গোরক্ষপুরের শিশুমৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এক নতুন মোড় নিল। আজ ইলাহাবাদে উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখায় আমজনতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও সামিল হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ইস্তফা চেয়ে টোম্যাটো ও ডিম ছুড়েছে। বিজেপি সূত্রের মতে, বিক্ষোভে সমাজবাদী পার্টির ছাত্র সংগঠনের সদস্যেরা ছিল। কিন্তু এতে বিজেপিরও একাংশের মদত আছে। সিদ্ধার্থ লখনউতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের প্রতিনিধি বলে পরিচিত। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর দৌহিত্র হলেও সিদ্ধার্থ রাজনীতিতে বেশি সক্রিয় ছিলেন কলকাতায়। এখন অবশ্য তিনি আর কলকাতার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা নন।
বিজেপি সূত্রের মতে, সিদ্ধার্থ গত কাল সাংবাদিক বৈঠকে গত কয়েক বছরে অগস্ট মাসে গোরক্ষপুরে শিশুমৃত্যুর খতিয়ান দেওয়ায় ক্ষোভ বেড়েছে। দলেরই একাংশের দাবি, গোরক্ষপুরের পরিস্থিতির জন্য অখিলেশ যাদব জমানাকে দায়ী করতে গিয়ে সিদ্ধার্থ বিজেপির মুখ আরও পুড়িয়েছেন। কারণ, সেই সময়ের শিশুমৃত্যু হয়ে থাকলেও তা দিয়ে যোগী জমানার ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া অক্সিজেনের অভাবের জন্য শিশুমৃত্যু হয়নি বলে সরাসরি দাবি করেছিলেন সিদ্ধার্থ। কিন্তু জেলাশাসকের রিপোর্টে অক্সিজেনের অভাবের কথা রয়েছে।
বস্তুত গোরক্ষপুরের ঘটনা নিয়ে এখন মোদী-অমিত শাহের সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথের সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি চলছে বলে মনে করছেন শীর্ষ বহু নেতাই। ১৫ অগস্ট বক্তৃতা দেওয়ার আগে উত্তরপ্রদেশের এ হেন ঘটনায় ক্ষুব্ধ মোদী। তিনি গতকালই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সকলকেই গোরক্ষপুর যাওয়ার নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চিকিৎসকদের একটি টিম আজ দিল্লি থেকে পাঠিয়ে গোরক্ষপুরে বহাল করেন।
এ দিকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী ও যোগী ঘনিষ্ঠ ফুগন কুলিস্তে সিংহ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, গোরক্ষপুরের ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্র আছে। এই বিবৃতিতে জল আরও ঘোলা হয়েছে। বিজেপির দিল্লির মুখপাত্রদের মতে, এত শিশুর মৃত্যুর পরে আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করা নয়। তবে মোদীর ঘনিষ্ঠ শিবিরের ধারণা, যোগী আদিত্যনাথ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। এই ঘটনায় সেই স্বপ্ন বিলক্ষণ ধাক্কা খেয়েছে। এ জন্য যোগী আজ সংবাদমাধ্যমকেও এক হাত নিয়েছেন।
আজ সাংবাদিক বৈঠকে যোগী প্রথমেই জানান, ‘আদরণীয়’ প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনায় কতটা উদ্বিগ্ন। গতকাল মোদীর ফোন থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পাঠানো পর্যন্ত সব তথ্যই জানান তিনি। আবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা তাঁর পাশে বসেও বার বার প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। নড্ডা থাকলেও আজ সাংবাদিক বৈঠকে সিদ্ধার্থকে দেখা যায়নি। কেন্দ্র-রাজ্য সখ্য প্রদর্শনের জন্য যোগীর গাড়িতে চেপে গোরক্ষপুরের হাসপাতালে যান নড্ডা।
তবে নিজের ক্ষেত্র গোরক্ষপুরে এ হেন ঘটনায় যে মুখ্যমন্ত্রী চাপের মুখে পড়ে গিয়েছেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি জানাতে ভোলেননি, যে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই হাসপাতালে আসা তাঁর চতুর্থ সফর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy