কাজিরাঙার অন্যতম আকর্ষণ সোনালি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। —নিজস্ব চিত্র।
১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় উদ্যান হওয়ার অর্ধশতবর্ষে পা দিল অসমের গৌরব, তথা দেশে সর্বাধিক একশৃঙ্গ গন্ডার ও এশীয় জলমহিষ থাকা অরণ্য কাজিরাঙা। অবশ্য সংরক্ষিত অরণ্য হিসেবে তার ইতিহাস ১১৬ বছরের। আজ কাজিরাঙার জাতীয় উদ্যান হওয়ার ৫০ বছরের অনুষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করা প্রাক্তন বনকর্মীদের সঙ্গে স্মৃতিচারণ, অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া হলেও কাজিরাঙাকে শিকারের জঙ্গল থেকে সংরক্ষিত অঞ্চল করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া তিন জনের পরিবার ব্রাত্যই থাকলেন।
এক শিকারির হাত ধরেই শিকার-উদ্যানের জাতীয় উদ্যান হয়ে ওঠার সূত্রপাত। তখন লর্ড কার্জন ব্রিটিশ ভাইসরয়। লেডি কার্জন আসেন অসম সফরে। তাঁকে কাজিরাঙার জঙ্গল ঘুরিয়ে দেখানোর ভার পান নিগনা (বাপীরাম) হাজরিকা নামে এক শিকারি। জঙ্গল ঘোরানোর পরে নিগনা লেডি কার্জনের কাছে ওই জঙ্গলে থেকে গন্ডারদের শিকার না করে সংরক্ষণ করার অনুরোধ জানান। শিকারির মুখে সংরক্ষণের অনুরোধ পেয়ে বেজায় খুশি হন লেডি কার্জন। স্বামীকে অনুরোধ করেন। ওই বছরই প্রস্তাবিত সংরক্ষিত এলাকা ও ১৯০৮ সালে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তকমা পায় কাজিরাঙা। স্বাধীনতার পরে ১৯৫০ সালে কাজিরাঙা অভয়ারণ্যের মর্যাদা পায়। ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত হয় কাজিরাঙা। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের শিরোপা মেলে ১৯৮৫ সালে। মাত্র ৪২৫ বর্গ কিলোমিটারের আয়তন থেকে বাড়তে বাড়তে এখন ১০টি সংযোজিত এলাকা-সহ কাজিরাঙার আয়তন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩৯ বর্গ কিলোমিটারে।
উল্লেখ্য, লেডি কার্জন নিগনা শিকারির কথা তাঁর ডায়েরিতে লিখে গিয়েছিলেন। ২০০৫ সালে কার্জনের নাতি, ব্যারন নিকোলাস মোসলে নিজে কাজিরাঙায় এসে বলরামের নাতিকে সংবর্ধনা দেন। কিন্তু উদ্যানের পঞ্চাশ বছরের পূর্তিতে ব্রাত্যই থাকলেন নিগনির পরিবার।
১৯৫০ সালে কাজিরাঙা সংরক্ষিত অরণ্য হল। কিন্তু সেখানে তখন কার্বি গ্রাম। ১৯৫৪ সালে সেন্ট্রাল বা কোহরা রেঞ্জের জঙ্গলের জমি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেয় কার্বিদের ১১টি পরিবার। গ্রামপ্রধান সারবর হাঞ্চের নির্দেশে খয়া হাঞ্চে ১১টি পরিবারকে নিয়ে কার্বি পাহাড়ের দিকে যাত্রা করেন। তরাপুং জলপ্রপাতের কাছে খয়া ও তাঁর সঙ্গীরা কার্বি গ্রাম স্থাপন করেন। সেই তরাপুংয়ে এখন ১৩টি গ্রাম রয়েছে। বাকি সঙ্গীরা মারা গেলেও এখনও অতিবৃদ্ধ খয়া তরপুংয়েই থাকেন। নিঃস্বার্থ ভাবে কাজিরাঙার জমি ছেড়ে দিয়ে সংরক্ষণের যে ভিত তৈরি করেছিলেন হাঞ্চেরা, ৫০ বছর পূর্তিতে তার কোনও স্বীকৃতি তাঁরা পেলেন না।
অন্য দিকে মহীচন্দ্র মিরি ছিলেন কাজিরাঙার প্রথম অসমিয়া বনকর্তা। ডিএফও এ জে ডব্লিউ মেলারয়ের আমলে অতিরিক্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার হিসেবে কাজিরাঙায় আসেন মিরি। বন দফতরের হাতে থাকা দু’টি হাতিকে জঙ্গল জরিপের কাজে লাগানোর চেষ্টা হলেও শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্যে ভয়ে কাজ করছিল না তারা। তখনই দক্ষ ও সাহসী মাহুত মুসাই মিরি সাহসী ও বড় হাতি গণেশ ও কৃষ্ণপ্রসাদকে নিয়ে মিরির কাছে হাজির হন। ওই চার জনের যুগলবন্দিতে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও ১৯৩৮ সালে কাজিরাঙার অর্ধেক জরিপের কাজ শেষ করেন। হন প্রথম অসমিয়া ডিএফও। কিন্তু ১৯৩৯ সালে কালাজ্বরে তাঁর মৃত্যু হয়। কাজিরাঙার ৫০ বছরে তাঁর পরিবার ব্রাত্য থাকলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy