগেই দিয়েছিল, সরকারের এই হস্তক্ষেপ সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলে বর্মা দাবি করেছেন। সরকারের তরফ থেকে অরুণ জেটলি যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন। সরকারের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি ছিল বলে তিনি দাবি করেছেন। সিবিআই-এর দুই শীর্ষকর্তাকে ছুটিতে পাঠানো ‘একেবারেই অন্তর্বর্তিকালীন পদক্ষেপ’ এবং তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হলেই তাঁদের কাজে ফেরানো হবে বলে জেটলি জানিয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE