Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

অপহৃত শিশুকে ধর্ষণ করে মুণ্ডচ্ছেদ, ধৃত ৩

বছর তিনেক ধরে মেয়েকে নিয়ে ঝালদায় বাপের বাড়িতে থাকেন ওই যুবতী।

ধৃত দুই অভিযুক্ত রিঙ্কু শাহ ও কৈলাস কুমার। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী

ধৃত দুই অভিযুক্ত রিঙ্কু শাহ ও কৈলাস কুমার। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০৭
Share: Save:

প্ল্যাটফর্মে ঘুমন্ত মায়ের কোল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একরত্তি মেয়েটিকে। ২৯ জুলাই তার ধড় মিলেছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত মাথার হদিস নেই। পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা তিন বছরের ওই শিশুকে অপহরণের পরে, ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে তিন জন ধরা পড়েছে। ধৃতদের মধ্যে সেই লোকটিও রয়েছে, যার কথায় ‘ভরসা করে’ পুরুলিয়া থেকে ঝাড়খণ্ডের টাটানগর স্টেশন পর্যন্ত গিয়েছিলেন মেয়েটির মা। বছর বাইশের স্বামীবিচ্ছিন্না সেই যুবতী বৃহস্পতিবার ঝালদায় ফিরে বলেছেন, ‘‘ওরা যেন শাস্তি পায়!’’

বছর তিনেক ধরে মেয়েকে নিয়ে ঝালদায় বাপের বাড়িতে থাকেন ওই যুবতী। সম্প্রতি নাম ভাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে ফোনে আলাপ করে ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জের মনু মণ্ডল। ‘ঘনিষ্ঠতা’ বাড়ে। যুবতীর দাবি, কয়েক দিনের মধ্যে মনু তাঁকে নতুন করে সংসার পাতার প্রস্তাব দেয়, শিশুকন্যাকে নিয়েই। ২৩ জুলাই বছর উনত্রিশের মনু পৌঁছয় ঝালদায়। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে বলে মা ও মেয়েকে নিয়ে যায় টাটানগরে। যদিও যুবতী জানান, যে বাড়িতে মনু তাঁদের নিয়ে যায়, তার সদর দরজায় তালা ছিল।

২৪ জুলাই রাতে টাটানগর স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে ঘুমিয়ে পড়েন মা-মেয়ে। ঘুম ভেঙে যুবতী দেখেন, মেয়ে নেই। সে কথা বলায় মনুর হাবভাবে তাঁর সন্দেহ বাড়ে। যুবতী বলেন, ‘‘ও বলছিল, রেল পুলিশের কাছে গেলে হয়রানি হবে। কিন্তু বুঝেছিলাম, ফাঁদে পড়েছি।’’ চেঁচিয়ে লোক জড়ো করেন তিনি। যান রেলপুলিশের কাছে। সঙ্গে যায় জনতা। মনুকেও যেতে হয়।

প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন প্রান্তে লাগানো সিসিটিভির ফুটেজে রেলপুলিশ দেখতে পায়, বারমুডা পরা এক জন কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে শিশুটিকে। সেই সূত্রে গ্রেফতার করা হয় টেলকো থানার কাশিডির রিঙ্কু শাহ ও কৈলাস কুমারকে। ২০০৮ সালে রিঙ্কুর বিরুদ্ধে এক বার শিশু চুরির অভিযোগ উঠেছিল। সে বার বছর তিনেক জেলও খেটেছিল সে।

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, রিঙ্কুর বছর ষোলোর এক মেয়ে-সহ তিন সন্তান রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে থাকে না সে। রিঙ্কুর মা পুলিশকর্মী। গিরিডিতে কর্মরত। কৈলাসের বাবা সিআরপির জওয়ান। তিনি কর্তব্যরত কাশ্মীরের পুলওয়ামায়। শিশুটির মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ধরা হয় মনুকেও। এখন তিন জনেই জামশেদপুরের ঘাঘিডি জেলে রয়েছে।

রেল পুলিশের এসপি (জামশেদপুর) এহতেশাম ওয়াকারিবের দাবি, জেরায় রিঙ্কু ও কৈলাস তাঁদের জানিয়েছে, স্টেশন থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় শিশুটিকে। তার পরে খাট থেকে পড়ে যায় বাচ্চাটি। যন্ত্রণায় কাঁদতে শুরু করে। কান্না থামাতে না পেরে, মাথা কেটে তাকে খুন করা হয়।

২৯ জুলাই ধৃতদের নিয়ে গিয়ে টেলকো থানার রামাধীন বাগানের কাছে, একটি খাঁড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় প্লাস্টিক ব্যাগে ভরা শিশুটির ধড়। ঘটনা জেনে খেপে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জনরোষ থেকে রিঙ্কু, কৈলাসকে বাঁচায় পুলিশ। প্রশিক্ষিত কুকুর নিয়ে চলে তল্লাশি। তবে এ দিন পর্যন্ত মাথার সন্ধান মেলেনি।

শিশুটির মায়ের পাশে আইনি সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে ‘বহুজন ক্রান্তি মোর্চা’ নামে একটি সংগঠন। তাদের তরফে কাশিফ রাজা সিদ্দিকি বলেন, ‘‘প্ল্যাটফর্ম থেকে যখন বাচ্চাটাকে অপহরণ করা হল, তখন রেল পুলিশ কী করছিল?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jamshedpur Arrest Rape Murder Child Rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy