ফাইল চিত্র।
রান তাড়া করতে গিয়ে সাত জন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাওয়ার পরে, হার নিশ্চিত বুঝেও গোটা ড্রেসিং রুম টেলএন্ডারদের ব্যাটিংয়ের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। একটাই আশায়। হার হলেও তা যেন কম রানে হয়!
নরেন্দ্র মোদী সরকারের রবিবাসরীয় ড্রেসিং রুমের ছবিটাও সেই রকম। সোমবার বিকেলে অর্থ বছরের প্রথম তিন মাস, এপ্রিল থেকে জুনের আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রকাশ হবে। এই তিন মাসের সিংহ ভাগ সময়েই লকডাউনের জেরে দেশের অর্থনীতি কার্যত অচল ছিল। ফলে জিডিপি-র সঙ্কোচন হবে, আর্থিক বৃদ্ধির হার শূন্যের অনেক নীচে থাকবে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। মতভেদ শুধু অর্থনীতির বহর বা জিডিপি-র কতখানি সঙ্কোচন হয়েছে, তা নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে অর্থ মন্ত্রকের প্রার্থনা একটাই। জিডিপি-র সঙ্কোচন হলেও তা যেন কম হয়। তা হলে অর্থনীতি দ্রুত প্রাক-কোভিড যুগে ফিরতে পারবে।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, সোমবার তাঁরা তিন মাসের জিডিপি-র হিসেব প্রকাশ করলেও সেখানে অর্থনীতির দুর্দশার পুরো ছবি ফুটে উঠবে না। বাস্তবে অর্থনীতির সঙ্কোচন কতখানি, তা পরে আরও বেশি করে টের পাওয়া যাবে। তখন সঙ্কোচনের হার আরও বাড়াতে হতে পারে।
আর্থিক বৃদ্ধির হার
২০১৮-১৯
• এপ্রিল-জুন ৭.১%
• জুলাই-সেপ্টেম্বর ৬.২%
• অক্টোবর-ডিসেম্বর ৫.৬%
• জানুয়ারি-মার্চ ৫.৭%
২০১৯-২০
• এপ্রিল-জুন ৫.২%
• জুলাই-সেপ্টেম্বর ৪.৪%
• অক্টোবর-ডিসেম্বর ৪.১%
• জানুয়ারি-মার্চ ৩.১%
২০২০-২১ এপ্রিল-জুন ?
কেন? পরিসংখ্যান মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, জিডিপি-র প্রাথমিক হিসেব কষার সময় মূলত সংগঠিত ক্ষেত্রের ছবি দেখে অসংগঠিত ক্ষেত্রের ছবিটা ধরে নেওয়া হয়। স্বাভাবিক সময়ে তাতে অনেকটা বাস্তব ছবি হয়তো ধরা পড়ে। কিন্তু কোভিড-এর মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অসংগঠিত ক্ষেত্রে ধাক্কা লেগেছে অনেক বেশি। কর্পোরেট সংস্থার মুনাফার অঙ্কে তা পুরোপুরি প্রতিফলিত হবে না। কারণ লকডাউনের সময় অনেক কর্পোরেট সংস্থার খরচও বেঁচেছে। পরে অসংগঠিত ক্ষেত্রের সমীক্ষার কাজ শেষ হলে আসল ছবি বোঝা যাবে। ফলে আপাতত এপ্রিল-জুনে জিডিপি-র যে পরিসংখ্যান প্রকাশিত হবে, পরে দেখা যেতে পারে, সঙ্কোচন আরও বেশি। নোট বাতিলের পরেও ঠিক একই ভাবে প্রথমে যে আর্থিক বৃদ্ধির অঙ্ক কষা হয়েছিল, পরে তা কমাতে হয়েছিল।
উৎপাদন শিল্পের সূচক আগেই জানিয়েছে, এপ্রিল থেকে জুন উৎপাদন শিল্প সঙ্কোচনের কবলে। লকডাউন শিথিল হয়ে শিল্পের কর্মকাণ্ড শুরু হলেও, জুলাইয়ে তা অব্যহত। পরিষেবা ক্ষেত্রে গত মার্চ থেকেই সঙ্কোচন চলছে। স্টেট ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদরা ১৫ শতাংশ সঙ্কোচনের আশঙ্কা করছেন। আর্থিক মূল্যায়ন সংস্থা আইসিআরএ-র আশঙ্কা, ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সঙ্কোচন হতে পারে। কেয়ার রেটিংসের আশঙ্কা, ২০ শতাংশ সঙ্কোচন হতে পারে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ইতিমধ্যেই কোভিড-কে ভগবানের মার বা দৈব-দুর্বিপাক বলে জানিয়ে দিয়েছেন, এর জন্য অর্থনীতির সঙ্কোচন হতে পারে। বিরোধীদের যুক্তি, লকডাউনের আগেই বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করেছিল। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের মন্তব্য, জানুয়ারি থেকে মার্চে বৃদ্ধির হার ৩.১ শতাংশে নেমে এসেছিল।
বিজেপি দাবি করেছিল, গোটা বিশ্বের বড় মাপের দেশগুলির অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ চলছে। অর্থনীতির সঙ্কোচন হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কিন্তু ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধি হবে। আর্থিক বৃদ্ধির হারে ভারত বিশ্বসেরা থাকবে। বিজেপি দাবি করে, আইএমএফ পূর্বাভাস করেছে, ২০২০-তে ভারতের বৃদ্ধির হার ১.৯ শতাংশ ছোঁবে। চিন, আমেরিকা, অন্যান্য দেশকে ছাপিয়ে ভারত বৃদ্ধির হারে প্রথম স্থানেই থাকবে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ওই পূর্বাভাস ছিল এপ্রিলের। পরে জুন মাসে আইএমএফ বলেছে, কোভিডের ধাক্কায় ২০২০-তে ভারতের জিডিপি ৪.৫% কমে যাবে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কটাক্ষ, ‘‘মোদীর স্পিন ও প্রচার, মিথ্যে, চরম মিথ্যে ও পরিসংখ্যান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy