অঙ্কিতা এবং বৈশালী জৈন।
রোজই বাড়ির জানলা দিয়ে রাস্তার ফুটপাতে খেলা করা তার বয়সি ছেলেমেয়েগুলিকে সারাক্ষণ দেখত সে। মনে মনে ভাবত, সে তো স্কুলে যায়, কিন্তু ওরা কেন যায় না, কেন সারাক্ষণ খেলা করে রাস্তার ধারে! মলিন, শতচ্ছিন্ন পোশাকের সেই ছেলেমেয়েগুলিকে দেখে তার বড্ড কষ্ট হত। এক দিন বাবাকে ডেকে প্রশ্নও করেছিল, ‘আচ্ছা বাবা, কেন ওই ছেলেমেয়েগুলি স্কুলে যায় না?’
প্রশ্ন শুনে বাবা একটু স্তম্ভিতই হয়েছিলেন। তবে মেয়েকে উত্তরও দিয়েছিলেন তিনি। মেয়েকে বলেছিলেন, ‘এটা সমাজের একটা ছবি। এই ছবি যদি তুমি দেখতে না চাও তা হলে তোমাকে সমাজে পরিবর্তন আনতে হবে। আর সেই পরিবর্তন আনতে গেলে সেই সিস্টেমের অংশ হতে হবে।’ সেই পরামর্শই মেয়েটির জীবনের লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছিল। বাবার পরামর্শকে জীবনের পাথেয় করে নেওয়া সেই মেয়েই এ বছরের ইউপিএসসি-র শীর্ষ স্থানাধিকারীদের এক জন।
অঙ্কিতা জৈন। দিল্লির বাসিন্দা। বাবা সুশীলকুমার জৈন এক জন ব্যবসায়ী। মা অনিতা জৈন গৃহিণী। অঙ্কিতা এ বার ইউপিএসসি-র তৃতীয় স্থানাধিকারী। চমকের এখানেই শেষ নয়। এই জৈন পরিবারেরই ছোট মেয়ে বৈশালীও ইউপিএসসি-র ২১তম স্থানাধিকারী। একই ঘর থেকে ইউপিএসসি পাশ করে তাক লাগিয়ে দিলেন দিল্লির এই দুই বোন।
২০১৬-তে গেট পরক্ষায় প্রথম স্থান পান অঙ্কিতা। তার পরই ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এ বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন। তার আগে বেঙ্গালুরুতে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করতেন অঙ্কিতা। তিনি বলেন, “২০১৭-তে প্রথম ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসি। কিন্তু প্রাথমিক পরীক্ষা পাশ করতে পারিনি। থেমে থাকিনি। সেই ব্যর্থতা আরও জেদ বাড়িয়ে দিয়েছিল। ফের ২০১৮-তে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি।” পরীক্ষায় পাশও করেছিলেন। পরীক্ষায় স্থান ছিল ২৭০ নম্বরে। সর্বভারতীয় অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস দফতরে যোগ দেন। পোস্টিং হয়েছিল মুম্বই।
কিন্তু এই চাকরিতে সন্তুষ্ট ছিলেন না অঙ্কিতা। তাই চাকরি করতে করতেই ২০১৯-এ ফের ইউপিএসসি-র পরীক্ষায় বসেন। এ বারও প্রাথমিক পরীক্ষায় আটকে যান। কারণ বেশির ভাগ সময়ই অডিট দফতরের প্রশিক্ষণে তাঁর সময় চলে গিয়েছিল। ফের ২০২০-তে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। এ বার আর তাঁকে থামানো যায়নি। তৃতীয় স্থান নিয়েই পাশ করেন তিনি।
অঙ্কিতার স্বামী অভিনব ত্যাগীও আইপিএস। অঙ্কিতা জানান, তাঁর স্বামী এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতায় তিনি এই সাফল্য পেয়েছেন। বিশেষ করে বাবার সেই পরামর্শই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। সিস্টমেমের মধ্যে থেকেই এ বার সমাজের সেই ছবি বদলানোর চেষ্টা করবেন অঙ্কিতা।
শুধু অঙ্কিতা একাই নন। তাঁর বোন বৈশালীও কোনও অংশে কম নন। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে চাকরি করা বৈশালী জানিয়েছেন, দিদিই তাঁর অনুপ্রেরণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy