মেরাংয়ে পড়ে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্রের অস্ত্র। ছবি: রয়টার্স।
রাইফেল, মেশিনগান তো ছিলই, জুড়েছিল বোমাবর্ষণও। এ বার সংঘর্ষ বিধ্বস্ত মণিপুরে শুরু হল ক্ষেপণাস্ত্র হানা। বিষ্ণুপুর জেলার মৈরাংয়ে ফিওয়াংবাম লেইকাই এলাকায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মৈরেম্বাম কৈরেং সিংহের বাড়ির চত্বরে আজ দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ আছড়ে পড়া ওই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আর রে রাবেই (৭০) নামে স্থানীয় এক বয়স্ক পুরোহিত মারা যান। কয়েক জন জখম হয়েছেন। দেশের মধ্যে এমন ক্ষেপণাস্ত্র হানার নজির আর নেই বলে জানিয়েছে সেনা।
যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র ফাটে সেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছিল। জনতা নিহত ব্যক্তির দেহ নিতে পুলিশকে বাধা দেয়। মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক এল সুশীন্দ্র এসে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। এর আগে সকালে তেরাখংসানবি গ্রামেও একই ভাবে রকেট আছড়ে পড়ে দু’টি বাড়ি ভাঙে। তবে ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
মেইতেইরা দাবি করছে কুকিরাই ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। পুলিশের দাবি, স্থানীয় ভাবে তৈরি হলেও উন্নত প্রযুক্তির ওই ক্ষেপণাস্ত্র ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আঘাত হানতে পারে। কিন্তু কুকিরা মেইতেইদের বেশ কিছু ভিডিয়ো পাঠিয়ে দাবি করে, আরাম্বাই টেঙ্গল বাহিনীর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে মেইতেই এলাকায় আছড়ে পড়ে ওই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে উত্তেজনা বাড়ছে রাজ্যে। মেইতেই বাহিনী ও পুলিশ কুকি এলাকা দখলে পুরোদমে অভিযান চালাচ্ছে। ফলে কুকিরা এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন। সরকার আগামী কাল সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তাৎক্ষণিক ভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে মেইতেই যৌথ মঞ্চ কোকোমি। ইম্ফলের রাস্তায় বহু ছাত্রছাত্রী-সহ হাজার হাজার মানুষ আজ হামলার প্রতিবাদে মানব শৃঙ্খল গড়ে বিক্ষোভ দেখায়। কোকোমি দাবি করে পাঁচ দিনের মধ্যে কুকিদের দমন না করতে পারলে রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।
এ দিকে, বিষ্ণুপুর ঘেঁষা কুকি অধ্যুষিত মোলসাং, লাইকা, গেলজাং লক্ষ্য করে চলে মেইতেইদের আক্রমণ। আত্মসমর্পণ করা ইউএনএলএফ জঙ্গিরা সরকারি রাইফেল, মেশিনগান ব্যবহার করে গুলি চালাতে থাকে। যোগ দেয় আরাম্বাই টেঙ্গল, মেইতেই লিপুন ও রাজ্য পুলিশের কমান্ডোরা। পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপে সংঘর্ষ থামলেও সন্ধ্যার পর থেকে বাফার জ়োনে চলছে সংঘর্ষ।
সেপ্টেম্বরের মধ্যে কুকি-মেইতেই আপসের চেষ্টা চালাচ্ছিল কেন্দ্র। সেই উদ্দেশ্যে সম্বিৎ পাত্র এসে সব মন্ত্রী-বিধায়কের সঙ্গে জরুরি বৈঠকও করেন। এনপিএফ বিধায়ক ডিংগাংলুং গাংমেইকে কুকি ও মেইতেইদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেই ফের আগের অবস্থায় ফিরে গেল পরিস্থিতি। সরকারের দাবি, বোঝাই যাচ্ছে যারা শান্তি কোনও ভাবে ফেরাতে চায় না, তারাই এই আক্রমণ শুরু করেছে। কোকোমির দাবি, গোটা ষড়যন্ত্রে আমেরিকা ও চিনের হাত রয়েছে। তারা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে পূর্ণ স্বচ্ছতা দাবি করে। ডিজিপি জানিয়েছেন, এমন বোমা-ক্ষেপণাস্ত্রের লড়াই ঠেকানোর পরিকাঠামো ও ক্ষমতা রাজ্য পুলিশের নেই। তাই এনএসজির সাহায্য চাওয়া হয়েছে। সেনাও বলছে, দেশের মধ্যে এই ভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হানার ঘটনা নজিরবিহীন। যে হেতু দূরের পাহাড় থেকে বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট, মর্টার ছোড়া হচ্ছে। তাই তা ঠেকাতে অপারগ সেনাও।
আবার সীমান্তের ও পারে মায়ানমারের মধ্যে নাগা জঙ্গি এনএসসিএন আইএমের সঙ্গে কুকি জঙ্গি কেএনএ (বর্মা)-র গুলির লড়াই হয়। দুই পক্ষেই হতাহতের খবর এলেও সংখ্যা নিশ্চিত নয়। প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরীর মতে, ‘‘অন্য কোনও দেশের মদত ছাড়া এই ধরনের হামলা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy