Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পাক বাহিনীর লক্ষ্য এখন নওয়াজের মুখ পোড়ানো

উদ্দেশ্যটা জানাই। প্রশ্ন উঠেছে সময়টা নিয়ে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণসভায় যোগ দিতে গত কালই নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।

রবিবার দিল্লিতে জরুরি বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও। ছবি: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সৌজন্যে

রবিবার দিল্লিতে জরুরি বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও। ছবি: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সৌজন্যে

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৯
Share: Save:

উদ্দেশ্যটা জানাই। প্রশ্ন উঠেছে সময়টা নিয়ে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণসভায় যোগ দিতে গত কালই নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকে অশান্ত কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে শোরগোল তুলে ভারতকে চাপে ফেলার অঙ্কটা নিউ ইয়র্কের সভায় আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য তাঁর। কিন্তু অনেকেই বলছেন, উরিতে ভারতীয় সেনার ঘাঁটিতে গত এক দশকের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা উল্টে চাপে ফেলে দিল শরিফকেই। কারণ জঙ্গি হামলায় ১৭ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পরে কাশ্মীর প্রশ্নে বড় দেশগুলির সহানুভূতি কতটা মিলবে, বলা কঠিন। বরং জঙ্গি হানা নিয়ে আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেনের মতো দেশগুলি পাকিস্তানকেই নিশানা করতে পারে।

আর এ কারণেই সময়টা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কূটনীতিকদের একটা অংশ বলছেন, যথেষ্ট অঙ্ক কষেই এই সময় হামলা করা হল। নওয়াজ যে দিন পাকিস্তান থেকে আমেরিকার বিমানে উঠলেন, তার পরের দিন ভারতের মাটিতে এত বড় হামলার অঙ্কটা আগেই করে রেখেছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ও সেনা। পাক সামরিক কর্তারা বিলক্ষণ জানেন, উরির ঘটনায় নওয়াজ আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মুখে তো পড়বেনই, দেশেও তাঁর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব দুর্বল হবে। আর তাতে আখেরে সুবিধা হবে পাক সেনারই। এখনই অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শাসক বদল না করলেও ক্ষমতার রাশ থাকবে সেনার হাতেই।

কারণটা অবশ্য পুরনো এবং পরিচিত। ভারতের মাটিতে ছায়াযুদ্ধের যে পাক নীতি গত সাড়ে তিন দশক ধরে চলছে, তাকে আরও গতি দেওয়া। এমনিতেই কাশ্মীর নিয়ে ভারত গত কয়েক মাস ধরে বেশ চাপে। পাল্টা হিসেবে নয়াদিল্লি বালুচিস্তান তাস খেলেছে। বালুচিস্তানের ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’কে সমর্থন করার কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদী। আর তাতেই গাত্রদাহ বেড়েছে ইসলামাবাদের। উরির সেনাঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ইসলামাবাদের তরফে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হল, কাশ্মীরের পাল্টা বালুচিস্তান নামের পাটকেলটি ছোড়ার জন্য তারা নয়াদিল্লিকে ভোগাবে।

আসলে পাকিস্তানের কাছে বালুচ-প্রশ্নটি যথেষ্ট স্পর্শকাতর। গত ৭০ বছরে কাশ্মীর নিয়ে যত কথা হয়েছে, তার এক ভাগও বালুচিস্তান নিয়ে হয়নি। সেটা নিয়েই ভারত খোঁচা দিয়েছে। আর এটাই পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ক্ষোভের কারণ। ইসলামাবাদের রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, মোদী ক্ষমতায় আসার পরে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ যে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলেন, সেনার চাপে তা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। বালুচিস্তান নিয়ে মোদীর বক্তব্যের পরে শরিফ তথা পাক রাজনৈতিক নেতৃত্বের তরফে আর কোনও ভাবেই ভারতের সঙ্গে শান্তির পায়রা ওড়ানোর কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না। সে দেশের ভারত-নীতি এখন পুরোপুরি সেনাবাহিনীর হাতে।

পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বন্ধ থাকলেও গত কয়েক মাসে বিভিন্ন স্তরে দু’দেশের মধ্যে ‘ট্র্যাক টু’ আলোচনা হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সেই আলোচনায় ইসলামাবাদের তরফে বলা হয়েছে যে, প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট জিয়া উল হকের ‘থাউজ্যান্ড কাটস’-এর তত্ত্ব থেকে তারা সরে আসতেই পারে। এমনকী মুম্বই হামলার মতো ঘটনা বা ভারতের বিভিন্ন শহরে নাশকতার ঘটনা যাতে না ঘটে, সে দিকেও নজর দেবে। কিন্তু কাশ্মীরের ‘স্বাধীনতা আন্দোলনে’ সব রকম সাহায্য করার নীতি কোনও ভাবেই বদলানো হবে না। বরং তা আরও বাড়িয়ে যাওয়া হবে! এটা যে বালুচিস্তান নিয়ে জ্বালা জুড়োতে, তা বুঝিয়ে দিয়ে ইসলামাবাদ এটাও মনে করিয়ে দিয়েছে যে, গোটা বালুচিস্তানে মাত্র ১০ লক্ষ মানুষ থাকেন। কিন্তু শুধু জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরেই ৮৫ লাখ মানুষের বাস। তাই বালুচিস্তানে নাশকতা হলে তার যা অভিঘাত হবে, কাশ্মীরে যে কোনও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিঘাত তার থেকে অনেক বেশি।

সূত্রের মতে, এই ‘ট্র্যাক টু’ বার্তা থেকে দু’টি বিষয় স্পষ্ট। এক, পাকিস্তান কোনও ভাবেই উপত্যকায় জেহাদি কার্যকলাপ বন্ধ করবে না। বরং কাশ্মীরকে আরও অশান্ত করে ভারতকে আরও চাপে ফেলতে চায় তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, উরির সেনাঘাঁটিতে হামলা এই কৌশলেরই অঙ্গ। দ্বিতীয়ত, এও বোঝা যাচ্ছে যে, এক সময় নয়াদিল্লির ডাকে সাড়া দেওয়া নওয়াজ আজ সেনাবাহিনীর হাতের পুতুল।

কূটনৈতিক শিবিরের একটা বড় অংশের বক্তব্য, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় শরিফকে কিছুটা সুরক্ষিত করে দুই পঞ্জাবের বাণিজ্যিক এবং ঐতিহাসিক যোগাযোগকে তুলে ধরার যে নীতি নিয়ে মোদী তাঁর ইনিংস শুরু করেছিলেন, তা অক্ষুণ্ণ রাখাটাই উচিত ছিল। এর ফলে অন্তত কথাবার্তা চালানোর এবং বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক তৈরির একটা সুযোগ থাকত। তা না করে বালুচ নিয়ে খোঁচা দেওয়ায় নওয়াজ কার্যত শক্তিহীন হয়ে পড়েছেন। কারণ এর ফলে ঘরোয়া রাজনীতিতে চূড়ান্ত মুখ পুড়েছে পাক রাজনৈতিক নেতৃত্বের। আন্দোলনরত বালুচদের মিছিলে ফের পাক-সরকার বিরোধী আওয়াজ উঠেছে। আর এই সুযোগেই পাক সেনা রাষ্ট্রযন্ত্রের রাশটি ফের নিজের হাতে তুলে নিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Uncontrolled Pak army Nawaj Sharif infiltration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE