সৌরভকুমার শর্মা
ফি বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে ছাত্র আন্দোলন আর টানা অচলাবস্থার মধ্যেই এ বার শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিল জেএনইউয়ে।
পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের একাংশের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্কুল অব কম্পিউটার অ্যান্ড সিস্টেমস সায়েন্সেস বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে আরএসএসের ছাত্রনেতা সৌরভকুমার শর্মার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট কারণ আছে। প্রথমত, ওই পদে নিয়োগের জন্য দেওয়া বিজ্ঞাপনে প্রথমে যে ডিগ্রি বা যোগ্যতার কথা বলা হয়েছিল, তা সৌরভের ছিল না। যেখানে কম্পিউটার সায়েন্সে অন্তত এমটেক, এমই বা এমফিল ডিগ্রি চাওয়া হয়েছিল, সেখানে সৌরভ কম্পিউটেশনাল এবং সিস্টেম বায়োলজি-তে এমটেক। সেই সঙ্গে অভিযোগ, এই পদে আবেদনের সুযোগ করে দিতেই মৌখিক পরীক্ষার দিনই তড়িঘড়ি তাঁকে পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে দেওয়া হয়। ক্যাম্পাসে গুঞ্জন, এবিভিপি-র সক্রিয় সদস্য হওয়ার কারণেই এই সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
শিক্ষকদের সংগঠন জেএনইউটিএ-র এক সদস্যের অভিযোগ, উপযুক্ত ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই কার্যত নিয়ম ভেঙে তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে। যদিও রেজিস্ট্রার প্রমোদ কুমার বলেন, ‘‘জেএনইউয়ের ছাত্র সংগঠন জেএনইউএসইউয়ের অন্তত দশ জন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। কোনও ইউনিয়নের সদস্য হলে তাঁর শিক্ষক হিসেবে যোগদানে বাধা আছে কি?’’ জেএনইউটিএ-র সম্পাদক সুরজিৎ মজুমদারের দাবি, অনেক দিন ধরেই নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে উপাচার্যকে কাঠগড়ায় তুলছেন তাঁরা। যে ভাবে বর্তমান উপাচার্যের জমানায় নিয়োগের পুরো ব্যবস্থাকে কব্জা করা হয়েছে, আঙুল তুলেছেন সে দিকেও। কিন্তু ছবিটা বদলায়নি। সুরজিতের যুক্তি, যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা থেকে যাঁরা উপযুক্ত জনকে শিক্ষক হিসেবে বেছে নেবেন, সেই প্যানেলকেই পকেটে পুরে রাখতে চাইছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যেমন, এই বাছাইকারীদের মধ্যে তিন জন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ থাকেন। কারা তা হতে পারেন, সেই প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা সেন্টার। তার পরে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এবং এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলের ছাড়পত্র পেয়ে তা আসে উপাচার্যের টেবিলে। তখন সেই তালিকা থেকে চূড়ান্ত তিন জনকে বেছে নেওয়ার অধিকার আছে উপাচার্যের। কিন্তু সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ এম জগদেশ কুমার উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তালিকার বাইরে থেকে নিজের পছন্দের লোকের নাম বিশেষজ্ঞ হিসেবে পাশ করিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
এ ছাড়া, আগে ডিন ও রেজিস্ট্রারের পদে অধ্যাপকেরা বসতেন পালা করে। মূলত বয়স এবং অভিজ্ঞতা বেশি থাকার নিরিখে। এখন বদলেছে সেই নিয়মও। নিজের পছন্দের লোককে ওই পদে বসাচ্ছেন উপাচার্য। তিন বিশেষজ্ঞ আর এই দু’জনের বাইরে শিক্ষক নিয়োগের প্যানেলে থাকেন উপাচার্য নিজে এবং সরকারি প্রতিনিধি। ফলে পুরো প্যানেলই কার্যত উপাচার্যের পকেটে থাকছে বলে অধ্যাপক সংগঠনের অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়। কোন পদের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা বা ডিগ্রি কী চাওয়া হবে, তা ঠিক করে স্ক্রিনিং কমিটি। নিয়োগের ক্ষেত্রে তা মেনে চলার কথা কর্তৃপক্ষের। অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থীর সংখ্যা খুব বেশি হলে, কাঙ্খিত যোগ্যতার তালিকায় কিছু বাড়তি শর্ত তবু জোড়া যায়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী তাকে লঘু করা কিংবা বদলে দেওয়া যায় না কখনও। কিন্তু সৌরভের ক্ষেত্রে তা-ই করা হয়েছে বলে সুরজিৎদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, যোগ্যতার মাপকাঠি বদলের এই অনিয়ম হচ্ছে আরও অনেক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেই। সমস্যা খতিয়ে দেখতে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের গড়া তিন সদস্যের কমিটি আজই তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy