নোটের আকালের এই বাজারে তাঁর জন্য প্রশ্ন তোলা ছিল অনেক। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম বার কলকাতায় এসে সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়েই যাচ্ছেন উর্জিত পটেল।
আজ, বৃহস্পতিবার এই শহরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের বৈঠক। চালু রেওয়াজ হল, সেখানে ছবির জন্য যান চিত্র সাংবাদিকরা। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন গভর্নর। কিন্তু বুধবার শীর্ষ ব্যাঙ্কের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ বার সেখানে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দেখা করবেন না পটেল। তোলা যাবে না ছবিও। অন্তত স্মরণকালের মধ্যে যা কখনও ঘটেনি।
নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূল। খোদ পটেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন অবশ্য তাঁর সঙ্গে দেখা করতে নবান্নে যাবেন উর্জিত। সেখানে সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়ালে আলাদা কথা। নইলে এ যাত্রা তাঁদের সঙ্গে কথা হবে না। অথচ পূর্বসূরি রঘুরাম রাজন যখন শেষ বার কলকাতায় এসেছিলেন, তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। পর্ষদের আলোচ্য বিষয়ের বাইরেও কথা বলেছিলেন ভুয়ো অর্থ লগ্নি সংস্থা নিয়ে।
সেই প্রথা ভেঙে পটেলের সংবাদমাধ্যম এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অবশ্য দাবি, এক-এক জন গভর্নরের কাজের পদ্ধতি একেক রকম। এমনিতেই পটেল সাংবাদিক বৈঠক করতে তেমন আগ্রহী থাকেন না। কিছু বলার থাকলে, প্রেস বিজ্ঞপ্তি বা শীর্ষ ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইটে তা জানিয়ে দিতেই তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ।
সংবাদমাধ্যমের ছোঁয়াচ এড়ানো নিয়ে পটেলের একবগ্গা মনোভাব সম্পর্কে ইতিমধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে যথেষ্ট। অনেকে বলছেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু নোট বাতিল এবং তার জেরে নিত্যকার হয়রানি নিয়ে অজস্র প্রশ্ন জমে রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। সকলে জানতে চান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আর কত দিন? বাজারে যথেষ্ট সংখ্যায় নোট আসবে কবে? তার উপর ব্যাঙ্ককর্মীদের একাংশের যোগসাজশে যে ভাবে নতুন নোট কালো টাকা সাদা করতে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা নিয়েও ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরই এক অফিসার এই অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুললে, সকলকে কিছুটা আশ্বস্ত করার সুযোগ ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, পটেলের মুখ খোলা এই সমস্ত বিষয়ে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কিছুটা মজবুত করতে পারত।
পটেলের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ বি কে দত্ত বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর তাঁর কাছে আছে বলে মনে হয় না।’’ ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, ‘‘এই সফরে হয়তো তাঁর হাতে সময় কম।’’ কেউ আবার বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি জটিল। তার জন্য বাড়তি সাবধানতা থেকেই এই সিদ্ধান্ত।’’
হালে মুম্বইয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাংবাদিক বৈঠকে ‘ইকনমিস্ট’ ও ‘বিবিসি’-র সাংবাদিককে ঢুকতে না দেওয়া নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। প্রশ্ন উঠেছে, শীর্ষ ব্যাঙ্কের কড়া সমালোচনা তার কারণ কি না। এ দিন সাংবাদিকদের এড়িয়ে বিতর্কের আগুনে ফের ঘি ঢাললেন পটেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy