প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
এত দিন কেন্দ্রের টাকায় কাজ হওয়া প্রকল্পে রাজ্যগুলি হাতে টাকা পেত সরাসরি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে যে টাকা আসত, তা তোলা থাকত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের খোলা প্রকল্প-ভিত্তিক নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে। কিন্তু কেন্দ্র এবং রাজ্যের প্রশাসনিক সূত্রে খবর, খুব তাড়াতাড়িই আমূল বদলে যেতে চলেছে সেই পদ্ধতি। নতুন নিয়মে (‘জাস্ট ইন টাইম’) প্রকল্পের টাকা রাখা থাকবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে। যখন প্রয়োজন, তখনই তা পাওয়া যাবে ঠিকই। কিন্তু আগের মতো তা আর ফেলে রাখা যাবে না অ্যাকাউন্টে। প্রকল্পের প্রতিটি পর্বের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছ থেকে তা চাইতে হবে হিসাব বুঝিয়ে দিয়ে। শুধু পুরোদস্তুর কেন্দ্রীয় অর্থে পরিচালিত প্রকল্পে নয়, অদূর ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় অনুদানভুক্ত প্রকল্পেও (যেখানে কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ অংশীদারি) এই ব্যবস্থা দ্রুত চালু হতে চলেছে বলেই প্রশাসনিক সূত্রে খবর। এবং এই নতুন নিয়ম পশ্চিমবঙ্গ-সহ সমস্ত রাজ্যের জন্যই।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সম্প্রতি এ রাজ্যে এক খাতের কেন্দ্রীয় বরাদ্দ অন্য কাজে ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। বিরোধীরা যেমন অভিযোগ তুলেছিলেন, রেল দুর্ঘটনার পরে ক্ষতিপূরণ দিতে মিড-ডে মিলের টাকা ব্যবহার করেছে রাজ্য। শুধু তা-ই নয়, অব্যবহৃত টাকা স্রেফ অ্যাকাউন্টে রেখে দেওয়ার দরুন বিপুল টাকা সুদও ‘অনৈতিক ভাবে’ ব্যবহার করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু নতুন নিয়ম পুরোদস্তুর চালু হলে, এই দুই কাজই করা সমস্ত রাজ্যের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মানছেন পোড়খাওয়া প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ।
অর্থ দফতর সূত্রে অবশ্য দাবি, বিষয়টি পরিকল্পনার স্তরে রয়েছে। চলছে প্রস্তুতি পদ্ধতির চূড়ান্ত নিয়ম-বিধি এখনও হাতে আসেনি। এলে, পদক্ষেপ করা হবে। এক কর্তার মতে, “রাজ্যের ততটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে তহবিলে বিপুল অঙ্কের টাকা জমা না পড়লে, বরং সমস্যায় পড়তে পারে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিই।”
কেন্দ্র ইতিমধ্যেই সব রাজ্যকে জানিয়ে দিয়েছে, আপাতত পুরোপুরি কেন্দ্রীয় অর্থে পরিচালিত প্রকল্পগুলি পরিচালিত হবে কোষাগারের একক তহবিল (ট্রেজ়ারি সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট) থেকে। প্রতিটি মন্ত্রকে একটি করে কেন্দ্রীয় নোডাল এজেন্সি তৈরি হবে। তারা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে একটি করে অ্যাকাউন্ট খুলবে। কোন প্রকল্পে কত বরাদ্দ, তা নির্ধারিত থাকে সরকারি স্তরেই। বাজেট বরাদ্দের পরে ‘পে অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিস’-এর মাধ্যমে সেখানে টাকা পাঠাবে অর্থ মন্ত্রক। তার ভিত্তিতেই প্রকল্পের অগ্রগতির উপরে নির্ভর করে টাকা ছাড়বে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, শীর্ষ ব্যাঙ্ক এই পদ্ধতির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেলে, কেন্দ্রীয় অনুদানভুক্ত প্রকল্পগুলিও (যেখানে কেন্দ্র রাজ্য উভয়ের বরাদ্দ রয়েছে) একই পদ্ধতিতে চলবে।
আর্থিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, নতুন নিয়ম চালু হলে, কোনও প্রকল্পের অব্যবহৃত অর্থ রাজ্যের হাতে আর থাকবে না। ফলে বাজেট বরাদ্দ সূত্রে খরচের পূর্ণ তথ্য থাকবে অর্থ মন্ত্রকের হাতে। অব্যবহৃত অর্থ ফিরিয়ে বাজেট সাশ্রয়ও সে ক্ষেত্রে সম্ভব হবে বলে তাঁদের দাবি।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সব রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গকেও অর্থ মন্ত্রক সম্প্রতি লিখিত ভাবে জানিয়েছে, তাদেরও একটি করে অভিন্ন নোডাল এজেন্সি গঠন করতে হবে। কেন্দ্রীয় বরাদ্দের অব্যবহৃত অর্থ প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্রের অভিন্ন তহবিলে ফিরিয়ে দিয়ে আগের সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে হবে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কেও খুলতে হবে নতুন অ্যাকাউন্ট। তেমনই আবার রাজ্যের বরাদ্দের অব্যবহৃত অংশ ফিরে আসবে রাজ্যের কোষাগারে।
নতুন নিয়মে হিসাবপত্তর যতটা সম্ভব যেন শূন্য থেকে শুরু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy