Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪

সমীক্ষায় এগিয়ে বরুণ! উত্তরপ্রদেশে মুখ খুঁজতে গিয়ে মহা ফেরে বিজেপি

গোপন সমীক্ষার ফল দেখে চক্ষু চড়কগাছ অমিত শাহের। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহের কাছে। অসমের মতো এ রাজ্যেও কাউকে মুখ হিসেবে তুলে ধরা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রবল চাপ রয়েছে। তা বাছাই করতে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে গোপন সমীক্ষা করিয়েছিলেন অমিত শাহ।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ১৮:২২
Share: Save:

গোপন সমীক্ষার ফল দেখে চক্ষু চড়কগাছ অমিত শাহের। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহের কাছে। অসমের মতো এ রাজ্যেও কাউকে মুখ হিসেবে তুলে ধরা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রবল চাপ রয়েছে। তা বাছাই করতে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে গোপন সমীক্ষা করিয়েছিলেন অমিত শাহ। আর তাতে দেখা যাচ্ছে গোটা রাজ্যের সিংহভাগ এলাকায় বাকি সকলকে টেক্কা দিয়ে জনপ্রিয়তার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বরুণ গাঁধী। স্মৃতি ইরানি, যোগী আদিত্যনাথের মতো মুখকে পিছনে ফেলে বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে এখনও বড় আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছেন বরুণ।

বরুণের বদলে অন্য কোনও নাম এলে হয়ত এতটা ভাবতে হত না অমিত শাহকে। আপাতভাবে বরুণ ভাল বক্তা। কংগ্রেসের অনেকে রাহুলকে সামনে এনে উত্তরপ্রদেশের বৈতরণী যখন পার করতে চাইছেন, সেই সময় দুই গাঁধীর লড়াইয়ের চমকের প্রচারও মন্দ নয়। কিন্তু বরুণকে নিয়ে আগে দল যে ভাবে হাত পুড়িয়েছে, সমস্যা সেখানেই। উত্তরপ্রদেশের গত নির্বাচনে বরুণকে যা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা পালন করেননি সঞ্জয়-পুত্র। দলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছিলেন, যতক্ষণ না পাকাপাকিভাবে তাঁকে দলের মুখ করা হচ্ছে ও সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ তিনি সচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন না।

এখানেই শেষ নয়। নানা সময় প্রকাশ্যে তিনি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহকেও বিপাকে ফেলেছেন। এক বার মোদীর এক জনসভায় বেশি লোক হয়নি বলে দলের নেতৃত্বের কোপে পড়েছিলেন। বরুণের মা ও মোদী সরকারের মন্ত্রী মানেকাও একবার বলেছিলেন, বরুণকে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দিলেই সে রাজ্যের হাল ফিরবে। পরে মানেকাকে এমন মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘বরুণের সমস্যা হল, তিনি গাঁধী পরিবারের মতোই আচরণ করেন। দল কী চাইছে, তা পরোয়া না করে বরং স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান। বিজেপির মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ দলে সেটি সম্ভব নয়। এখানে সবাই অনুশাসনে চলে। উত্তরপ্রদেশে গত নির্বাচনে তাঁর জন্য প্রচার কর্মসূচি তৈরি হয়েছিল। হেলিকপ্টারও ভাড়া করা হয়েছিল। কিন্তু কথা দিয়েও শেষমুহূর্তে বেঁকে বসেন তিনি।’’

বিজেপি নেতারা মনে করছেন, পরিস্থিতির এখন যে বদল হয়েছে, এমন নয়। ফলে দলের সমীক্ষার ফলে বরুণ গাঁধীর জনপ্রিয়তা থাকলেও তাঁকে সামনে রেখে নির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত অমিত শাহ নেবেন বলে মনে হয় না। অমিত শাহ সভাপতি হওয়ার পর দলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বরুণকে বাদ দিয়েছিলেন তাঁকে আরও ‘পরিণত’ হওয়ার বার্তা দিতেই। দ্বিতীয়বার সভাপতি হয়ে এখনও অমিত শাহ নিজের টিম গঠন করেননি। কিন্তু বর্তমান টিমেও তাঁর কোনও ঠাঁই নেই। এ যাবৎ যে যে রাজ্যের দায়িত্ব বরুণের কাঁধে দেওয়া হয়েছিল, সেখানেও তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি। রাজ্য নেতৃত্বও খুশি নন তাঁর উপরে।

আরও পড়ুন:

মোদীর রাজ্যে সব বিধানসভা আসনে লড়বে আম আদমি পার্টি

উত্তরপ্রদেশের নানান জায়গায় বরুণকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ করার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই পোস্টার পড়ে গিয়েছে। তা-ও আবার স্মৃতি ইরানির সঙ্গে তুলনা টেনে। সেই পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘স্মৃতি ইরানি হুই বিমার, উত্তরপ্রদেশ কি ইয়ে হি পুকার, বরুণ গাঁধী আব কি বার’। এই পোস্টার প্রচারও ভাল চোখে নিচ্ছেন না দলের নেতারা। মাঝে স্মৃতির নাম যখন মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর মুখ হিসেবে ভেসে উঠেছে, কেন্দ্রের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ্যে তা খণ্ডন করে বলেছেন, ‘‘আমাদের দলে এ ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত হয় না।’’ কিন্তু এই পোস্টার প্রচারের পরেও বরুণের থেকে কোনও মন্তব্য আসেনি।

বিজেপির এক নেতার কথায়, এক সময় প্রমোদ মহাজন বরুণ গাঁধীকে দলে নিয়ে এসেছিলেন কংগ্রেসের রাহুল গাঁধীকে টক্কর দেওয়ার জন্য। কিন্তু দলে এসেই বরুণ বিজেপি নেতৃত্বকে স্পষ্ট করে দেন, তিনি কোনও ভাবেই কংগ্রেসের গাঁধী পরিবারকে আক্রমণ করবেন না। এখনও সনিয়া গাঁধী, রাহুল ও বিশেষ করে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন বরুণ। ফলে এই আস্থার ঘাটতি সাত-তাড়াতাড়ি মিটবে বলে মনে হয় না দলের অনেকের। অসমের ধাঁচে উত্তরপ্রদেশে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার ব্যাপারে অমিত শাহের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘এখনও সেই বিষয়ে কিছু স্থির হয়নি। তবে সব রাজ্যের সমীকরণ আলাদা। অসমে কাউকে মুখ করে যেমন আমরা সাফল্য পেয়েছিল, কাউকে মুখ না করেও অন্য রাজ্যে আমাদের সাফল্য এসেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Uttar Pradesh Survey Of BJP Varun Gandhi Leads
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy