Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Sonagachi

Sonagachi: পুজোয় সোনাগাছি আর দেবে না বেশ্যাদ্বার মাটি, অভিমানে একই পথে রাজ্যের সব যৌনপল্লি

দুর্বারের বক্তব্য, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার যে মানবপাচার-বিরোধী আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে তাতে এই পেশায় যুক্তরা বিপদে পড়বেন।

দুর্গার উপরে নয়, সমাজের প্রতিই অভিমান।

দুর্গার উপরে নয়, সমাজের প্রতিই অভিমান। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৫৯
Share: Save:

দুর্গাপুজোয় ‘বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা’ লাগে বলে উল্লেখ রয়েছে শাস্ত্রে। কিন্তু বাংলার বেশ্যা সমাজ সেই রীতি মানার জন্য বারোয়ারি কমিটিগুলির পাশে আর দাঁড়াতে চায় না। অতীতে এমন কথা উঠলেও এ বার গোটা বাংলার সব যৌনপল্লিই এক হয়েছে এই সিদ্ধান্তে। বাংলার যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সম্পাদক কাজল বসু বলেন, ‘‘আগেও আমরা এই কথা বলেছি যে, আমাদের দরজার মাটি না পেলে পুজো হবে না, কিন্তু কেউ আমাদের ঘরের চৌকাঠ পার হলেই অপরাধী। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন আইনই সেটা বলেছে। তাই আমরা ঠিক করেছি, গোটা রাজ্যেই এ বার সব যৌনপল্লি এক সুরে বলবে, দরজার মাটি দেব না।’’

কিন্তু কেন এই অভিমান? দুর্বারের বক্তব্য, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার যে মানবপাচার-বিরোধী আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে তাতে এই পেশায় যুক্ত যৌনকর্মীরা বিপদের মধ্যে পড়বেন। এমনকি, এই পেশাই উঠে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। প্রসঙ্গত,‘ট্র্যাফিকিং পার্সনস (প্রিভেনশন, প্রোটেকশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলেটশন) বিল ইতিমধ্যেই লোকসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে। এখন রাজ্যসভার অনুমোদন পেলেই তা আইন রূপায়নের দিকে এগিয়ে যাবে। সেই বিলই সিলেক্ট কমিটি-তে পাঠানোর দাবি তুলে গত অগস্ট মাসে সংসদ চলাকালীনই সরব হয়েছিল দুর্বার। সংগঠনের আইনজীবী অভিজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের দেশে আগের পাচারবিরোধী আইন রয়েছে। সেটির পরে এই বিলে কোথাও ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক যৌনকর্মীদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবেও যাঁরা এই পেশায় আসবেন তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যাঁরা স্বেচ্ছায় এই পেশায় এসেছেন তাঁদের তো বাধ্য করা যায় না। মানবপাচার রোধের নামে আসলে যৌনকর্মীদের পেশাটাকেই তুলে দিতে চাইছে কেন্দ্র।’’ সেই রেশ টেনেই সর্বজনীন দুর্গাপুজোকে বয়কট করতে চাইছেন যৌনপল্লির বাসিন্দারা।

সোনগাছি তথা যৌনপল্লির সংগঠন দুর্বার অবশ্য নিজেদের পুজো করছে এ বারও। তবে অতীতে সেই পুজোয় পুলিশের অনুমতি নিয়ে চাপে পড়তে হয়েছিল দুর্বারকে। সেই সময় কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে অনুমতি আদায় করেছিল দুর্বার। এ বার নিজেদের পুজোয় বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা ব্যবহার করা হবে তো? জবাবে দুর্বারের সদস্য তথা সোনাগাছির পুরনো বাসিন্দা বিমলা রায় বলেন, ‘‘এত কাল তো আমাদের মাটি নিয়ে সবার পুজো হয়েছে। এ বার থেকে আমাদের মাটি, আমাদের পুজো। এটাই আমাদের পুজোর থিম বলতে পারেন।’’

কিন্তু সত্যিই কি দুর্গাপুজো বেশ্যদ্বার মৃত্তিকা ছাড়া সম্ভব নয়? এর জবাবে পুরোহিত প্রশিক্ষক তথা ‘দুর্গাপুজোর জোগাড়’ বইয়ের লেখক নবকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সবাই শুধু বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকার কথা বলে। কিন্তু শাস্ত্র অনুযায়ী একই সঙ্গে পুজোয় রাজদ্বার, সর্বতীর্থ, বৃষশৃঙ্গ, গজদন্তের মৃত্তিকাও লাগে। কিন্তু সে সব তো আর পাওয়া যায় না। গঙ্গামাটিকে প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একান্তই বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা না পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রে প্রতীকী ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে শাস্ত্রে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sonagachi durga puja durga pujo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy