গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বাজেট নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা তুঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা যেখানে বাজেটকে যুগান্তকারী প্রমাণের চেষ্টা করছেন, সেখানে দিশাহীন বাজেট বলে কটাক্ষ করে তা জনবিরোধী বলে আক্রমণ করছেন বিরোধীরা। ‘পুরনো বোতলে নতুন মদ’ বলে কটাক্ষ করেছেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ানো নিয়ে সুর চড়িয়েছেন। এ সবের মধ্যেই অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মিলেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ধ্বস নামল শেয়ার বাজারেও।
শুক্রবার সংসদে সওয়া দু’ঘণ্টার বাজেট বক্তৃতা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তার পর থেকেই শুরু রাজনৈতিক তরজা। প্রধানমন্ত্রী-সহ অন্য মন্ত্রীরা অর্থমন্ত্রীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে বলতে চেয়েছেন, দারুণ বাজেট হয়েছে। তাঁদের মতে, কৃষি, শিল্প, ব্যাঙ্কিং, বিনিয়োগ থেকে শুরু করে গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে সব দাওয়াই রয়েছে নির্মলার বাজেট প্রস্তাবে।
ভারতের অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয়। আমেরিকা এবং চিনের পরেই। বর্তমানে তার আয়তন প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মার্কিন ডলার। সেখান থেকে মোদী সরকারের লক্ষ্য ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করা। চিনকে টপকে যাওয়া। বাজেটের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য, ‘‘এই পাঁচ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীত গড়ে তোলার লক্ষ্য এই হাউস থেকেই পূরণ হবে।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করতে হত। সেটা বন্ধ করতে আমরা ধারাবাহিক কাজ করেছি। আজ তার সুফল মিলছে। আজ দেশবাসী বিরাট প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে আসছে। এই বাজেট প্রত্যাশার বাজেট, উচ্চাশার বাজেট।’’
কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, ৫ লক্ষ কোটির বেলুনে হাওয়া দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নেই বাজেটে। আম জনতাকে হতাশ করার বাজেট। বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরির কটাক্ষ, ‘‘পুরনো বোতলে নতুন মদ।’’ বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ আরও বলেন, ‘‘ওঁরা পুরনো প্রতিশ্রুতিগুলিই নতুন করে আউড়ে গিয়েছে। সাধারণের দুর্দশা বেড়েই চলেছে। বাজেটে নতুন কিছুই নেই।’’ আরও তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘দিশাহীন, অদূরদর্শী বাজেট। অর্থনীতি চাঙ্গা করার দাওয়াই শূন্য, গ্রামীণ উন্নয়নে শূন্য, কর্মসংস্থান তৈরিতে শূন্য, শহরের উন্নয়নেও শূন্য। বড় বড় কথা দিয়ে কি নতুন ভারত গড়া সম্ভব?’’
আরও পডু়ন: বাজেটে চাপল এক্সাইজ ডিউটি-সেস, লিটারপিছু ২ টাকা দামি পেট্রল-ডিজেল
আরও পড়ুন: ‘গ্রামই ভারতের আত্মা’, বাজেটের লক্ষ্য ‘গাঁও গরিব কিসান’, বললেন নির্মলা
বাজেটে পেট্রল-ডিজেলে লিটারপিছু এক্সাইজ ডিউটি এবং সেস বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন নির্মলা সীতারামন। অর্থাৎ লিটার পিছু দু’টাকা দাম বাড়ছে জ্বালানি তেলের। তার প্রভাব পড়বে সর্বত্র। মূল্যবৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী। এই প্রসঙ্গ টেনেই বাজটেকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুরোপুরি দিশাহীন বাজেট। লক্ষ্যটাই বেলাইন হয়ে গিয়েছে। তার শীর্ষে রয়েছে পেট্রল-ডিজেলের উপর সেস এবং এক্সাইজ ডিউটি চাপানো।’’
মোদী সরকারের বাজেটে ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতির যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, তার জন্য আর্থিক বৃদ্ধি প্রথমে ৮ শতাংশের উপরে পৌঁছতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে তা ধরে রাখতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন নিবিড় ও সুংসহত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেটে শুধু লক্ষ্যমাত্রাই ধার্য করার কথা বলা হয়েছে, তার জন্য নির্দিষ্ট ওই পরিকল্পনার কোনও দিশা নেই। এক মাত্র পেট্রোল-ডিজেলে সেস ও এক্সাইজ ডিউটি বাড়ানোয় রাজকোষের স্বাস্থ্য কিছুটা পুনরুদ্ধার হতে পারে। কিন্তু আর্থিক বৃদ্ধি ৮ শতাংশে পৌঁছনোর জন্য তা যথেষ্ট নয়। ফলে মুখে যতই ঢাকঢোল পেটানো হোক, ৫ লক্ষ কোটির অর্থনীতি হয়ে ওঠা যে সহজ কাজ হবে না, তা এখনই কার্যত বলে দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
তার কিছুটা আঁচ পাওয়া গিয়েছে শেয়ার বাজারে। সকালে বাজার খোলার পর বাজেটের প্রত্যাশা নিয়ে যে ভাবে লাফিয়ে উঠেছিল সেনসেক্স-নিফটি, বাজেট পেশের পর পড়লও সেই দ্রুতগতিতে। সকালের দিকে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ৪০ হাজারের উপরে উঠে যায়। নিফটিও একই গতিতে উপরে উঠতে থাকে। কিন্তু বাজেট পেশ হতেই ধস নামে শেয়ার বাজারে। দিনের শেষে ৩৯৫ পয়েন্ট নেমে সেনসেক্স বন্ধ হয়েছে ৩৯ হাজার ৫১৩ পয়েন্টে। নিফটির পতন ১৩৫ পয়েন্টে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy