Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

দলের হাত শক্ত করতে ফের গঙ্গা-যাত্রা উমার

দু’বছর আগে যাত্রায় বেরিয়েছিলেন নিজের রাজনৈতিক ভিত শক্ত করতে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী হয়ে ফের যাত্রায় বেরোচ্ছেন তিনি। এ বারে দলের হাত পোক্ত করতে। কেন্দ্রের জলসম্পদ, নদী উন্নয়ন ও গঙ্গার পুনরুজ্জীবন মন্ত্রী উমা ভারতী ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গাসাগর যাত্রায় বেরোচ্ছেন। মোদী সরকারের আর সব মন্ত্রী যখন তটস্থ প্রধানমন্ত্রীর কড়া নজরদারিতে, দলের কাজে মুম্বই গেলেও ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি ছোটেন নিজের মন্ত্রকে, সেখানে উমার এই দীর্ঘ যাত্রা নিঃসন্দেহে এক বেনজির ঘটনা।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৩
Share: Save:

দু’বছর আগে যাত্রায় বেরিয়েছিলেন নিজের রাজনৈতিক ভিত শক্ত করতে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী হয়ে ফের যাত্রায় বেরোচ্ছেন তিনি। এ বারে দলের হাত পোক্ত করতে।

কেন্দ্রের জলসম্পদ, নদী উন্নয়ন ও গঙ্গার পুনরুজ্জীবন মন্ত্রী উমা ভারতী ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গাসাগর যাত্রায় বেরোচ্ছেন। মোদী সরকারের আর সব মন্ত্রী যখন তটস্থ প্রধানমন্ত্রীর কড়া নজরদারিতে, দলের কাজে মুম্বই গেলেও ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি ছোটেন নিজের মন্ত্রকে, সেখানে উমার এই দীর্ঘ যাত্রা নিঃসন্দেহে এক বেনজির ঘটনা। উমা বলছেন, এই যাত্রার উদ্দেশ্য তাঁর মন্ত্রকের কাজকর্ম সরেজমিনে খতিয়ে দেখা। কিন্তু তাঁর দলের লোকেরাও এটা অস্বীকার করছেন না যে উমার মতো একটি হিন্দুত্বের মুখকে সামনে রেখে সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতৃত্ব একসঙ্গে অনেকগুলি রাজ্যে সংগঠনকে আরও মজবুত করারই কৌশল নিচ্ছেন। বিশেষ করে গোবলয়ের রাজ্যগুলিতে।

সঙ্ঘের এক নেতার ব্যাখ্যা, গঙ্গা এমন একটি নদী, যেটির সঙ্গে কোটি কোটি মানুষের আস্থা জড়িয়ে রয়েছে। সে কারণে সঙ্ঘের অনুরোধ মেনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গঙ্গার পুনরুজ্জীবনে একটি পৃথক মন্ত্রকও গঠন করেছেন। এবং উমা ভারতীর মতো নেত্রীকে তার দায়িত্ব দিয়েছেন, যিনি অতীতে গঙ্গাকে নিয়ে আন্দোলন করে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও গঙ্গার তীরে অবস্থিত বারাণসীকে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যখনই বারাণসী যান, গঙ্গায় আরতি করেন। গঙ্গা এমন একটি নদী, যেখানে সমাজের নিম্নবর্গ থেকে উচ্চবর্ণ, সকলের জমায়েত হয়। অনেকের রুজি-রোজগার চলে এই নদীর মাধ্যমে। ফলে গঙ্গার পুনরুজ্জীবন হলে সব বর্গেরই উন্নয়ন হবে। গঙ্গাকে আগলে রাখার জন্য গঙ্গা-রক্ষী বাহিনীও তৈরি করা হচ্ছে।

বিরোধীরা গোড়া থেকেই গঙ্গা নিয়ে আলাদা মন্ত্রক তৈরির সমালোচনা করে এসেছেন। তাদের প্রশ্ন, গোটা ভারতে এত নদ-নদী থাকতে শুধু গঙ্গা কেন? খাস রাজধানী দিল্লি দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনার হাল আরও ভয়ঙ্কর। সেটির হাল ফেরাতে কেন উদ্যোগী হচ্ছে না সরকার। এমনকী সুপ্রিম কোর্টেও এই একই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। উমার অবশ্য বক্তব্য, সরকারের অগ্রাধিকারে না থাকলেও যমুনার কাজেও হাত দেওয়া হবে। শীঘ্রই হিন্দুদের দুই তীর্থ মথুরা থেকে বৃন্দাবন পর্যন্ত যমুনার সংস্কারে কাজে নামছেন উমা। গুজরাতের সাবরমতী নদীর আদলে এই দুই শহরের মধ্যে প্রায় ১২ কিলোমিটার যমুনার দু’দিক বাঁধিয়ে নৌকা চলাচলও শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে উমার মন্ত্রক।

প্রধানমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত সর্বত্র শুধুই উন্নয়নের কথা বললেও সঙ্ঘ পরিবার মোদীর পিঠে সওয়ার হয়ে নিজেদের বিস্তারের কাজে পুরোদস্তুর নেমে পড়েছে। ক’দিন আগেই তারা দিল্লিতে তিন দিনের ‘বিশ্ব হিন্দু কংগ্রেস’-এর আয়োজন করেছিল। মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি বিপুল ভোটে জেতার পরে এ বার গোটা দেশে ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কী ভাবে হিন্দুত্বের প্রসার ঘটানো যায়, তার রণকৌশল নিয়েই সবিস্তার আলোচনা হয় সেখানে।

সামনে কয়েক রাজ্যের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সঙ্ঘের পাশাপাশি বিজেপি-ও উমার যাত্রাকে সামনে রেখে সংগঠনকে মজবুত করার কাজে নামছে। উমার যাত্রাপথে থাকছে উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে যাত্রা। উমা আজ জানিয়েছেন, দিনে গড়পরতায় দুশো কিলোমিটার সফর করবেন তিনি।

উমার এই যাত্রা নিয়ে ইতিমধ্যেই পরিবেশবিদদের একাংশে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। গঙ্গার উত্তর ভাগে একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে ২০১৩-র বন্যা-ধসের মতো বিপর্যয় নেমে আসছে বলে মনে করেন তাঁরা। তাঁদের আশঙ্কায় আমল না দিয়েই অতীতে মনমোহন সিংহ সরকার ওই সব প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছিল। এতে গঙ্গা ও সামগ্রিক ভাবে পরিবেশের ক্ষতি হবে, এই যুক্তিতে বিজেপিও সে সময় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল, পরিবেশবিদদের মতোই।

পরিবেশবিদদের এখন তাই প্রশ্ন, ওই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি থেকে তৈরি হওয়া সমস্যার দিকে কি নজর দেবেন উমা? দূষণমূক্ত গঙ্গা, পরিচ্ছন্ন ভারত গড়ার ডাক দিলেও মোদী উন্নয়নকেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনিই বা কী অবস্থান নেবেন গঙ্গার গতিরোধ করে তৈরি হওয়া ওই সব প্রকল্প নিয়ে? উমা অবশ্য এ দিন জানিয়েছেন, যাত্রাপথে মাঝে মাঝে থেমে তিনি সমস্যাগুলি বুঝবেন। কথা বলবেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। সেগুলি বুঝে সেই মোতাবেক সরকারের কর্মসূচিও অদল-বদল করবেন। উমা জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পগুলির ব্যাপারে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ইতিমধ্যেই আলোচনা হয়েছে। উমা বলেন, “এই যাত্রার ব্যাপারে সব রকম সহযোগিতা করছেন প্রধানমন্ত্রী।” যাত্রার ফল কী দাঁড়ায়, পরিবেশবিদরা তাকিয়ে সে দিকে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy