প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
সংঘর্ষে গত কাল এক কৃষকের মৃত্যুর পরে পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানায় ঘাঁটি গাড়া কৃষকেরা তাঁদের ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচি দু’দিন স্থগিত রেখেছেন। তবে বিক্ষোভ স্তিমিত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নিজেকে ‘কৃষক ভাইবোনেদের’ প্রতি সংবেদনশীল হিসেবে তুলে ধরতে চাইলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও কৃষকদের ‘ভাই’ ও ‘অন্নদাতা’ সম্বোধন করে বললেন, সরকার সব সময়েই আলোচনায় রাজি। কিন্তু রাতেই বিজেপি-শাসিত হরিয়ানার অম্বালা পুলিশ জানাল, শম্ভু সীমানায় ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা, সম্পত্তিহানি, পুলিশের উপরে হামলা ও অশান্তিতে ইন্ধনের অভিযোগে কৃষক নেতা এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
গত কালই আখের অর্থকরী মূল্য আগামী মরসুমে ৮% বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার উল্লেখ করে আজ এক্স হ্যান্ডলে মোদী লেখেন, ‘সারা দেশের কৃষক ভাইবোনেদের উন্নয়নের স্বার্থে গৃহীত প্রত্যেকটি সংকল্প যাতে পূর্ণ হয়, সে বিষয়ে আমাদের সরকার দায়বদ্ধ। আখের অর্থকরী মূল্যের ঐতিহাসিক বৃদ্ধির ফলে দেশের কোটি কোটি আখচাষি উপকৃত হবেন।’ এর পরে আমদাবাদের এক অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ক্ষুদ্র কৃষকদের কল্যাণই আমাদের লক্ষ্য।”
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগেও প্রস্তুত ছিলাম, আজও আছি, ভবিষ্যতেও থাকব।’’ তাঁর বক্তব্য, কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে মোদী সরকার নানা পদক্ষেপ করেছে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) দ্বিগুণ করা হয়েছে। ফসল কেনা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। সারা বিশ্বে ভারতই আখের সর্বোচ্চ দাম দেয়। চাষের খরচ ও কৃষকের পারিবারিক শ্রমের হিসাব যোগ করে যে ‘এ২ প্লাস’ সূত্রে ফসলের দাম ধরার কথা, আখের দাম তার চেয়েও ১০৭ শতাংশ বেশি ধার্য হয়েছে। ইউপিএ জমানার তুলনা টেনে অনুরাগের দাবি, মোদীর জমানায় অনেক বেশি এমএসপি পাচ্ছেন কৃষকেরা। গত দশ বছরে ধান, গম, তৈলবীজ, ডাল কিনতে মোদী সরকার খরচ করেছে ১৮.৩৯ লক্ষ কোটি টাকা। সেই তুলনায় ইউপিএ জমানা খরচ হয়েছিল ৫.৫ লক্ষ কোটি টাকা। মন্ত্রী বলেন, ‘‘সারা বিশ্বে সারের দাম বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও ভারত সরকার ৩ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়েছে, যাতে চাষিরা সুলভ মূল্যে সার পান।’’
রাতে অবশ্য বিজেপি-শাসিত হরিয়ানার পুলিশই জাতীয় নিরাপত্তা আইনে কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা জানিয়েছে। এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টে অম্বালা পুলিশের অভিযোগ, কৃষকদের আন্দোলন চলাকালীন অন্তত ৩০ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। এক জনের মস্তিষ্কে হেমারেজ হয়েছে, দু’জন পুলিশ মারা গিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শম্ভু সীমানায় ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা, সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি নষ্ট, পুলিশের উপরে পাথর ছোড়ার অভিযোগ তোলার পাশাপাশি কৃষক নেতারা লাগাতার আইনশৃঙ্খলা ভেঙে চলেছেন বলেও দাবি করেছে অম্বালা পুলিশ। এক্স হ্যান্ডলে তারা বলেছে, সমাজমাধ্যম ব্যবহার করেও ক্রমাগত উস্কানি দেওয়া চলছে। এই পরিস্থিতিতে অপরাধমূলক কাজকর্ম বন্ধের লক্ষ্যে ‘কৃষক সংগঠনগুলির প্রধান পদাধিকারী ও আন্দোলনকারীদের’ বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
কৃষকদের দাবি নিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি তুলেছে কংগ্রেস। গত কাল পঞ্জাব-হরিয়ানার খনৌরী সীমানায় নিহত ২১ বছরের কৃষক শুভকরণ সিংহের মাথায় গুলির ক্ষত ছিল বলে এক চিকিৎসক দাবি করেছিলেন। আজ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইটারে লেখেন, ‘কৃষক এমএসপি চেয়েছিল, তাকে গুলি করা হল— এই কি গণতন্ত্রের জননী?’ মোদী বিভিন্ন সময়ে ভারতকে ‘গণতন্ত্রের জননী’ বলে দাবি করেন। তাকেই কটাক্ষ করেছেন রাহুল। দিল্লি বিধানসভা শুভকরণের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছে।
এ বারের আন্দোলনে যোগ না দিলেও সংযুক্ত কিসান মোর্চা এই মৃত্যুর প্রতিবাদে কালা দিবস পালনের ডাক দিয়েছে। মোর্চার জাতীয় কোঅর্ডিনেশন কমিটি ও জেনারেল বডির বৈঠকের পরে কৃষক নেতা অভীক সাহা বলেন, ‘‘আগামিকাল থেকে আমরা দেশজোড়া মেগা কর্মসূচি শুরু করছি। ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘ব্ল্যাক ডে’ বা আক্রোশ দিবস পালিত হবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি হবে ‘ট্র্যাক্টর প্রদর্শন’ (সড়কে ট্র্যাক্টর-সহ বিক্ষোভ)। ১৪ মার্চ দিল্লির রামলীলা ময়দানে অল ইন্ডিয়া কিসান মজদুর মহাপঞ্চায়েত আয়োজিত হবে।’’ সম্মেলনে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অভীক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy