লাল কেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, ভারত সরকারের পাক নীতি এখন আদ্যন্ত আক্রমণাত্মক। ছবি: পিটিআই।
পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে কাশ্মীরের অশান্তিকে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। আর আজ, ভারতের স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার মঞ্চ থেকে তার জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! কাশ্মীরের জবাবে টেনে আনলেন বালুচিস্তান ও গিলগিট প্রসঙ্গ!
বুঝিয়ে দিলেন, পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে এলে পাল্টা বালুচ তাস খেলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে অস্বস্তিতে ফেলতে দু’বার ভাববে না নয়াদিল্লি! এ দিনই সন্ধেয় বালুচিস্তানের অশান্তির জন্য ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র’-এর ভূমিকাকে দায়ী করেছে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রক। বিবৃতি দিয়ে তারা দাবি করেছে, ওই এলাকায় অশান্তির পিছনে র’য়ের হাত রয়েছে। পাক বিদেশমন্ত্রকের অভিযোগ, বালুচিস্তানের কথা বলে আসলে কাশ্মীর-পরিস্থিতি থেকে নজর সরিয়ে দেওয়ার কৌশল নিচ্ছে ভারত।
গত এক মাস ধরে যে ভাবে পাকিস্তান কাশ্মীর প্রসঙ্গে সরব হয়েছে তাতে বালুচ তাস খেলার কৌশল নেয় কেন্দ্র। গত শুক্রবার কাশ্মীর প্রসঙ্গে সবর্দল বৈঠকে প্রথম এই নিয়ে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী। এই নতুন পদক্ষেপের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মোদী সেই বৈঠকে বলেছিলেন, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর ও বালুচিস্তানের মানুষ যারা এখন অন্য কোনও দেশে থাকেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাকিস্তানের নির্যাতনের কথা সামনে আনতে হবে। কী ভাবে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষ নওয়াজ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে
তা নিয়েও মুখ খোলার কথা বলে কেন্দ্র। এর উদ্দেশ্য একটাই— কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান মুখ খুললেই, বালুচ-গিলগিট অশান্তির প্রসঙ্গ এনে ইসলামাবাদের উপর পাল্টা চাপ বাড়ানো। আজ
সেই সূত্র ধরেই প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের অস্বস্তি উস্কে দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্যে বলেন, ‘‘আমি বালুচিস্তান, গিলগিট, ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বিষয়ে বলতে চাই। এ নিয়ে ভারত সরব হওয়ায় গত কয়েক দিনে ওখানকার অনেক লোক আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।’’ অশান্ত কাশ্মীরের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের বিরোধিতায় মুখ খোলার চেষ্টা করেছে। প্রথমে নয়াদিল্লি বিষয়টি নিয়ে সে ভাবে গুরুত্ব না দিলেও, পাক প্রশাসনের অতিসক্রিয়তায় পাল্টা আক্রমণের কৌশল নেয় কেন্দ্র।
তবে সরকারের এই কৌশল নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত কূটনীতিকমহল। যে ভাবে মোদী সরকার বালুচ তাস খেলতে শুরু করেছে তাতে অশনি সঙ্কেত দেখছে কূটনীতিকদের একাংশ। তাঁদের মতে, বালুচ প্রশ্নে এ ভাবে সরব হওয়ায় পাকিস্তান সেখানে অশান্তির জন্য ভারতকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। ঠিক যে ভাবে বিবৃতি দিয়ে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রক বালুচিস্তানের অশান্তির দায় চাপিয়েছে র’-য়ের ওপর।
কিন্তু কূটনীতিকদের অন্য আর একটি অংশের মতে, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান যদি সরব হতে পারে তা হলে বালুচ নিয়ে মোদী সরকার পদক্ষেপ সঠিক কেন নয়! তাঁদের মতে, কাশ্মীর ও বালুচ সমস্যা যে একমাত্র
আলোচনার মধ্যেই মিটতে পারে তা বুঝতে হবে দু’দেশকেই। তবেই সমাধান সূত্র বেরোতে পারে।
কূটনীতিকদের মতে, এ হেন কৌশলের পিছনে কারণ আরও একটা আছে। নভেম্বরে সার্কের বৈঠক। তার আগে সন্ত্রাস প্রশ্নে দর কষকাকষির প্রশ্নে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতেই সুর চড়াতে শুরু করেছে নয়াদিল্লি।
বুরহান ওয়ানির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যখন কাশ্মীর অশান্ত হয়ে ওঠে, তখন সেই জঙ্গিকে শহিদের মর্যাদা দেন পাক প্রধানমন্ত্রী। শরিফের সেই অবস্থানে ভারত যে ক্ষুব্ধ তা আজ স্পষ্ট করে দেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘পেশোয়ারের স্কুলে যখন জঙ্গি হামলা হয়, ভারত চোখের জল ফেলে। আর পাকিস্তান সেখানে জঙ্গিদের মহিমান্বিত করছে।’’
বুরহানের মৃত্যুর পরে প্রতিবাদে পথে নেমেছিল কাশ্মীরের যুব সমাজ। কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে আগেও মুখ খুলেছেন মোদী। আজও সেই যুব সমাজকে ফের বার্তা দিয়েছেন তিনি। অশান্তির রাস্তা ছেড়ে রাজ্যের উন্নয়নে মন দেওয়াটাই যে একমাত্র রাস্তা— বলছেন মোদী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy