মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভার স্পিকারের কাছে তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন, ‘দয়া করে অধিবেশন চালান। সোমবার থেকে সংবিধান নিয়ে আলোচনা শুরু করা হোক। সেই মঞ্চে সব দল তাঁদের বক্তব্য রাখতে পারবেন। প্রতি দিন অধিবেশন ভন্ডুল হয়ে গেলে সাধারণ মানুষের বিষয় আড়ালেই থেকে যাবে।’
আপাতত স্থির হয়েছে, সোম এবং মঙ্গলবার লোকসভায় সংবিধানের ৭৫ বছর উপলক্ষে আলোচনা হবে। সূদীপের কথায়, “অধিবেশনের এক সপ্তাহ ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে কোনও কাজ ছাড়াই। আশা করছি, সোমবার থেকে সংসদ কাজে ফিরবে। কিন্তু বুধবার থেকে আবার কী হবে তা বলতে পারি না।”
তবে সংসদ ভন্ডুল করার যে অভিযোগ তুলছে তৃণমূল, তা বিজেপি-র বিরুদ্ধে নয়, বরং তাদের আঙুল ‘ইন্ডিয়া’-সঙ্গী কংগ্রেসের দিকেই। আদানি কাণ্ড নিয়ে অনড় কংগ্রেস যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবিতে রোজই সংসদের দুই কক্ষে আবেদন জানাচ্ছে। এটাও ঘটনা যে লোকসভার স্পিকার বা রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন খুব বেশি সময় না নিয়েই অধিবেশন গোটা দিনের জন্য মুলতুবি করে দিচ্ছেন সোমবার থেকে। তৃণমূলের তরফে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে, একটিমাত্র বিষয় নিয়ে সংসদ বানচাল করার ঘোর বিরোধিতা করছে তারা। কক্ষ সমন্বয় নিয়ে আলোচনার জন্য কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের ঘরেও যাননি তৃণমূল সংসদীয় নেতারা।
অন্য দিকে, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বুঝিয়ে দেন, সংসদ চলাকালীন খড়্গের ডাকা ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে যাওয়া-না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে সংসদীয় কৌশল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কমিটি। ঝাড়খণ্ড থেকে কলকাতায় ফিরে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘লোকসভায় যা অবস্থান নেওয়ার, সেটা আমাদের কারও একার বিষয় নয়। এই বিষয়ে অবস্থান নেবেন তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় দলের চেয়ারম্যান, আমি। লোকসভায় আমাদের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভায় আমাদের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, উপ-নেতা সাগরিকা ঘোষ এবং মুখ্য সচেতক নাদিমুল হক ... তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁরা আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমার মতামত জানাব।’’
আজ সুদীপের কথায়, “এ বারের অধিবেশনে যতটুকু সুযোগ পাব, আমাদের লক্ষ্য থাকবে বাংলার বঞ্চনা নিয়ে সরব হওয়ার। ছ’টি বিধানসভা উপনির্বাচনে জিতে আসার পর আমাদের দলের আত্মবিশ্বাস যেমন তুঙ্গে, তেমন মানুষেরও আমাদের উপর প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছে। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই বাংলায় ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রে বকেয়ার দাবি, কেন্দ্রীয় আবাস যোজনার বরাদ্দ টাকা, রাজ্যের কর্মসংস্থান, অপরাজিতা বিলে দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার মতো বিষয়গুলি যখন যতটুকু সুযোগ পাব, অধিবেশনে তুলব। পাশাপাশি বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলিতেও জোর দেওয়া হবে।”
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের বক্তব্য, “অধিবেশন যে চলছে না তার দায় কংগ্রেসের নয়। সরকার কোনও ভাবেই গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ তুলতে দিচ্ছে না। আলোচনা তো পরে, আগে মোদানি কাণ্ড অধিবেশন কক্ষে তোলার আগেই মুলতুবি করে দেওয়া হচ্ছে।” আগামিকাল কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক। সেখানে এই নিয়ে আলোচনা হবে। আদানি ছাড়া অন্য বিষয়গুলি তুলতে চাইছে কংগ্রেসও। কংগ্রেসের সংসদীয় স্ট্র্যাটেজি গ্রুপের বৈঠকেও ঠিক হয়েছে, অন্য বিষয় তোলা হবে। জয়রামের কথায়, “আমরা যে শুধু আদানি নিয়ে বসে আছি, এমন নয়।”
অন্য দিকে, সুদীপের বক্তব্য, “আমরাও চাই, আদানি কাণ্ড নিয়ে আলোচনা হোক। কিন্তু বিষয় উপদেষ্টা কমিটিতে এই প্রসঙ্গ তুলে, নির্দিষ্ট সময় নিয়ে আলোচনা করা হোক, আমরা সবাই অংশ নেব।” তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, সংসদে আলোচনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত সমস্ত বিষয়ে কথা বলার প্রশ্নে তৃণমূলের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে অখিলেশ সিংহ যাদবের এসপি। তাদের সঙ্গে তৃণমূলের চমৎকার কক্ষ সমন্বয় চলছে বলেই দাবি করেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। ঘটনা হল, উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ঘিরে লোকসভায় আজ এসপি-র স্লোগানে গলা মিলিয়েছেন তৃণমূলের লোকসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ডেরেকের দাবি, শুধু এসপি নয়, এ বিষয়ে শরদ পওয়ারের এনসিপি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনাও তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy