(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্মলা সীতারমন (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর মোদী সরকারের প্রথম বাজেট। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বোঝাতে চাইলেন বটে যে কেন্দ্র ‘পুবে তাকাও নীতি’ নিয়েছে, তবে বাজেটে তা যেন ‘বিহারে তাকাও নীতি’ হয়ে থেকে গেল। বাজেট প্রস্তাব পাঠের সময় নির্মলা শোনালেন ‘পূর্বোদয় পরিকল্পনার’ কথা। জানালেন বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করবে ‘পূর্বোদয় পরিকল্পনা’। আর এক বার রেলের কথা বলতে গিয়ে উঠে এল অমৃতসর-কলকাতা বাণিজ্যিক করিডরের কথা। সেটা বলার সময়েও বিহারের গয়া কী ভাবে উপকৃত হবে, সে কথাই বেশি করে বললেন অর্থমন্ত্রী। অর্থাৎ, এই উদ্যোগের জন্যও বিহারের কথাই বেশি করে ভাবা হয়েছে। সর্বসাকুল্যে এই দু’বার উঠে এল এ রাজ্যের নাম। ব্যস, শুধু ওই নামটুকুই। এ ছাড়া আর কিছুই জুটল না বাংলার ভাগ্যে।
এ বারের বাজেটে যে বিহার ও অন্ধ্রের বড় প্রাপ্তিযোগ থাকছে, এমন একটি সম্ভাবনা আগেই তৈরি হয়েছিল। এক দশক পর কেন্দ্রে বিজেপির একার ‘রাজত্ব’ থেমেছে। এখন কেন্দ্রে জোটনির্ভর সরকার। শরিকের কাঁধে ভর দিয়ে চলা বিজেপির বর্তমানে সরকার টিকিয়ে রাখতে অবশ্যই দরকার নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপিকে। দুই ‘বন্ধুর’ মন জুগিয়ে চলতেই কি ঢালাও বরাদ্দ এই দুই রাজ্যের জন্য? এমন প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে। অন্ধ্রপ্রদেশের নতুন রাজধানী অমরাবতীর পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। বিহারের জন্য তো কেন্দ্র আরও দরাজ। নতুন বিমানবন্দর, নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, মেডিক্যাল কলেজ থেকে শুরু করে আরও প্রচুর পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বিহারকে বরাদ্দ করেছে নির্মলার বাজেট। ২৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করে পটনা-পূর্ণিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, বক্সার-ভাগলপুর মহাসড়ক, বোধগয়া-রাজগীর-বৈশালী-দ্বারভাঙা সড়ক উন্নয়নের আশ্বাস মিলেছে বাজেটে। তৈরি করা হবে গঙ্গার উপর দুই লেনের সেতুও।
পড়শি রাজ্য যখন এত কিছু পাচ্ছে, তখন বাংলার জন্য বিশেষ কিছুই দেখা গেল না নির্মলার বাজেটে। পূর্বোদয় পরিকল্পনার কথা বলার সময় এক বার শোনা গেল পশ্চিমবঙ্গের নাম। আর এক বার গয়ার উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে অমৃতসর-কলকাতা বাণিজ্যিক করিডরের উল্লেখ। গোটা বাজেটে আর কিছুই শোনা গেল না বাংলার জন্য। কিছু দিন আগে নাগাড়ে বৃষ্টিতে সিকিমে যে বিপর্যয় দেখা গিয়েছিল, তার প্রভাব পড়েছিল বাংলাতেও। উত্তরের জেলাগুলিতে প্রচুর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এ বারের বাজেটে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে সিকিমের জন্য বরাদ্দের উল্লেখ রয়েছে। এমনকি বিহার, অসম, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের জন্যও আর্থিক সহায়তার ঘোষণা রয়েছে বাজেটে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বন্যাকবলিত উত্তরের জেলাগুলির জন্য কোনও সাহায্যের আভাস পেল না বাংলা।
বাজেটে বাংলার প্রতি এই ‘শূন্যতা’ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ইতিমধ্যেই দুষতে শুরু করেছে রাজ্যের শাসক শিবির। তৃণমূল মুখপাত্র সাকেত গোখলে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার বরাদ্দ থেকে বাংলাকে বাদ দেওয়া নিয়ে সরব হয়েছেন। সমাজমাধ্যমে তাঁর দাবি, বাংলায় ‘বিজেপির খারাপ ফলের বদলা নিতেই’ এ রাজ্যকে ‘বঞ্চিত’ করা হয়েছে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স (সাবেক টুইটার) হ্য়ান্ডলে লিখেছেন, “ব্যর্থ সরকারের ব্যর্থ অর্থমন্ত্রীর পেশ করা একটি ব্যর্থ বাজেট। এই বাজেটের কোনও ওয়ার্য়ান্টি নেই।” তিনি আরও লিখেছেন, “জোট সঙ্গীদের ঘুষ দেওয়ার জন্যই বিজেপি এই বাজেট বানিয়েছে।”
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছেন, “এটি কেন্দ্রীয় বাজেট নয়। এটা কুর্সি রাখতে অন্ধ্র ও বিহারকে তোষণের বাজেট। বাংলাকে আবার বঞ্চনা।”
যদিও তৃণমূলের এই বঞ্চনার তত্ত্ব মানতে নারাজ বঙ্গ বিজেপি। বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র তরুণজ্যোতি তিওয়ারি বলেন, “কুণাল ঘোষ আগে রাজ্যের কথা ভাবুন। তার পর দেশ নিয়ে ভাববেন। রাজ্যের বাজেটে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর ও মাদ্রাসার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তার সিকিভাগও পায়নি তথ্যপ্রযুক্তি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। সুতরাং তোষণের রাজনীতি কারা করে, সেটা সবাই জানে। তৃণমূলের মুখে এ সব কথায় মানায় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy