ফাইল চিত্র।
বাংলার বিজেপির পর্যবেক্ষক পদ থেকে কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের অপসারণ এক প্রকার নিশ্চিত। কেন্দ্রীয় বিজেপি সূত্রের খবর, কৈলাসের দুই সহযোগী অমিত মালবীয় ও অরবিন্দ মেননকেও সরানোর কথা ভাবা হয়েছে। সূত্রের মতে, তিন পর্যবেক্ষকের ভূমিকাতেই ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এঁদের পরিবর্তে রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে একজন বর্ষীয়ান নেতাকে নিয়োগের দাবি জানানো হয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বের মতে, যিনিই দায়িত্বে আসেন, তিনিই উত্তর ভারতের জাতপাতের মানসিকতা দিয়ে বাংলাকে বিচার করতে যান। তেমন মানসিকতার বাইরে কাউকে বাংলার দায়িত্বে চাওয়া হয়েছে। সূত্রের মতে, কৈলাসের পরিবর্তে যে বিকল্প নামগুলি নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব ভাবনাচিন্তা করছেন, তার মধ্যে দৌড়ে এগিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিনোদ তাওড়ে।
লোকসভার মতো আশাব্যঞ্জক ফলাফল বিধানসভা নির্বাচনে না হওয়ায় কৈলাসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। তার পর থেকে আর বাংলামুখো হননি তিনি। রাজ্য বিজেপির কোনও কিছুতেই তিনি অংশগ্রহণ করেননি। তাঁর দুই সহকারীর মধ্যে অরবিন্দ মেননকেও সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। এত দিন বকলমে দায়িত্ব সামলাতেন অমিত মালবীয়। লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এখন থেকে বাংলার দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘দীর্ঘ সময় ধরেই কৈলাসকে সরানোর দাবি করছেন রাজ্য নেতৃত্ব। এত দিনেও কেন হয়নি, সেটাই অবাক ব্যাপার।’’
রাজ্যে প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে আলোচনা করতে কিছু দিন আগেই বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্য বিজেপির ওই শীর্ষ নেতা। সেখানে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে নেতাদের দিল্লি থেকে পাঠাচ্ছেন, তাঁদের কারও পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে ধারণাই নেই। মূলত গো-বলয়ের ওই নেতারা ভাবছেন, জাতপাতের সমীকরণ দিয়ে উত্তরপ্রদেশ-বিহারের মতো সাফল্য বাংলাতেও পাবেন। যে রাজ্যে বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ বিয়েতেই জাতপাত মানেন না, সেখানকার বাসিন্দারা যে জাতপাত দেখে ভোট দেন না, এই সত্য না বোঝা পর্যন্ত বিজেপির বাংলায় সাফল্য পাওয়া মুশকিল।’’
ওই নেতার আক্ষেপ, ‘‘নেতারা এসেই জানতে চান, ব্রাহ্মণ ভোট কত রয়েছে, কায়স্থ ভোট কত রয়েছে!’’ সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মথুরাপুর-সহ মোট তিনটি কেন্দ্রের দলীয় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় আইন প্রতিমন্ত্রী তথা উত্তরপ্রদেশের নেতা এস পি বঘেল। রাজ্যে নেতাটির কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ঘুরে এসে বঘেল বলছেন, ওখানে তাঁর জাতের কোনও ভোট ব্যাঙ্ক নেই! তিনি কাজ করবেন কী ভাবে!’’
বাংলার দুই সহ-পর্যবেক্ষকের কাজেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সন্তুষ্ট নন বলেই মত ওই রাজ্য নেতার। তাঁর দাবি, ‘‘অমিত মালবীয় কলকাতা গিয়ে হোটেল ছেড়ে নড়েন না। পথে না নেমে হোটেলে বসেই দলের রণকৌশল তৈরি করেন। আর অরবিন্দ মেননের আফশোস, তাঁকে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার আমন্ত্রণই জানানো হয় না।’’ সূত্রের মতে, লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে দ্রুত একজন সর্বক্ষণের পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হতে পারে। সেই দৌড়ে আপাতত এগিয়ে বিনোদ। ফডনবীশ সরকারের প্রাক্তন স্কুল শিক্ষা মন্ত্রী বিনোদ বর্তমানে দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও অন্যতম সাধারণ সম্পাদক। এই মুহূর্তে তিনি কোনও রাজ্যে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে নেই। ফলে তাঁর নাম এগিয়ে রয়েছে।
সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও ওই পদের জন্য আরও দু’টি নাম ভাসছে। তাঁদের মধ্যে একজন সুনীল দেওধর। ত্রিপুরায় বাম জামানার অবসান ঘটাতে তাঁর বড় অবদান ছিল। তবে তিনি এই মুহূর্তে অন্ধ্রপ্রদেশের দায়িত্বে আছেন। সেখানে ২০২৪ সালে বিধানসভা নির্বাচন। তাই তাঁকে বাংলায় আনার সম্ভাবনা কম। রাজ্য বিজেপির ওই নেতার দাবি, বাংলায় লড়াই কঠিন বলে অধিকাংশ নেতানেত্রীই পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব নেওয়ার প্রশ্নে এড়িয়ে যান।
দ্বিতীয় নামটি স্মৃতি ইরানি। মা বাঙালি হওয়ার সুবাদে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে স্মৃতির সম্পর্ক থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হল, তিনি অহঙ্কারী, উদ্ধত। ফলে তাঁকে পাঠালে আদৌ কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দলেই। উপরন্তু তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় সাংগঠনিক পদে বহাল করাও মুশকিল। পর্যবেক্ষকদের নিয়োদ-অপসারণ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “পর্যবেক্ষকের কাজ হল দল পরিচালনায় সহযোগিতা করা এবং কেন্দ্রের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক বজায় রাখা। কাজ তো রাজ্যের নেতাদেরই করতে হবে। তাই যে নাম নিয়েই আলোচনা চলুক না কেন, তা নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy