Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

গাড়ি লক্ষ্য করে বাঁশ-পাথর, যাব কোন রাস্তায়

আজ ছিল বিয়ের তারিখ। দু’টো নিমন্ত্রণ ছিল। আমাদের অফিস শান্ত এলাকা উলুবাড়িতে। সকালে ভেবেছিলাম, বড় রাস্তাগুলো বন্ধ হলেও গলি দিয়ে যাওয়া যাবেই। কিন্তু রাজ্যসভায় আলোচনা যত এগিয়েছে, ততই উত্তপ্ত হয়েছে পরিস্থিতি।

উত্তাল গুয়াহাটি। ছবি: পিটিআই।

উত্তাল গুয়াহাটি। ছবি: পিটিআই।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৭
Share: Save:

অসম আন্দোলন দেখিনি। কিন্তু গুয়াহাটির রাস্তার এমন চেহারা দেখেছিলাম ২০০৮ সালের ৩০ অক্টোবর ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পরে। জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে, আতঙ্কে অগ্নিগর্ভ হয়েছিল গুয়াহাটির রাস্তাঘাট। কিন্তু নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে আজ যে চেহারা নিল শহর, তা এক দশকে নজিরবিহীন বলে জানাচ্ছেন এখানকার শান্তিকামী বাসিন্দারাই। তাঁরা এ-ও বলছেন, ছাত্র নেতা, কৃষক নেতারা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। অথচ আজ শহরের অবস্থা দেখিয়ে দিল, নেতৃত্বহীন আন্দোলন লাগামছাড়া হলে কী হতে পারে!

আজ ছিল বিয়ের তারিখ। দু’টো নিমন্ত্রণ ছিল। আমাদের অফিস শান্ত এলাকা উলুবাড়িতে। সকালে ভেবেছিলাম, বড় রাস্তাগুলো বন্ধ হলেও গলি দিয়ে যাওয়া যাবেই। কিন্তু রাজ্যসভায় আলোচনা যত এগিয়েছে, ততই উত্তপ্ত হয়েছে পরিস্থিতি। বিক্ষোভের পুরোভাগে ছাত্রছাত্রীরা। তাই পুলিশ কড়া হতে পারছিল না। বিভিন্ন স্থানে পরিচয়পত্র দেখে, নাম-পদবি যাচাই করে হেনস্থা চলছিল।

এক সহকর্মীর সঙ্গে গাড়িতে বেরিয়েছিলাম অবস্থা দেখতে। দেখলাম, আন্দোলনকারী যুবকেরা হাতের কাছে যা পাচ্ছে রাস্তায় টেনে ফেলছে, ভাঙছে। উলুবাড়ির রাস্তায় প্লাস্টিক ডিভাইডারগুলো টেনে এনে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হল হঠাৎ। জ্বলে উঠল আগুন। রিপোর্টার বলে লাভ হল না। গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য দিক দিয়ে বেরোনোর চেষ্টা হল। ততক্ষণে সেই রাস্তায় জড়ো হয়েছে প্রতিবাদীর দল। ফের জ্বলল আগুন। গাড়ি লক্ষ্য করে উড়ে আসতে লাগল বাঁশ, পাথর। আমাদের গাড়ির সামনেই দুটো গাড়ি ভাঙা হল। কোথাও নজরে পড়ল না পুলিশ। কোনও মতে গাড়ি ঘুরিয়ে অফিসে ফিরলাম।

তত ক্ষণে শুনছি, গুলি চলছে উলুবাড়ির অন্য দিকে। হেঁটে রওনা হলাম। দেখলাম, এক দল যুবক বাঁশ দিয়ে রাস্তা আটকে ভাঙচুর করছে। আশপাশের বাড়ির জানলা লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হচ্ছে। বাঁশের বাড়িতে ভাঙা হচ্ছে সব গ্লো-সাইন। নীরব দর্শক পুলিশের সামনেই দু’টি স্কুটার থামানো হল। কোনও যুক্তি না শুনে শুরু হল হেনস্থা। বাঁশের বাড়ি। পালাল তারা। পিছন থেকে উড়ে আসা বাঁশ কপালজোরে পিছনে বসা আরোহীর মাথায় লাগল না। মোবাইলে ভিডিয়ো তুলছিলাম। দূর থেকে দেখে তেড়ে এল কয়েকজন। সতর্ক করে দিল, ফের ছবি তুললে ভেঙে দেবে ফোন।

তত ক্ষণে বন্ধ হয়েছে মোবাইলের ইন্টারনেট। যাঁর বিয়ে, তাঁকে ফোন করে জানলাম, সাজানো প্যান্ডেল খাঁ খাঁ করছে। অন্য বিয়েবাড়িতে আতঙ্ক আরও বেশি। কারণ, পাত্র ও বরযাত্রীর গাড়িই আসতে পারছে না।

মাঝেমধ্যেই বিক্ষিপ্ত মিছিল আসছে। স্লোগান চলছে। ইন্টারনেট বন্ধ হলেও ফোনে গুজব আসা বন্ধ হচ্ছে না। অনেক বন্ধু ফোন করে গুলি চলার খবর শোনাচ্ছে। সেনা ও পুলিশকর্তাদের ফোন করে দেখছি সে সব খবর অতিরঞ্জিত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy