মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
দেশে একটি মাত্র রাজ্যে ক্ষমতায় তারা। অথচ ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে প্রাপ্ত টাকার ভিত্তিতে বিজেপির পরেই দু’নম্বরে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী বন্ড থেকে কোন দল কত টাকা পেয়েছে, সেই হিসেব প্রকাশ করেছে। সেই তথ্য থেকেই দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-এর এপ্রিল থেকে ২০২৪-এর জানুয়ারি পর্যন্ত ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে টাকা পাওয়ার তালিকায় দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পরেই তৃণমূলের ভাঁড়ারে নির্বাচনী বন্ড থেকে পাওয়া টাকার পরিমাণ বিপুল বেড়েছে।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, এই বন্ড বাবদ বিজেপির ঘরে ঢুকেছে ৬ হাজার ৬০ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা। তার পরেই রয়েছে তৃণমূল। তাদের আয় ১৬০৯ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। শতবর্ষ প্রাচীন ও কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস রয়েছে তৃণমূলেরও পিছনে। তাদের আয় ১৪২১ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। তৃণমূলের মতোই মাত্র একটি রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের বিআরএসের পকেটে এই বন্ড থেকে ঢুকেছে ১২১৪ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। দিল্লি ও পঞ্জাবে ক্ষমতায় থাকা অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দলের প্রাপ্তি মাত্র ৬৬ কোটি টাকা। দেশের প্রায় প্রতিটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দলই এই বন্ড থেকে কিছু না কিছু টাকা ঘরে তুলেছে। ব্যতিক্রম সিপিএম। প্রথম থেকে এই বন্ড ব্যবস্থার বিরোধিতা করে বিষয়টি নিয়ে ৬ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টে লড়াই চালিয়েছে তারা। সে কারণে তাদের ঘরে টাকা ঢোকেনি বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনই।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-র অক্টোবর-নভেম্বর থেকে ২০২১-এর জানুয়ারি পর্যন্ত তৃণমূল ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে ৪৩.৪ কোটি টাকা আয় করেছিল। রাজ্যে ২০২১-এর মার্চের একেবারে শেষ ভাগ থেকে বিধানসভা ভোটপর্ব শুরু হয়। সেই ভোটপর্বের মধ্যেই এপ্রিলে তৃণমূল নির্বাচনী বন্ড থেকে ৫৫ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা আয় করেছিল। মে মাসে ভোটের ফল প্রকাশের পরে রাজ্যে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। তার দু’মাসের মধ্যে জুলাইয়ে তৃণমূল ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে আয় করে ১০৭ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এই নির্বাচনী বন্ড চালু করার সময় দাবি করেছিলেন, নির্বাচনে কালো টাকা রুখতে এই ব্যবস্থা কাজে লাগবে। কিন্তু তাঁর সেই দাবি নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছিল সিপিএম। সরব হয়েছিল এডিআর-সহ একাধিক সংগঠনও। নির্বাচন কমিশনের তথ্য থেকে দেখা গিয়েছে, তালিকা খতিয়ে দেখা যাচ্ছে, বন্ড কেনায় শীর্ষে রয়েছে লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’। তারা মোট ১,৩৬৮ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। একটি সূত্রের দাবি, বিতর্কিত এই লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর ছেলে চার্লস জন্স মার্টিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন কয়েক বছর আগে।
বন্ড কেনার নিরিখে দু’নম্বরে রয়েছে দক্ষিণের ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রেড্ডির সংস্থা ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’। তারা ৯৬৬ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। মহারাষ্ট্রের ‘কুইক সাপ্লাই চেন প্রাইভেট লিমিটেড’ কিনেছে ৪১০ কোটি টাকার বন্ড। ৩৯৫ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে ‘হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড’। তালিকায় যেমন বৃহৎ টেলিকম সংস্থা এয়ারটেল রয়েছে, তেমনই রয়েছে উত্তরাখণ্ডের সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং। পাশাপাশিই উঠে এসেছে আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য। বন্ড কেনার নিরিখে শীর্ষে থাকা সংস্থাগুলির মধ্যে ১৪টিতেই গত কয়েক বছরে ‘অভিযান’ চালিয়েছে সিবিআই, ইডি, আয়কর বিভাগ। তার পরেই ওই সংস্থাগুলি বিপুল অঙ্কের বন্ড কিনেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy