মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল আতিক এবং আশরফকে। ছবি: পিটিআই।
আততায়ীরা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি সেজে এসেছিল। বক্তব্য (বাইট) জানার সময়েই ‘গ্যাংস্টার’ আতিক আহমেদ এবং তাঁর ভাই আশরফকে গুলি করে খুন করা হয়। এমনটাই দাবি করল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল আতিক এবং আশরফকে। গাড়ি থেকে নেমে হাতকড়া পরা অবস্থায় পুলিশের ঘেরাটোপের মধ্যে থেকেই তাঁরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। আচমকা খুব কাছ থেকে দুই বন্দির মাথায় গুলি করা হয়। প্রয়াগরাজে আততায়ীদের হাতে আতিক এবং আশরফের খুনের ঘটনার সেই হাড়হিম করা সেই দৃশ্য প্রকাশ্যে আসতেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে সে রাজ্যের পুলিশের ভূমিকা।
দিন দুয়েক আগে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন আতিকের পুত্র আসাদ ও তাঁর সঙ্গী গুলাম। এ বার প্রকাশ্যে খুন করা হল আতিক ও তাঁর ভাইকেও। পুলিশ জানিয়েছে, হাসপাতালের পথে হাঁটতে হাঁটতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন আতিক এবং আশরফ। সেই সময় আচমকা ভিড়ের মধ্যে কয়েক জন তাঁদের মাথায় গুলি করে। পুলিশের দাবি, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল আততায়ী। সাংবাদিক সেজে এসেছিল তারা। ‘বুম’ ধরে ‘বাইট’ নেওয়ার ভান করে তারা গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু ঘটে গিয়েছে। আতিক এবং আশরফ দু’জনের হাতেই হাতকড়া ছিল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সময় আচমকা এক জন আতিকের মাথায় গুলি করে। আশরফ কিছু বুঝে ওঠার আগে তাঁকেও গুলি করা হয়। ওঁরা মাটিয়ে পড়ে যাওয়ার পরেও গুলি করতে থাকে আততায়ীরা।’’
প্রকাশ্যে আসা ওই মুহূর্তের ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, মাথায় গুলি লাগার পরেই সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আতিক এবং আশরফ। তাঁদের ঘিরে ধরে গুলি চালাতে চালাতে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে থাকে আততায়ীরা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দু’জনের। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এক কর্তা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, এই ঘটনায় আরও দু’জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জন সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের প্রতিনিধি। অন্য জন পুলিশেরই এক কনস্টেবল। আতিক এবং তাঁর ভাইকে খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারি বিবৃতি জারি করে তাঁদের নাম-পরিচয় এখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। সার্কল অফিসার শ্বেতব পাণ্ডে বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মধ্যেই ছিলেন তিন জন। খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। তিন জনকেই ধরেছে পুলিশ।’’
গত ১৩ এপ্রিল আসাদের মৃত্যুর পর থেকেই ভুয়ো সংঘর্ষের অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় হয়েছে জাতীয় রাজনীতি। পুলিশের পাল্টা দাবি, আসাদরাই প্রথমে আক্রমণ চালিয়েছেন। বাধ্য হয়েই পাল্টা গুলি চালাতে হয় তাদের। তা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে শনিবার ছেলের শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকার কথা জানিয়ে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন আতিক। কিন্তু তাঁর আইনজীবী মণীশ খন্না সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, ১৪ এপ্রিল অম্বেডকর জয়ন্তীর ছুটি থাকার কারণে আতিকের আবেদনপত্রটি মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়। নিয়ম মেনে সেই কারণেই আতিক ও তাঁর ভাইকে মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ছেলের শেষকৃত্যের দিন পুলিশের সামনে খুন হয়ে গেলেন আতিকও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy