Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪
Udaipur Royal Rift

মহারানা প্রতাপের পরিবারে ‘গৃহযুদ্ধ’, রাজবাড়ি থেকে উড়ে এল পাথর, জারি কার্ফু! কী নিয়ে এত লড়াই?

সম্পত্তির ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি লড়াইয়ে জড়িয়েছেন ইতিহাসখ্যাত মহারানা প্রতাপের পরিবারের সদস্যেরা। হিংসা ঠেকাতে উদয়পুরে কার্ফু জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৯
Share: Save:
০১ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

রানা প্রতাপের পরিবারে ভাঙন। সম্পত্তির বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ধুন্ধুমার। ঐতিহ্যশালী রাজবাড়ির সামনে চলল দেদার পাথরবৃষ্টি। ফলে অভিষেকের পর বাপ-ঠাকুর্দার আমলের প্রাসাদে ঢুকতেই পারলেন না নতুন রাজা। পরিস্থিতি সামলাতে রীতিমতো হিমসিম খেল মরু রাজ্যের পুলিশ।

০২ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

রাজপরিবারের এ হেন ‘গৃহযুদ্ধে’ রাতারাতি খবরের শিরোনামে চলে এসেছে রাজস্থানের মেবার। সম্পত্তির দাবিদাওয়াকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমেছেন কাকা-ভাইপো। পাশাপাশি, এতে লেগেছে রাজনীতির রং। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় আপাতত উদয়পুর রাজবাড়িতে বন্ধ করা হয়েছে পর্যটকদের প্রবেশও।

০৩ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

সম্প্রতি মেবারের সিংহাসন পান রানা প্রতাপের বংশধর বিশ্বরাজ সিংহ। ঘটা করে তাঁর রাজতিলকের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। সেই ছবি হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। রাজা হওয়ার পর উদয়পুর রাজবাড়ির ভিতরে থাকা মন্দিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। আর তখনই তাঁকে প্রাসাদে ঢুকতে বাধা দেন কাকা অরবিন্দ সিংহ।

০৪ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

বর্তমানে উদয়পুর রাজবাড়ির সম্পত্তির দেখভালের দায়িত্বে থাকা পরিচালন পর্ষদের মাথায় রয়েছেন অরবিন্দ। বিশ্বরাজের অভিযোগ, সেই ক্ষমতাতেই আইন ভেঙে তাঁকে রাজবাড়ির ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না কাকা। যদিও তা মানতে রাজি নন অরবিন্দ পুত্র লক্ষ্যরাজ সিংহ। রাজবাড়ির দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে হিংসা ঠেকাতে উদয়পুরে কার্ফু জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

০৫ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

উদয়পুর প্রশাসন সূত্রে খবর, মেবার রাজবাড়ির এই অন্তর্দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় সর্বশেষ রানা ভগবন্ত সিংহের সময় থেকে। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত রাজপুত রাজ্যটির রাজা ছিলেন তিনি। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর রাজবাড়ির যাবতীয় সম্পত্তি লিজ়ে পরিচালন পর্ষদের হাতে তুলে দেন ভগবন্ত। সেখানে থেকে অবশ্য মাসে মাসে ভাড়া পেতেন তিনি।

০৬ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

পরিচালন পর্ষদ রাজপরিবারের আর্থিক সংস্থান পূরণের জন্য মেবারকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলে। আর তাই রানাদের ব্যবহৃত যাবতীয় সামগ্রী নিয়ে তৈরি হয় সংগ্রহশালা। ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের (আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া) আওতায় চলে যায় মেবারের ঐতিহাসিক সৌধ ও দুর্গ।

০৭ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

ভগবন্ত সিংহের দুই পুত্রের মধ্যে বড় জনের নাম মহেন্দ্র। বাবার এ হেন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি তিনি। এতে রাজপরিবারের আয় কমবে বলে মহেন্দ্রর আশঙ্কা ছিল। ফলে ভগবন্তের সিদ্ধান্তের চরম বিরোধিতা করেন তিনি। শুধু তাই নয়, বাবার বিরুদ্ধে ১৯৭৩ সালে আদালতে মামলাও ঠুকে দেন মহেন্দ্র।

০৮ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

মেবার রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠ পুত্রই সিংহাসনের অধিকারী। রাজতিলকের পর পরিচালন পর্ষদের দায়িত্বও থাকে তাঁর হাতে। মহেন্দ্র ‘অবাধ্য’ হওয়ায় রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে এই নিয়ম বদলে দেন ভগবন্ত। পর্ষদের প্রধান (এগজ়িকিউটর) হিসাবে ছোট ছেলে অরবিন্দকে নিযুক্ত করেন তিনি।

০৯ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

মহেন্দ্রকে ‘শিক্ষা’ দিতে এখানেই থেমে থাকেননি ভগবন্ত। তাঁকে সম্পত্তি এবং পরিচালন পর্ষদ থেকে এক রকম ধাক্কা দিয়ে বার করে দেন। এর পর থেকেই উদয়পুর রাজবাড়ি, অর্থাৎ ‘শম্ভু নিবাস’-এ পাকাপাকি ভাবে পরিবার নিয়ে থাকতে শুরু করেন অরবিন্দ সিংহ। এই প্রাসাদ অবশ্য পরিচালন পর্ষদের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।

১০ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

উদয়পুর রাজবাড়িতে এখনও পর্যন্ত বসবাস করেছেন পাঁচ থেকে সাত জন রানা। ভাই অরবিন্দ রাজা না হওয়া সত্ত্বেও ওই সম্পত্তি ভোগ করায় মহেন্দ্রর পরিবারে অসন্তোষ জমা হতে শুরু করে। তাঁর ছেলে বিশ্বরাজ পরিবার নিয়ে থাকেন ‘সামোর বাগ’-এ। এটিও মেবার রাজপরিবারের সম্পত্তি। এর দেখভাল পরিচালন পর্ষদ করে না।

১১ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

২০২১ সালে ৩৭ বছর পর মহেন্দ্রর করা মামলার রায় ঘোষণা করে উদয়পুর আদালত। সেখানে মেবার রাজপরিবারের সদস্যদের চার বছর করে শম্ভু নিবাসে থাকার অনুমতি মেলে। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন অরবিন্দ। কোনও অবস্থাতেই রাজবাড়ি ছাড়তে রাজি নন তিনি।

১২ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

অরবিন্দর যুক্তি, মেবার রাজপরিবারের যাবতীয় সম্পত্তির প্রধান রক্ষক হিসাবে তাঁকেই নিযুক্ত করেছেন ভগবন্ত সিংহ। ফলে এই সম্পত্তি ভোগ করার একমাত্র অধিকারী তিনি এবং তাঁর পরিবার। অরবিন্দের করা মামলায় আপাতত স্থগিতাদেশ জারি করেছে হাই কোর্ট। এর জেরে ২০২২ সালে শম্ভু নিবাসে ঢুকতে পারেননি মহেন্দ্র পুত্র বিশ্বরাজ।

১৩ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

পরবর্তী সময়ে বিজেপির টিকিটে উদয়পুরের নাথদ্বারার বিধায়ক নির্বাচিত হন বিশ্বরাজ। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা পাঁচ বারের বিধায়ক সি পি জোশীকে সাত হাজারের বেশি ভোটে হারিয়ে দেন তিনি। চলতি বছরে রাজতিলক সম্পন্ন হয় তাঁর। এর পরই নিয়ম মেনে ধনীমাতা এবং একনাথ লিঙ্গের মন্দির দর্শনের ইচ্ছাপ্রকাশ করেন তিনি।

১৪ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

উল্লেখ্য, এই দু’টি মন্দিরই রয়েছে উদয়পুর রাজবাড়ির মধ্যে। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, শম্ভু নিবাস অরবিন্দের নিয়ন্ত্রণে থাকায় সদ্য রাজা হওয়া ভাইপো বিশ্বরাজকে সেখানে ঢুকতে দিতে চাইছেন না তিনি। কারণ নতুন রাজার পা শম্ভু নিবাসে পড়লে পরিচালন পর্ষদের ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

১৫ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

কিন্তু সম্পত্তির ভাগ ছাড়তে নারাজ বিশ্বরাজও। দলবল নিয়ে উদয়পুর রাজবাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন তিনি। অভিযোগ, তখনই রাজবাড়ির ভিতর থেকে শুরু হয় পাথরবৃষ্টি। পাল্টা প্রত্যাঘাত শুরু করেন বিশ্বরাজের সমর্থকেরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে কোনও মতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে রাজস্থান পুলিশ।

১৬ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

এই অবস্থায় পাল্টা চাপ তৈরি করতে রাজবাড়ি থেকে কিছুটা দূরে জগদীশ চকে ধর্নায় বসেন বিজেপি বিধায়ক বিশ্বরাজ। খবর পেয়ে ছুটে আসেন স্থানীয় কালেক্টর। কোনও মতে বুঝিয়ে তাঁকে নিরস্ত করেন তিনি। কালেক্টরের কথায় শেষ পর্যন্ত ধর্না ছেড়ে নিজের বাড়িতে ফিরে যান বিশ্বরাজ। আর সঙ্গে সঙ্গেই কার্ফু জারি হয় উদয়পুরে।

১৭ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

অন্য দিকে অরবিন্দের হয়ে মাঠে নেমেছেন তাঁর ছেলে লক্ষ্যরাজ সিংহ। জবরদস্তি তাঁদের সম্পত্তিতে ঢোকার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, খুড়তুতো ভাই বিশ্বরাজ বিধায়ক হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনের অপব্যবহারের অভিযোগও করেছেন লক্ষ্যরাজ।

১৮ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

মেবারের রাজপরিবারের সদস্যেরা নিজেদের শ্রীরামের উত্তরসূরি বলে দাবি করে থাকেন। এই রাজবংশের নাম ‘সিসৌদিয়া’। মেবারের ৪৮তম রাজা ছিলেন মহারানা উদয় সিংহ। তাঁরই পুত্রের নাম মহারানা প্রতাপ সিংহ।

১৯ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

মহারানা প্রতাপ কখনই মুঘল বাদশা আকবরের বশ্যতা স্বীকার করেননি। ১৫৭৬ সালের ১৮ জুন হলদিঘাটির যু্দ্ধে মুঘল ফৌজের সঙ্গে লড়াই করেন তিনি। ভারতীয় ইতিহাসে এই ঘটনা আলাদা স্থান পেয়ে এসেছে।

২০ ২০
Udaipur royal rift why Maharana Pratap descendants fighting know the reasons

সেই মহারানা প্রতাপের উত্তরপুরুষদের সম্পত্তি-বিবাদ উদয়পুর প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। পরিচালন পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ স্বাধীন কোনও সংস্থার হাতে না গেলে বিবাদ মেটার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন তারা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy