ধৃত মহম্মদ রশিদ। ছবি: টুইটার থেকে
পাকিস্তানে বেড়াতে গিয়ে মামাতো বোনের প্রেমে পড়েছিলেন। সেই প্রেমের টানেই পড়ে গেলেন আইএসআই চক্রে। বারাণসী থেকে রবিবার আইএসআই এজেন্ট সন্দেহে মহম্মদ রশিদ (২৩) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছেন উত্তরপ্রদেশ সন্ত্রাস দমন শাখা (এটিএস)-এর গোয়েন্দারা। ধৃত মহম্মদ রশিদ ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাকিস্তানের আইএসআই এজেন্টদের পাঠিয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। এ ছাড়াও সেনা ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠিয়েছেন বলেও দাবি গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দারা এ বিষয়ে প্রথম খবর পান ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। বিভিন্ন সূত্রে সেনা গোয়েন্দারা জানতে পারেন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভারত থেকে পাকিস্তানে আইএসআই এজেন্টদের তথ্য-ছবি পাঠাচ্ছেন বারাণসীর কোনও ব্যক্তি। তার পর থেকেই এই চক্রের উৎসে পৌঁছতে শুরু হয় নজরদারি ও তদন্ত। শেষ পর্যন্ত সেনা এটিএস-এর গোয়েন্দারা রশিদকে চিহ্নিত করে জানতে পারেন ২০১৯-এর মার্চ থেকে পাকিস্তানে তথ্য পাচার করছেন রশিদ।
পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সুত্রে খবর, বাবা-মার বিচ্ছেদের পর বারাণসীর চান্দৌলিতে দাদুর বাড়িতে থাকছিলেন রশিদ। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। রুজি-রুটি চালাতে কখনও দর্জির কাজ, কখনও বা ওষুধের দোকানে কাজ করেছেন। শেষ পর্যন্ত থিতু হন সাইনবোর্ড লাগানোর কাজে।
কিন্তু কী ভাবে আইএসআই এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ হল। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, পাকিস্তানের করাচিতে রশিদের আত্মীয় রয়েছে। তাঁদেরই কারও বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রথমে ২০১৭ সালে করাচিতে যান রশিদ। সেখানকার ওরাঙ্গিতে তাঁর থাকার সময়ই তাঁর এক মামাতো বোনের সঙ্গে প্রেমে পড়েন। সেই প্রেমের টানেই পরের বছর ফের করাচিতে গিয়ে বেশ কিছু দিন ছিলেন। তখনই এক আত্মীয়র মাধ্যমে যোগাযোগ হয় আইএসআই এজেন্টদের সঙ্গে। ওই এজেন্টরা রশিদকে তাঁর ওই বোনের সঙ্গে বিয়ে এবং টাকার প্রতিশ্রুতি দেন। তার পরেই সেই টোপে রাজি হয়ে যান রশিদও।
আরও পড়ুন: সিএএ: চড়, ঘুষি, চুলোচুলি, বিজেপি বিক্ষোভকারী-জেলাশাসক সঙ্ঘর্ষে ধুন্ধুমার মধ্যপ্রদেশে
গোয়েন্দাদের সূত্রে খবর, আইএসআই এজেন্টরা রশিদকে ভারত থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ছবি পাঠাতে বলেছিল। সেই মতো কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, দশাশ্বমেধ ঘাট, প্রয়াগরাজে অর্ধকুম্ভ মেলা, জ্ঞানবাপী মসজিদ, সঙ্কটমোচন মন্দির, ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশন, গোরখপুর রেল স্টেশন, মহারাষ্ট্রের নাগপুর রেলস্টেশন, আগ্রা দুর্গ, নৈনি সেতু, বায়ু সেনার নিয়োগের ক্যাম্প, চান্দৌলি ও অমেঠীর সিআরপিএফ ক্যাম্প, সোনভদ্রের রেণুকুট তাপবিদ্যু কেন্দ্র, দিল্লির ইন্ডিয়া গেট, রাজস্থানের অজমেঢ় শরীফের মতো ধর্মীয় ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছিলেন রশিদ। এ ছাড়া সম্প্রতি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএএ-এনআরসির প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ছবি এবং ভিডিয়ো আইএসআই এজেন্টদের রশিদ পাঠিয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
আরও পডু়ন: দখলে থাকা সমস্ত রাজ্যেই সিএএ-বিরোধী প্রস্তাব, জানাল কংগ্রেস
এই সব কাজের জন্য গত বছরের মে মাসে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার রঙের একটি টি শার্ট পেয়েছিলেন রশিদ। এর পর জুলাইয়ে পান নগদ ৫০০০ টাকা। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে, মাসে এক লক্ষ টাকা এবং বাড়িভাড়ার জন্য আরও ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আইএসআই চক্রীরা। সেই টাকা রশিদ পেয়েছিলেন কি না তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। এ ছাড়া ওই সব ছবি-ভিডিয়োর মাধ্যমে আইএসআই-এর কী পরিকল্পনা ছিল এবং সে বিষয়ে রশিদ জানত কি না, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy