Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

৯৯ মিনিটে আগরা, চমক গতিমানের

গতি..গতি...আরও গতি। এই মন্ত্রেই আজ আবাহন হল গতিমান এক্সপ্রেসের। গতির প্রশ্নে নতুন মাইলফলক ছুঁল ভারতীয় রেল।সকাল দশটা। দিল্লির নিজামুদ্দিন স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করালেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। গন্তব্য আগরা। রেলের দাবি, সময় লাগবে ১০০ মিনিট।

যাত্রা শুরু গতিমানের। যাত্রী পরিষেবা দিতে হাজির ট্রেনবালারাও।  ভারতীয় রেলের ইতিহাসে এই প্রথম। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

যাত্রা শুরু গতিমানের। যাত্রী পরিষেবা দিতে হাজির ট্রেনবালারাও। ভারতীয় রেলের ইতিহাসে এই প্রথম। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
আগরা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১২
Share: Save:

গতি..গতি...আরও গতি। এই মন্ত্রেই আজ আবাহন হল গতিমান এক্সপ্রেসের। গতির প্রশ্নে নতুন মাইলফলক ছুঁল ভারতীয় রেল।

সকাল দশটা। দিল্লির নিজামুদ্দিন স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করালেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। গন্তব্য আগরা। রেলের দাবি, সময় লাগবে ১০০ মিনিট।

প্রাথমিক জড়তাটুকু কাটার অপেক্ষা। দিল্লির ওখলা স্টেশন পার হতেই হাল্কা ধাক্কা। গতি নিল ট্রেন। ৯০..১০০..১১০.. গতি বাড়াচ্ছে গতিমান। তুঘলকাবাদ স্টেশন পার হতেই জানা গেল ট্রেন রাজধানীর সর্ব্বোচ্চ সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। সামনে কেবল শতাব্দী। দেখতে দেখতে গতিমান পেরিয়ে গেল তা-ও। ট্রেনের পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে মুহুর্মুহু ঘোষণা, নতুন ট্রেন কখন, কোথায়, নতুন করে গড়ছে গতির রেকর্ড। বুলেট ট্রেন দূরের স্বপ্ন। কিন্তু গতিমান বুঝিয়ে দিল, সেমি-হাইস্পিড ট্রেন আজ দেশবাসীর কাছে ঘোর বাস্তব।

ক্ষমতায় আসার আগেই দেশবাসীকে বুলেট ট্রেন চড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আমদাবাদ থেকে মুম্বই প্রস্তাবিত যাত্রাপথ কতটা লাভজনক হতে পারে, সেই সমীক্ষার কাজও শেষ। বিপুল খরচের ধাক্কা। তাই হাত গুটিয়ে এ মুহূর্তে বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন পূরণে বেসরকারি বিনিয়োগে ভরসা রাখছে রেল মন্ত্রক।

বুলেট ট্রেন সময়সাপেক্ষ। কিন্তু সেমি-হাইস্পিড কি সম্ভব? জানতে চেয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। রেল মন্ত্রকের কর্তারা জানান, বর্তমানে যা পরিকাঠামো, তাতে আধুনিক ইঞ্জিনগুলি ১৮০ কিলোমিটার গতি তুলতে সক্ষম। এলএইচবি কোচগুলিকেও সেই গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোটার মতো করে বানানো হচ্ছে। আধুনিক হয়েছে সিগন্যালিং ব্যবস্থা। রেলের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে সেমি-হাইস্পিড ট্রেন চালানোর উপর জোর দেয় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। তার পরেই চলতি বাজেটে গতিমান ট্রেন চালানোর প্রতিশ্রুতি দেন সুরেশ প্রভু।

ঠিক হয়, গতিমান এক্সপ্রেস চালানো হবে ১৬০ কিলোমিটার বেগে। তার পর ধীরে ধীরে তা বাড়িয়ে ১৮০ কিমি ও পরে ২০০ কিলোমিটার করা হবে। বেছে নেওয়া হয় আগরা-দিল্লি রুটকে। কিন্তু বাদ সাধে কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি। জানায়, লাইনের দু’ধারে বেড়া না দেওয়া পর্যন্ত ওই গতিতে ট্রেন চালানোর ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব নয়। আশঙ্কা ছিল, বেড়া না থাকলে গরু-মোষ সামনে এলে বেলাইন হতে পারে গতিমান। হতে পারে বড় দুর্ঘটনা। তার পরেই দিল্লি থেকে মথুরার মধ্যে লাইনে বেড়া দেওয়ার কাজে হাত দেয় রেল।

সেই কাজ শেষ হতেই শুরু হয় পরীক্ষামূলক দৌড়। গোটা সাতেক ট্রায়াল রানের পরে আজ ওই ট্রেন খুলে দেওয়া হয়েছে যাত্রীদের জন্য। শতাব্দী এক্সপ্রেসের মডেলে স্বল্প দূরত্বের দু-তিনটি শহরের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতেই ব্যবহার হবে গতিমান এক্সপ্রেসের। শতাব্দীর মতোই বসার ব্যবস্থা চেয়ার কারে। এ ছাড়া এই ট্রেনেই প্রথম বার ট্রেন হোস্টেসের মাধ্যমে পরিষেবা দেওয়া শুরু করেছে রেল। তবে সাধারণ ট্রেনের এসি চেয়ার কার বা শতাব্দীর চেয়ে এই ট্রেনের ভাড়া তুলনায় কিছুটা বেশি। যাত্রীদের জন্য রয়েছে ফ্রি ইন্টারনেট পরিষেবা। যা দিতে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে রেল।

যাত্রাপথেই হঠাৎ ঘোষণা ভেসে এল মাইকে— বল্লভগঢ়-কোশীর মাঝে গতিমান এক্সপ্রেস ছুঁয়ে ফেলেছে ১৬০ কিলোমিটারের গন্ডি। মুহূর্তে হইচই করে উঠল গোটা কামরা। ঠিক এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিটের মাথায় মথুরা পেরিয়ে গেল গতিমান। আর বাকি কুড়ি মিনিট। শুরু হল নামার প্রস্তুতি।

গতিময় এক যাত্রার অনুভূতির মধ্যে যখন আগরায় পৌঁছলেন যাত্রীরা, তখন ঘড়ির কাঁটা বলছে, ঠিক ৯৯ মিনিট আগে দিল্লি ছেড়েছিল গতিমান।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE