Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

হকারদের তৎপরতা, ফিরল হারানো মেয়ে

পুলিশের সাহায্য নিয়ে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছে সরকারি হোমে। এবং ওই কাকুরাই তাকে ফের বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৮
Share: Save:

কে বলেন, রেলস্টেশনে ঠগের আড্ডা! বাজে লোকদেরই বুঝি সেখানে ভিড়! চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ভারতী বাউড়ির অভিজ্ঞতা কিন্তু ভিন্ন। স্টেশনের মানুষগুলিই তাকে একা ঘুরতে দেখে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের সাহায্য নিয়ে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছে সরকারি হোমে। এবং ওই কাকুরাই তাকে ফের বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।

তার বাবা মিলন বাউড়ি অসমের শিলচরে কাঠ চেরাইয়ের কাজ করেন। মাতৃহীন পুত্র-কন্যাকে নিয়ে সেখানেই থাকেন। আসল বাড়ি হাইলাকান্দিতে। গত সোমবার মেয়েকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন মিলনবাবু। বাসের টিকিটের জন্য অনেকক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ভারতী ছিল পাশেই। কিন্তু একবার না-বলে শৌচালয়ে গিয়েছিল সে। আর তাতেই বিপত্তি।

লাইনে এসে দেখে, বাবা নেই। বাবা বলছিলেন, বাসের টিকিট না পেলে ট্রেনে যাবেন। একে-ওকে জিজ্ঞেস করে সে স্টেশনে পৌঁছে যায়। কিন্তু বাবার দেখা মেলেনি।
ও দিকে তখনই একটি ছাড়ছিল। দৌড়ে তাতেই উঠে পড়ে ভারতী। সারাদিন ঠায় বসে থাকে ট্রেনে। পরে সবাই যখন নেমে যায় তখন সে-ও নামে। কিন্তু এ কোন জায়গা! জানতে পারে, আগরতলায় পৌঁছে গিয়েছে সে।

কী করবে বুঝতে না পেরে বসে থাকে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের কোণায়। প্রথম তার দিকে নজর পড়ে স্টেশনে রাত কাটানো এক ভবঘুরে মহিলার। তিনি পাশে ঘুমোতে ডাকেন। যায়নি ভারতী। কোনও মতে রাত কাটায় প্ল্যাটফর্মেই। পর দিন সকালে তাকে ঘিরে ধরে হকার, ভেন্ডার, অটোচালকরা। তাঁরাই খবর দেন পুলিশে। শেষে থানা, চাইল্ডলাইন হয়ে তার ঠাঁই হয় সমাজ কল্যাণ দফতরের হোমে। হকারদের মুখে মুখে খবর পৌঁছে যায় শিলচরের হকারদের কাছেও।

এ দিকে, মেয়েকে কোথাও না পেয়ে মিলনবাবুও যান শিলচর স্টেশনে। সেখানে হকারদের কাছ থেকে ভারতীর খবর পান। পৌঁছন আগরতলায়। স্টেশনের হকাররাই তাঁকে হোমের ঠিকানা দেন। কিন্তু মুশকিল হল, রাতে সেখানে দেখা করা যায় না! ওই হকাররাই মিলনবাবুকে স্টেশনে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করে দেন। বুধবার থানা, চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি হয়ে পৌঁছন ভারতীর কাছে। বাবা-মেয়ে, কারও মুখেই কথা সরছিল না। ভারতী প্রথম বলে ওঠে, ‘‘স্টেশনের কাকাদের জন্যই বেঁচে গিয়েছি।’’

মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মিলনবাবুও বলেন, ভাল মানুষ তো সর্বত্রই রয়েছেন!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE