উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে তামিল কবি সুব্রহ্মণ্য ভারতীর জন্মদিন, ১১ ডিসেম্বরকে ভারতীয় ভাষা দিবস হিসাবে পালন করতে হবে। ফাইল চিত্র।
এক দিকে সরকারি কাজে ইংরেজির বদলে দেশ জুড়ে হিন্দি আনার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে। তা নিয়ে শুরু হয়েছে প্রতিবাদও। এরই মধ্যে ইউজিসি দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে 'ভারতীয় ভাষা দিবস' পালনের নির্দেশ দিল। নির্দেশে বলা হয়েছে, ভারতের বিভিন্ন ভাষার মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে তুলতেই এমন উদ্যোগ। কেন্দ্রের উদ্দেশ্য ঠিক কী, তা নিয়েও এ বার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সোমবারেই গুজরাতের কোভাদিয়ায় এক সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, "এক ভারতীয় ভাষাকে অন্য ভারতীয় ভাষার শত্রু তৈরির জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে।" বিশেষজ্ঞদের মতে, আদতে হিন্দিকে সর্বত্র চাপানোর চেষ্টার প্রতিবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই হিন্দিকে সরকারি কাজের প্রধান মাধ্যম হিসাবে তুলে ধরার যে চেষ্টা শুরু হয়েছে, তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
এ বার ইউজিসি নির্দেশ, জাতীয় শিক্ষা নীতিকে অনুসরণ করেই স্থানীয় ভাষাগুলির মধ্যে যোগাযোগ এবং চর্চা বাড়ানোর লক্ষ্যে ভারতীয় ভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে তামিল কবি সুব্রহ্মণ্য ভারতীর জন্মদিন, ১১ ডিসেম্বরকে ভারতীয় ভাষা দিবস হিসাবে পালন করতে হবে। নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, 'ভাষা সম্প্রীতি' তৈরি করতে এবং মাতৃভাষা ছাড়াও অন্য ভারতীয় ভাষা শেখার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতেই এমন উদ্যোগ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক এবং রাজ্য সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার এ দিন বলেন, "এই উদ্যোগ খুবই ভাল। কিন্তু বলা হচ্ছে, জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়টি খুব স্পষ্ট নয়।" তাঁর ব্যাখ্যা, ইতিমধ্যে হিন্দিকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে আবার বহুভাষিকতা নিয়ে এমন উদ্যোগ কেন? ভারতীয় ভাষাগুলির পারস্পরিক চর্চার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। সেই চর্চা খুব জরুরিও। কিন্তু কেন্দ্রের অন্যান্য ঘোষণার সঙ্গে এই উদ্যোগের সমন্বয় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর এ দিন বলেন, "ইউজিসির নির্দেশে প্রধান ভারতীয় ভাষাগুলির কিছু কিছু কাঠামোগত সামঞ্জস্য রয়েছে বলে বলা হয়েছে। এটা ভাষা বিজ্ঞানের নিরিখে ভারতীয় ভাষা বিবর্তনের ইতিহাসের পরিপন্থী। দ্রাবিড়ীয় পরিবারের ভাষাগুলি, বিশেষ করে তামিলের এবং সংস্কৃতের যথেষ্ট কাঠামোগত পার্থক্য রয়েছে। উত্তর ভারতীয় ভাষাগুলির বিকাশের সঙ্গে তামিল ভাষার বিকাশের ইতিহাস এক নয়।" তিনি আরও বলেন, "ভারতীয় ভাষাগুলির সমন্বয় সাধনের যে কথা বলা হয়েছে, তা এই পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। তাই সুব্রহ্মণ্য ভারতীর জন্মদিনকে ভারতীয় ভাষা দিবস হিসাবে পালন করার প্রস্তাব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে হয়।" তাঁর ব্যাখ্যা, তামিলনাড়ুর মানুষ বরাবর অন্যান্য অনেক ভাষার মানুষের মতোই হিন্দি চাপানোর বিরোধিতা করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারেরহিন্দি চাপানোর বর্তমান ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে তামিল ভাষী জনগণকে তুষ্ট করার বা অন্য কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এই প্রচেষ্টার পিছনে আছে বলে মনে হচ্ছে।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy