গোটা বিশ্বে ট্যাটু এখন আত্ম-পরিচয়ের অন্যতম মাধ্যম। বিভিন্ন দেশে যখন বাড়ছে ট্যাটুর জনপ্রিয়তা, তখন উল্টো পথে হাঁটছে কাশ্মীর। উপত্যকার যুবসমাজের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, ট্যাটু মুছে ফেলার প্রবণতা। সবচেয়ে বেশি মুছে ফেলা হচ্ছে একে-৪৭-এর ট্যাটু। কাশ্মীরের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের মতে, গত কয়েক বছরে উপত্যকার যুব সমাজের মানসিকতায় কিছু বদল এসেছে, শরীর থেকে উল্কি অপসারণ তারই প্রতিফলন মাত্র।
শ্রীনগরের ট্যাটু ক্লিনিকগুলির সামনে প্রায় রোজই অল্পবয়সিদের উপচে পড়া ভিড়। তবে তা প্রিয় দল, মতাদর্শের প্রতীক, বা প্রিয় জিনিসের উল্কি শরীরে আঁকার জন্য নয়, বরং তা মুছে ফেলার জন্য লম্বা লাইন। ট্যাটু মোছার কাজ করেন শহরের এমন এক সুপরিচিত ব্যক্তি জানিয়েছেন, গত চার বছরে তিনি এক লক্ষের বেশি ট্যাটু মুছে ফেলেছেন। এই ট্যাটু মোছার প্রবণতা আরও বাড়ছে। তরুণ-যুবকদের মধ্যে এমন প্রবণতায় তিনি রীতিমতো অবাক। তাঁর কথায়, ‘‘মাঝে মাঝে মনে হয়, ট্যাটু মোছাটা এখানে একটা আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। যাঁরা ট্যাটু মুছতে আসছেন, তাঁদের অনেকেই আমার কাছে আফসোস করেছেন এই বলে, ‘কেন যে এই ট্যাটু করিয়েছিলাম’।’’ ওই ব্যক্তির মতে, ফ্যাশন বা বিদ্রোহের প্রতীক হিসেবে শরীরে উল্কি আঁকিয়েছিলেন। তাঁদের অনেকেই এখন মনে করেছেন এটা ঠিক কাজ হয়নি। কারণ, সামাজিক এবং ধর্মীয় ভাবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সবচেয়ে বেশি ট্যাটু মুছেছি একে-৪৭ এবং ফুলের। অনেকেই গলায়, হাতে, বুকে রাইফেল আঁকিয়েছিলেন। তাঁরা এর পরিণতি নিয়ে খুবই চিন্তিত।’’
শরীর থেকে উল্কি-অপসারণের পিছনে অনেকগুলি কারণ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যতম কারণ, নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি। শরীরে ট্যাটু থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই বাহিনীর নজরে পড়তে হচ্ছে। একটি কারণ, ধর্মীয়। অনেক যুবকের মতে, ইসলাম শরীরের এই পরিবর্তনকে অনুমোদন করে না। ফ্যাশনের জন্যই বছর খানেক আগে ট্যাটু করিয়েছিলেন মুখতার আহমদ। তাঁর কথায়, ‘‘স্রেফ ফ্যাশন করতেই ট্যাটু করেছিলাম। কিন্তু বুঝলাম, ইসলাম এতে অনুমতি দেয় না। তাই সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
কাশ্মীরের ইসলামিক পণ্ডিতরা ট্যাটুর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বেশ সোচ্চার। মসজিদগুলোর ধর্মীয় বক্তৃতায় নিয়মিত ট্যাটুর বিপক্ষে বলছেন। বলা হচ্ছে, এটি ধর্মীয় শিক্ষার বিরোধী, কিছু ধর্মীয় কর্তব্য পালনে বাধা দিতে পারে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)