ফাইল চিত্র
গত সপ্তাহে দোহায় তালিবানের ভারপ্রাপ্ত নেতা শের মহম্মদ আব্বাস স্তানিকজ়াইয়ের সঙ্গে ভারতীয় কূটনৈতিক কর্তা তথা কাতারে ভারতের রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তলের আনুষ্ঠানিক বৈঠকেই ইঙ্গিতটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এখনও ঘোষণা করা না হলেও, তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথাই ভাবছে নয়াদিল্লি। সে ক্ষেত্রে তালিবান সরকারের সম্ভাব্য প্রধান মোল্লা আব্দুল গনি বরাদরের সঙ্গে ভারতের সমীকরণ কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে সাউথ ব্লকের অন্দরমহলে।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, মোল্লা আব্দুল গনি বরাদরের অতীত ইতিহাস যা-ই থাকুক, পরবর্তী কালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বিশ্বব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞান নিশ্চয় তৈরি হয়েছে। সেটা মন্দের ভাল। গত তিন বছর ধরে দোহায় আমেরিকার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বরাদরই প্রধান মুখ ছিলেন। বিশ্বের অন্য বড় শক্তিধর দেশগুলির সঙ্গে তালিবানের দৌত্যও করে গিয়েছেন তিনিই। ফলে ভারত-সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণে এই তিন বছরে তাঁর অর্জিত অভিজ্ঞতার প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে নয়াদিল্লি। তা ছাড়া বরাদর অথবা মোল্লা আব্দুল রউফ আলিজার মতো নেতারা তালিবানের মধ্যে অপেক্ষাকৃত মধ্যমপন্থী বলেও পরিচিত।
উরুজগান প্রদেশে ১৯৬৮ সালে জন্ম এই দুরানি পাশতুন বরাদরের। মোল্লা ওমরের ঘনিষ্ঠ এই নেতা ১৯৯৬-২০০১-র তালিবান জমানায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে কাজ করেছেন। আমেরিকার হামলার পর পাকিস্তানে পালিয়ে যান তিনি, কিন্তু সেখান থেকেই আমেরিকার সেনার বিরুদ্ধে তালিবানদের লড়াইয়ে সব রকম সহযোগিতা করে গিয়েছেন। ২০১০-এ পাকিস্তান সরকারই তাঁকে গ্রেফতার করে এবং ৮ বছরের জন্য কারাগারে পাঠায়। সূত্রের খবর, বরাদর তলায় তলায় তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে আঁতাঁত রাখছিলেন বলে সন্দেহ করে পাকিস্তান। আমেরিকার সঙ্গেও তাঁর কোনও গোপন চুক্তি হয়েছিল বলে ধারণা অনেকের।
২০১৮ সাল থেকে আমেরিকা পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি করতে থাকে, বরাদরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য যাতে তিনি শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে পারেন। সেই মোতাবেক তাঁকে ছাড়া হয়, এবং বরাদর আলোচনার টেবিলে আসেন। ভারতের আশা, ক্ষমতায় বসার পরেও বরাদর ভুলবেন না, যে দেশে (পাকিস্তান) তিনি আশ্রয়ের জন্য গিয়েছিলেন, তারা কী ব্যবহার তাঁর সঙ্গে করেছে! আবার যখন সম্পর্কের ভারসাম্যের প্রয়োজন হয়েছে, তখন তাঁকে ব্যবহারও করেছে।
তবে বরাদরের একার উপর যে পাকিস্তান অথবা ভারত সংক্রান্ত নীতি প্রণয়নের ভার থাকবে না, সেটাও জানে নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে তিনি প্রশাসন চালাতে কত দূর সফল হবেন বা আদৌ তা চাইবেন কি না— সে সব এখনও স্পষ্ট নয় ভারতের কাছে।
গত কয়েক দিনে তালিবান মিশ্র সঙ্কেত দিয়ে চলেছে, যা বিভ্রান্তি বাড়াচ্ছে সাউথ ব্লকের। এক দিকে শরিয়তি আইনের কথা বলা হচ্ছে, তার পরেই মধ্যমপন্থা নিয়ে চলার বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে অগস্ট শেষের দোহা বৈঠকে বরাদর জানিয়েছিলেন, ভারতের জঙ্গি সংক্রান্ত উদ্বেগ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। তালিব নেতৃত্ব এটাও বলেছেন যে, কাশ্মীর আফগানিস্তানের অংশ নয়, ফলে ভারত-পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে বিষয়টির সমাধান করে নিলে কাবুলের মাথাব্যথা নেই। কিন্তু ক’দিনের মধ্যে সেই তালিবানকেই কাশ্মীরের মুসলমানদের স্বার্থ নিয়ে স্বর তুলতে দেখা যাচ্ছে।
ফলে বরাদরের তথাকথিত মধ্যমপন্থা এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তালিবান সরকারের সঙ্গে ভবিষ্যত আদানপ্রদান কেমন হবে, তা নিয়ে নিঃসংশয় হতে পারছে না নয়াদিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy