নাটকের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।
রাবণ রাজা সীতা মাইজিকো হরণ করকে লেকে গয়া... এটুকু ভাবতেই ব্যথায় ব্যথায় মন ভরে গিয়েছিল দুই বানরসেনার। শ্রীরামচন্দ্রকে প্রণাম ঠুকে ‘হুপ’ করে লাফ দিয়ে তারা বেরিয়ে পড়েছিল সীতা অন্বেষণে।
গত কাল স্টেজের ওপরে এটুকু সবাই দেখেছিল। খেয়ালই করেনি যে, সীতা খুঁজতে গিয়ে পাঁচিলে উঠতে হলে বানরেরও মই লাগে!
তা সীতাদেবী উদ্ধার ঠিকই হলেন। হরিদ্বার জেলের বন্দিদের দিয়ে অভিনয় করানো ‘রামলীলা’ও জমে ক্ষীর। রাতে অভিনেতাদের আবার গোনাগুনতি করে সেলে ঢোকানোর সময়ে জেলকর্মীরা দেখলেন, গন্ডগোল। বিস্তর গন্ডগোল। ওই যে দুই বানরসেনা নাটকের মাঝখানে সীতাকে খুঁজতে রওনা হয়েছিল, কোথায় তারা?
খোঁজ খোঁজ। রামলীলার ঘোর কাটিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জেল চত্বরের প্রতিটি ইঞ্চি তোলপাড় করে ফেললেন জেলকর্মীরা। কিন্তু সব ভোঁ-ভাঁ! জেলের ২২ ফুট উঁচু পাঁচিলের গা ঘেঁষে একটা লম্বা মই পড়ে ছিল শুধু। জেলকর্তারা মোটামুটি নিশ্চিত, ওই মই বেয়েই আপন মনে মাঠে-বনে কোথাও উধাও হয়ে গিয়েছে পঙ্কজ আর রাজকুমার। জেলের রামলীলায় বানরের পার্ট করা দুই কয়েদি।
রুড়কীর পঙ্কজ খুনের আসামি। যাবজ্জীবন সাজা খাটছিল সে। উত্তরপ্রদেশের গোন্ডার রাজকুমার ছিল অপহরণের এক মামলায় বিচারাধীন বন্দি। নাটকে নাম দিয়ে কী ভাবে তারা এমন নিখুঁত জোগাড়যন্ত্র করে জেলের পাঁচিল টপকে পালাল, সেই কড়া প্রশ্ন এখন ধেয়ে আসছে জেলকর্তাদের দিকে। জেলের কিছু জায়গায় নির্মাণকাজ চলছিল। ধরে নেওয়া হচ্ছে, মইটা সেখান থেকেই সরিয়েছিল পঙ্কজ-রাজকুমার। আরও প্রশ্ন উঠছে, জেলকর্মীরা রামলীলায় এমন বিভোর কী করে হয়ে গেলেন যে, মঞ্চের বাইরে কী ঘটছে তা নজরই করলেন না?
হরিদ্বার (গ্রামীণ)-এর এসএসপি প্রমোদ ডোভাল বলছেন, আজ ভোর ৬টা নাগাদ তাঁরা দুই ‘বানর কয়েদি’র চম্পট দেওয়ার খবর পান। তিনি এবং জেলাশাসক কর্মেন্দ্র সিংহ পত্রপাঠ চলে আসেন জেলে। বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। আশেপাশের এলাকা জুড়ে চিরুনি তল্লাশি ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছে।
নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘মুক্তধারা’ ছবিতে জেলের কয়েদিরা ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’ অভিনয়ের দিনে জেল থেকে পালিয়ে গিয়েও আবার জেলে ফিরে এসেছিল। প্রধান চরিত্রটি বাকিদের বলেছিল, ‘‘আজ যদি আমরা ফিরে যেতে না পারি, তা হলে প্রমাণ হয়ে যাবে আমরা অপরাধী।’’ নাটক ডোবেনি, বিশ্বাসও। কিন্তু জীবন তো আর সব সময়ে সিনেমা হয়ে ওঠে না। স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানাচ্ছেন, কোভিডের সময়ে প্যারোলে ছাড়া পাওয়া উত্তরাখণ্ডের শ’পাঁচেক কয়েদিকে আর কোনও দিনই জেলের ভিতরে দেখা যায়নি। সেই তালিকাতেই জুড়ে গেল আরও দুই নাম।
জেলকর্তারা হাড়ে হাড়ে বুঝছেন, হরিদ্বার পুণ্যভূমি হলেও গত কালের রামলীলায় ‘জয় শ্রীরাম’ আওড়ানো সব ‘বানর’ই নিখাদ রামভক্ত ছিল না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy