Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Manipur Violence

জঙ্গি দমন অভিযান শুরুর পরেই নতুন করে হিংসা মণিপুরে, জিরিবামে গুলির লড়াই, নিহত অন্তত পাঁচ

কুকিদের অভিযোগ, হিংসা দমনের অজুহাতে মেইতেই প্রভাবিত পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তার ধীরে ধীরে পাহাড়ি এলাকায় জনজাতিদের জমি দখলের অভিযান শুরু করা হচ্ছে।

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০২
Share: Save:

প্রথমে ড্রোন হামলা। তার পর ক্ষেপণাস্ত্র হানা। গত এক সপ্তাহে মণিপুরে জঙ্গিদের এই জোড়া নাশকতা ঘুম কেড়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর। এই পরিস্থিতিতে শনিবার থেকে সম্ভাব্য জঙ্গি ডেরার সন্ধানে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে মণিপুর পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী। ধ্বংস করা হয়েছে জঙ্গিদের তিনটি বাঙ্কার। জঙ্গি দমন অভিযানের মধ্যেই জিরিবাম জেলায় দু’গোষ্ঠীর গুলির লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন অন্তত পাঁচ জন।

গত ১ এবং ১ সেপ্টেম্বর কাংপোকপি এবং পশ্চিম ইম্ফলে জেলায় বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোনের হামলায় নিহত হন দু’জন। আহত হত সাত জন। দু’টি ক্ষেত্রেই হামলা হয় মেইতেই জনগোষ্ঠীর এলাকায়। মণিপুর সরকারের দাবি, কুকি জঙ্গিরাই হামলা চালায়। শুক্রবার বিকেলে বিষ্ণুপুর জেলার মৈরাংয়ে ফিওয়াংবাম লেইকাই এলাকায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মৈরেম্বাম কৈরেং সিংহের বাড়ির চত্বরে আছড়ে পড়ে ক্ষেপণাস্ত্র! তার আঘাতে আর রে রাবেই (৭০) নামে স্থানীয় এক বয়স্ক পুরোহিতের মৃত্যু হয়। কয়েক জন জখম জন।

যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র ফাটে, সেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছিল। মেইতেইরা দাবি করছে কুকিরাই ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। পুলিশের দাবি, স্থানীয় ভাবে তৈরি হলেও উন্নত প্রযুক্তির ওই ক্ষেপণাস্ত্র ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আঘাত হানতে পারে। কুকিরা অবশ্য কয়েকটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে পাল্টা দাবি করে, মেইতেই সশস্ত্র বাহিনী আরাম্বাই টেঙ্গলের যোদ্ধাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে মেইতেই এলাকায় আছড়ে পড়ে ওই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে উত্তেজনা বাড়ছে রাজ্যে।

এই আবহে বিষ্ণুপুর এবং চূড়াচাঁদপুর এলাকার বিভিন্ন এলাকায় শনিবার সকাল থেকে তল্লাশি অভিযান শুরু হওয়ার তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কুকি সংগঠনগুলির অভিযোগ, পুলিশ এবং মেইতেই জঙ্গিরা সংগঠিত ভাবে এলাকা দখলের অভিযানে নেমেছে। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে মণিপুর পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিষ্ণুপুর জেলার মুয়ালসাং গ্রামে দু’টি এবং চুরাচাঁদপুরের লাইকা মুয়ালসাউ গ্রামে একটি বাঙ্কার ধ্বংস করা হয়েছে। সেগুলি কুকি জঙ্গিদের ডেরা বলেই দাবি পুলিশের।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে মণিপুরে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত প্রায় দুশো জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়ার সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।

পরবর্তী সময়ে ইম্ফল হাই কোর্ট ওই বিতর্কিত নির্দেশ প্রত্যাহার করলেও শান্তি ফেরেনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। কারণ, কুকিদের মনে তৈরি হয়েছে নতুন আশঙ্কা। মূলত সমতল এলাকার বাসিন্দা মেইতেইরা মণিপুরের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। অন্য দিকে, কুকি, অঙ্গামি, লুসাই, নাগা, থাড়োয়াসের মতো প্রায় ৩০টি জনজাতি গোষ্ঠীর বাস পাহাড়ি এলাকায়। কুকিদের অভিযোগ, হিংসা থামানোর অজুহাতে মেইতেই প্রভাবিত পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তায় ধীরে ধীরে পাহাড়ি এলাকায় জনজাতিদের জমি দখলের অভিযান শুরু করা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Manipur Manipur Violence Drone Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE