গুরমিত রাম রহিম সিংহ
সন্ন্যাসী, তবু গেরুয়া কাপড়ে তাঁকে দেখা যায় না কখনওই। বরং গোলাপি রঙের বাহারি জোব্বা গায়ে চাপিয়ে কখনও তিনি মিউজিক ভিডিওয় নাচছেন, কখনও আবার ঝলমলে পোশাকে প্রকাণ্ড মোটরবাইকে চেপে ঢুকে পড়েছেন ধর্মসভায়। বাস্তব ও ফিল্মের অদ্ভূত মিশেল গুরমিত রাম রহিমের জন্ম ১৯৬৭ সালে রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগরে।
১৯৪৮ সালে ডেরা সচ্চা সৌদার প্রতিষ্ঠা করেন মাস্তা বালুচিস্তানি। গুরমিত দায়িত্ব পান ১৯৯০ সালে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৩ বছর। সে বছর তৎকালীন ডেরা-প্রধান সতনাম সিংহ একটি সভায় তাঁকে প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেন। তিনিই তৃতীয় ডেরা প্রধানের নাম দেন ‘গুরমিত রাম রহিম’। হাই স্কুলের গণ্ডি পেরোনো এই ডেরা প্রধানের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। পরে একটি মেয়েকে দত্তক নেন তিনি। প্রত্যেকেই বাবার মতো নামের শেষে লেখেন ‘ইনসান’।
আরও পড়ুন: বাবার ‘গুফা’য় ২০০ শিষ্যা!
প্রতিষ্ঠানের বাড়বাড়ন্তের সঙ্গে-সঙ্গেই বাড়তে থাকে গুরমিতের জনপ্রিয়তা। ‘লভ চার্জার’ নামে একটি মিউজিক ভিডিও আন্তর্জাতিক স্তরে ‘খ্যাতি’ এনে দেয় তাঁর। গুরমিতের এই ভিডিও সম্পর্কে গত বছর মার্কিন মুলুকে ‘দ্য টুনাইট শো’ নামে একটি অনুষ্ঠানে সঞ্চালক জিমি ফ্যালকন মজা করে বলেছিলেন, ‘ভুলেও শুনবেন না’ গানের তালিকায় এটি বোধহয় শীর্ষে। গুরমিত অবশ্য দাবি করেছিলেন, মিউজিক ভিডিওটির ৩০ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে তিন দিনে। শতাধিক রক শো-তে ‘রিলিজিয়াস রক’ গেয়েছিলেন তিনি। দু’টি ফিল্মে মূল চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন গুরমিত। ‘মেসেঞ্জার অব গড’ (এমএসজি) ও ‘মেসেঞ্জার অব গড-২’। সহকারী-লেখক হিসেবে তিনি ছবি দু’টির চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন।
গুরমিতের অগাধ প্রতিপত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগেই। সিরসায় ৮০০ একর জমিতে তাঁর প্রকাণ্ড আশ্রম। তা ছাড়া বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শাখা সংগঠন অগুনতি। সম্পত্তি নিয়ে ধর্মগুরুর বক্তব্য, সবই তিনি উপার্জন করেছেন ওই সব মিউজিক ভিডিও, ফিল্ম থেকে। তা ছাড়া ব্যবসা তো রয়েইছে। তাঁর ‘এমএসজি’ ব্র্যান্ডের ‘স্বদেশি ও জৈবসারজাত’ জিনিসের ‘সুখ্যাতি’ নাকি দেশজোড়া।
ডেরা সচ্চা সৌদার দাবি, পঞ্জাব-হরিয়ানার গাঁ-গঞ্জের অলিগলিতে তাদের ভক্ত। ভোট-ব্যাঙ্ক ধরতে তাই রাজনৈতিক দলগুলোও গুরমিতকে ‘ভক্তি’ করে চলে। শুরুর দিকে কংগ্রেস-ঘেঁষা বলে শোনা গেলেও ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচন বা পরে হরিয়ানা ভোটে তাকে বিজেপির হয়ে প্রচার করতে দেখা গিয়েছে। ডেরা সচ্চার ‘স্বচ্ছতা অভিযানে’ মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর-সহ বহু ভিভিআইপি নেতার দেখা মিলেছে। শোনা যায়, বিহার ভোটে বিজেপির হয়ে প্রচার করতে ৩ হাজার ভক্তের একটি দল পাঠিয়েছিলেন ডেরা প্রধান। পঞ্জাবের বিজেপি-অকালি দলের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
যদিও বেআইনি অস্ত্র রাখা, ধর্ষণ, খুন, সাধুদের লিঙ্গচ্ছেদ— বহু অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। গুরু গোবিন্দ সিংহের সাজপোশাক নকল করে শিখদের তোপের মুখে পড়েন। ২০০৮-এ ডেরা সচ্চার শোভাযাত্রায় বিস্ফোরণ ঘটায় খালিস্তান লিবারেশন ফোর্স। সেই থেকে ‘জেড প্লাস’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গুরমিতের। বুলেটপ্রুফ গাড়িতে যাতায়াত করেন।
প্রশ্ন উঠছে, পঞ্চকুলার বিশেষ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরেও কি তিনি ‘রকস্টার বাবা’ই থাকবেন? শুক্রবার তাঁর সমর্থকদের তাণ্ডব দেখে ধন্দটা থেকেই গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy