‘বেচ বেচকে খায়ি মালাই, মোদী-আদানি ভাই ভাই’ বলে বিরোধী সাংসদেরা রাজ্যসভার ওয়েলে নেমে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাঁদের সতর্ক করতে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় একে একে বিরোধী সাংসদদের নাম পড়তে শুরু করলেন। এক এক জনের নাম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা বিদ্রুপে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টির সাংসদেরা ‘ইয়েস স্যার’, ‘প্রেজেন্ট প্লিজ’ বলে জবাব দিতে শুরু করলেন।
বিরোধী সাংসদদের সঙ্গে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের ধনখড়ের এই ‘সংঘাত’-এর জেরে আজ রাজ্যসভার অধিবেশন এক ঘণ্টা চলার পরেই মুলতুবি করে দিতে হল। তার আগে আজ বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে অভিযোগ তোলেন, চেয়ারম্যান সরকারের চাপে কাজ করছেন। চেয়ারম্যান পরে সেই অভিযোগ সংসদের রেকর্ড থেকে মুছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু রাহুল গান্ধী তাঁর লোকসভা কেন্দ্র ওয়েনাডের সভা থেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কংগ্রেস সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুললেই তা সংসদের নথি থেকে মুছে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে নেহরু-গান্ধী পরিবারকে অপমান করছেন, তখন তা মুছে দেওয়া হচ্ছে না।
রাহুল আজ বলেন, “এখন আদানি ও অম্বানীর নাম বললেই প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের ছবি ইন্টারনেটে সর্বত্র দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী আদানির বিমানে চড়েন। তাঁকে খোশ মেজাজে, হাসি মুখে আদানির সঙ্গে বিমানের ভিতরে দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে আদানি সঙ্গে যান।” রাহুল আজ অভিযোগ তুলেছেন, “আমি সংসদে কাউকে অপমান করিনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাকে অপমান করেছেন। তিনি বলেছেন, কেন আমার পদবী গান্ধী, কেন নেহরু নয়। কিন্তু তাঁর কথা সংসদের রেকর্ড থেকে মোছা হয়নি।”
রাহুল যখন নাম না করে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন, সেই সময় লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখে কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীও একই অভিযোগ তুলেছেন। অধীরের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী-আদানি নিয়ে অভিযোগ তোলায় রাহুল গান্ধীর বক্তব্য মুছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিজেপি সাংসদেরা প্রায়ই জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, মনমোহন সিংহের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলেন। রাহুল গান্ধীর পরিবার সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্য করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
প্রধানমন্ত্রী-আদানি সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ তোলার পরে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বিজেপি অধিকার ভঙ্গের নোটিসও এনেছিল। অভিযোগ ছিল, রাহুল প্রমাণ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। এ বিষয়ে সংসদের সচিবালয় থেকে রাহুলের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। রাহুল আজ বলেছেন, তিনি স্পিকারকে চিঠি লিখে প্রতিটি বিষয়ে প্রমাণ জমা দিয়েছেন।
লোকসভায় রাহুলের মতো রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের বক্তৃতার অংশ মুছে দেওয়া, রাজ্যসভা টিভিতে বিরোধীদের বিক্ষোভ না-দেখানো এবং কংগ্রেস সাংসদ রজনী পাটিলকে সাসপেন্ড করা নিয়ে ধনখড়ের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘাত তুঙ্গে উঠেছিল। আজও তা নিয়ে বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধের শেষ দিনে বেলা ১২টা নাগাদ সভা মুলতুবি করে দেওয়ার আগে ধনখড় বিরোধী সাংসদদের দোষারোপ করে বলেছেন, ‘লাগাতার’ ও ‘ইচ্ছাকৃত’ গন্ডগোলের জেরেই তাঁকে অধিবেশন মুলতুবি করে দিতে হল।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)