অলোক বর্মা ও রাকেশ আস্থানা, দুই সিবিআই কর্তার বিরুদ্ধেই ঘুষের অভিযোগ। —ফাইল চিত্র
সিবিআই-এর নম্বর ওয়ান বনাম নম্বর টু! অলোক বর্মার সঙ্গে রাকেশ আস্থানার সংঘাত। একে অন্যের বিরুদ্ধে এক গুচ্ছ অভিযোগ এবং তার জেরেই সিবিআই-এর অন্দরের সংঘাত চলে এসেছিল বাইরে। আর তার জেরেই পরের পর পদক্ষেপ।
বস্তুত অলোক বর্মার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, তদন্তে প্রভাব খাটানো, গোয়েন্দা তথ্য পেয়েও নিষ্ক্রিয় থাকার মতো এক গুচ্ছ অভিযোগ তোলেন আস্থানা। গত ২৪ অগস্ট ক্যাবিনেট সচিবকে সেই সংক্রান্ত চিঠি পাঠান তিনি। সেই সব অভিযোগের নথি সিভিসিতে পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্র।
তবে সব অভিযোগ উড়িয়ে দেন অলোক বর্মা। তাঁর দাবি, ওই সব অভিযোগ মিথ্যে ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে অলোক বর্মাকে সিভিসিতে ডেকে পাঠানো হয়, তখন বর্মা আবার আস্থানার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ জানিয়ে আসেন।
আবার রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ উঠেছে। এক নয় একাধিক অভিযোগ সামনে চলে এসেছে অলোক বর্মার সঙ্গে সংঘাতের বিষয়টি সামনে আসার পর।
আরও পড়ুন: ‘প্রমাণহীন অভিযোগে বদলি, নষ্ট হয়েছে সিবিআইয়ের স্বার্বভৌমত্ব’, বিস্ফোরক অলোক বর্মা
আরও পড়ুন: জোট চূড়ান্ত? কাল লখনউতে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকের ডাক মায়া-অখিলেশের
কাঠগড়ায় অলোক বর্মা
‘দু’কোটির ঘুষ’
কানপুরের মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশির বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির মামলায় সতীশবাবু সানা নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করছিল সিবিআই। এই সতীশের কাছ থেকে অলোক বর্মা দু’কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ আস্থানার। আস্থানার দাবি, সতীশ সানাকে গ্রেফতার করে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর অলোক বর্মাকে একটি প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু বর্মা সেই ফাইল চার দিন আটকে রাখেন। সেই সুযোগে দেশ ছেড়ে পালানোর ছক কষতে শুরু করেন সতীশ। কিন্তু তার আগেই তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা লুক আউট নোটিস জারি করে ফেলায় পালাতে পারেননি সতীশ। আস্থানার আরও দাবি, এর পর ৩ অক্টোবর ফের ওই ফাইল পাঠানো হয় সিবিআই ডিরেক্টরকে। কিন্তু সেই ফাইল তিনি সময়ে ফেরত দেননি।
‘আইআরসিটিসি মামলায় প্রভাব’
গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সিভিসি-কে একটি চিঠি পাঠিয়ে আইআরসিটিসি মামলার তদন্তে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ তোলেন আস্থানা। রেলের সঙ্গে আইআরসিটিসি-র চুক্তিতে দুর্নিতির অভিযোগের তদন্ত করছিল সিবিআই। এই মামলায় অভিযুক্ত লালুপ্রসাদ যাদব এবং তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবী এবং ছেলে তেজস্বী যাদব। আস্থানার অভিযোগ, তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে সব দিকে আঁটঘাট বেঁধে যখন বিভিন্ন জায়গায় একযোগে তল্লাশি অভিযানের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছিল, তখনই ডিরেক্টর অলোক বর্মা তাঁদের থামিয়ে দেন।
‘গোয়েন্দা তথ্যে নিষ্ক্রিয়তা’
কয়লা কেলেঙ্কারিতে এক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। কিন্তু বর্মা সেই তথ্যের ভিত্তিতে কোনও ব্যবস্থা নেননি। ফলে লুক আউট নোটিস জারি করা যায়নি। ফলে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় ওই অভিযুক্ত।
আইএনএক্স মিডিয়া মামলা
এই মামলায় তদন্ত করছিলেন রাকেশ আস্থানা। কিন্তু আচমকাই এই মামলা থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
‘অপদস্থ করতে বদলি’
সিভিসি-র কাছে আস্থানা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর সহকর্মী এনপিএম সিনহাকে কোনও কারণ ছাড়াই আচমকা বদলি করে দেন। শুধুমাত্র তাঁকেঅপদস্থ করতেই আস্থানা এই কাজ করেছিলেন বলে দাবি বর্মার।
আতসকাচে আস্থানা
‘প্রায় ৪ কোটি ঘুষ’
গত ১৫ অক্টোবর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। ওই এফআইআর-এ স্টারলিং বায়োটেক নামে একটি সংস্থার কাছ থেকে কয়েক দফায় তিন কোটি ৯২ লক্ষ টাকা বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ তোলা হয়। মোট ২৩টি লেনদেন হয়। তার মধ্যে এক দফাতেই তিন কোটি ৮৮ কোটি টাকা হস্তান্তর হয়। এই বিপুল অঙ্কের টাকার প্রাপক ‘আরএ’। এফআইআর-এ যাকে রাকেশ আস্থানার নামের আদ্যক্ষর বলে উল্লেখ করা হয়।
এই এফআইআর খারিজ করার দাবিতে দিল্লি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন আস্থানা। তাঁর দাবি, ‘আরএ’ তিনি নন। ভুল অর্থ করা হচ্ছে।
‘আরও ২ কোটি ঘুষ’
যে সতীশ বাবু সানার কাছ থেকে অলোক বর্মা দু’কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই একই অভিযোগ রয়েছে রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধেও। অর্থাৎ ঘটনাচক্রে এই সতীশের কাছ থেকে রাকেশ আস্থানাও দু’কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy