শিক্ষকের অভাবে বছর পাঁচেক আগেই বাণিজ্য বিভাগ তুলে দিতে হয়েছে। সাত পার্শ্বশিক্ষক একে একে ছেড়ে গিয়েছেন। ৩৫ জন শিক্ষক থাকার কথা, নতুন নিয়োগ না হওয়ায় চারটি পদ ফাঁকা। এই মাসেই আরও এক শিক্ষক অবসর নিতে চলেছেন। পার্শ্বশিক্ষক ধরলে ঘাটতি ১২ জনের। পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ষোলোশো। ফলে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে কৃষ্ণনগর হাইস্কুল। প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের স্কুলে কোনও শিক্ষকের চাকরি যায়নি। তা সত্ত্বেও এই সঙ্কট। যে সমস্ত স্কুলে শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে, তাদের কী অবস্থা!”
নদিয়ার বহু স্কুলেই আগে থেকে শূন্যপদ জমে উঠেছে। তার উপর নেমেছে চাকরি বাতিলের খাঁড়া। তার জেরে এখন পঠনপাঠন চালু রাখাই দায়। চাপড়ার বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রানাবন্ধ সেন্ট মেরিজ় হাইস্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় আঠারোশো। ৪০ জন স্থায়ী শিক্ষক থাকার কথা, রয়েছেন ২৯ জন। জীবনবিজ্ঞানের কোনও শিক্ষক নেই। জীবনবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকায় কর্মশিক্ষার শিক্ষককে ক্লাস নিতে বলা হয়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক জয়ন্ত ঘোষ বলেন, “পুরোদমে ক্লাস চালু হলে কী ভাবে সামাল দেব, জানি না।”
করিমপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে মোট ৪০ জন শিক্ষিকার জায়গায় রয়েছেন মাত্র ১৯ জন। কেচুয়াডাঙ্গা বিধানচন্দ্র বিদ্যানিকেতনে মোট ২৬ জন শিক্ষকের জায়গায় রয়েছেন ১৫ জন।অঞ্জনগড় হাই স্কুলে ৩০ জন স্থায়ী শিক্ষক থাকার কথা, রয়েছেন ২০ জন। শান্তিপুরের বাগআঁচড়া হাই স্কুলে ৪০ জন শিক্ষক থাকার কথা, রয়েছেন ২৭ জন। পলাশির মীরা হাই স্কুলে ৪৫ জন শিক্ষকের জায়গায় রয়েছেন ২৭ জন। সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় উনিশশো। লাখুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় পনেরোশো পড়ুয়া রয়েছে। সেখানে ছ’জন শিক্ষকের পদ আগেই শূন্য ছিল। চারজন চাকরি হারিয়েছেন। সেখানেও আছেন ২৭ জন।
এই যদি নমুনা হয়, জেলার স্কুলগুলিতে পড়াশোনার কী হবে তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে। তবে নদিয়া জেলা মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক শুভ্রকান্তি নন্দের দাবি, “সম্প্রতি প্রায় আটশো শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। আগামী দিনে আরও হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)