(বাঁ দিকে) প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তিনি রেল দুর্ঘটনা নিয়ে সংসদে কী বলেছিলেন? পরিসংখ্যান তুলে ধরে কটাক্ষ করলেন বর্তমান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে যখন তাঁর মন্ত্রক সমালোচিত হচ্ছে, তখন সংসদে বিরোধীদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করতে দেখা গেল রেলমন্ত্রীকে। সেই প্রসঙ্গেই তাঁর বক্তব্যে উঠে এল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কথাও। মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ট্রেন দুর্ঘটনার সংখ্যা কতটা কমেছিল, তার পরিসংখ্যান উল্লেখ করেন অশ্বিনী। সেই সঙ্গে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলিকেও একহাত নেন।
বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও লোকসভার অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী। বুধবার তাঁর বক্তব্যে ট্রেন দুর্ঘটনার প্রসঙ্গই ওঠেনি। দেশে বুলেট ট্রেনের প্রযুক্তি নিয়ে সংসদে আলোচনা করেছিলেন অশ্বিনী। যা নিয়ে নতুন করে আসরে নামেন বিরোধীরা। এর পর বৃহস্পতিবার সংসদে ট্রেন দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অভিযোগের জবাব দিয়েছেন তিনি। মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ট্রেন দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে অশ্বিনী বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তিনি এই সংসদে দাঁড়িয়েই বলতেন, দেশে ট্রেন দুর্ঘটনা ০.২৪ শতাংশ থেকে কমে ০.১৯ শতাংশ হয়েছে। তখন এখানে বাকিরা হাততালি দিতেন। আর এখন, যখন দেশের ট্রেন দুর্ঘটনার পরিমাণ ০.১৯ থেকে কমে ০.০৩ শতাংশ হয়েছে, তখন তাঁরা উল্টে আমাকে দোষারোপ করছেন! এ ভাবে কি দেশ চলবে?’’
সমাজমাধ্যমে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির সক্রিয়তাকে কটাক্ষ করে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘‘কংগ্রেস তার দলবল নিয়ে সমাজমাধ্যমে মিথ্যা দাবি করছে। এই দেশে প্রতি দিন দু’কোটি মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন। তাঁদের সকলের মনে কি বিরোধীরা এ ভাবে ভয় ঢুকিয়ে দিতে চাইছে?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যাঁরা এখানে বেশি চিৎকার করছেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করা উচিত, ৫৮ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পরেও কেন তাঁরা এক কিলোমিটারেও ‘স্বয়ংক্রিয় রেলসুরক্ষা’ (এটিপি) চালু করতে পারেননি?’’
বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে রেলমন্ত্রী সমাজমাধ্যমে ‘রিল’ বানানোর প্রসঙ্গ তোলেন। বিরোধী সাংসদদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনাদের মতো যাঁরা মানুষকে দেখানোর জন্য রিল বানান, আমরা সেই দলে পড়ি না। আমরা কঠোর পরিশ্রম করি।’’ যাত্রিবাহী ট্রেনের চালকেরা (লোকো পাইলট) অত্যাধিক কাজের চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা খারিজ করে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘‘লোকো পাইলটদের গড় কাজ এবং বিশ্রামের সময়গুলি ২০০৫ সালে প্রণীত বিধি দ্বারা নির্ধারিত হয়। ২০১৬ সালে, কয়েকটি বিধি সংশোধন করে এবং লোকো পাইলটদের আরও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। যাঁরা রিল তৈরি করে সহানুভূতি দেখান, তাঁদের এই তথ্য জানা উচিত।’’
উল্লেখ্য, গত বছর ওড়িশায় চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার পর গত দেড় মাসে পর পর তিনটি রেল দুর্ঘটনার খবর এসেছে। মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। জুলাই মাসে নিউ জলপাইগুড়ির কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তার পর উত্তরপ্রদেশে কিছু দিন আগে লাইনচ্যুত হয় ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস। তার মাঝেই আবার ঝাড়খণ্ডে হাওড়া-মুম্বই এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে দু’জনের মৃত্যু হয়। পর পর দুর্ঘটনা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ভারতীয় রেলের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে। যাত্রীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই বৃহস্পতিবার প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতাকে কটাক্ষ করেন অশ্বিনী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy