রবিবার মহারাষ্ট্রের পালঘরের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল টাটা সন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির
রতন টাটার হাত ধরেই তাঁর উত্থান। দীর্ঘ প্রায় ৭০ বছরের সম্পর্কের সুবাদে টাটা সন্সের সর্বোচ্চ পদেও তাঁর ঠাঁই হয়েছিল। মাত্র চার বছরের মাথায় সেই সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। চেয়ারম্যান পদ থেকে ‘বিতাড়ন’ ইস্তক দুই গোষ্ঠীর মধ্যে, বলা ভাল দুই পার্সি গোষ্ঠী-প্রধানের মধ্যে তেতো বাদানুবাদ, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ ঘিরে বারবার উত্তাল হয়েছে গোটা দেশ। দীর্ঘ ছ’বছরের সেই আইনি লড়াইয়ে ইতি চলতি বছরের মে মাসেই কার্যত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। রবিবার মহারাষ্ট্রের পালঘরের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনায় টাটা সন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির মৃত্যুতে দুই ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সেই সম্পর্ক, সেই তিক্ততা আবার উঠে এল চর্চায়।
২০১২ সালে রতন টাটার পর সাইরাসকে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়। টাটা গোষ্ঠীর হোল্ডিং সংস্থা টাটা সন্সের ১৮.৩৭% অংশীদারি শাপুরজি পালোনজি গোষ্ঠীর (এসপি গোষ্ঠী) হাতে। যার প্রোমোটার সাইরাসের পরিবার। তারাই টাটা সন্সের বৃহত্তম সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডার। অর্থাৎ, টাটা সন্সে টাটা-পরিবার ব্যতীত যাদের শেয়ার রয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে এসপি গোষ্ঠীর হাতে। সেই সূত্রেই টাটা গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ পদে স্থলাভিষিক্ত হন সাইরাস। কিন্তু চার বছরের মাথায় ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর তাঁকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয়। পদে বসানো হয় টাটা কর্ণধার রতনের ঘনিষ্ঠ নটরাজন চন্দ্রশেখরনকে। তার পর থেকে শুরু হয় টাটা–মিস্ত্রির বাগ্যুদ্ধ ও আইনি লড়াই।
টাটাদের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডারদের দমিয়ে রাখার ও টাটা সন্সের পরিচালনায় অব্যবস্থার অভিযোগ তুলেছিল সাইরাসের পরিবার। আবেদন করা হয়েছিল মিস্ত্রিকে সরানোর বিরুদ্ধেও। এনসিএলএটি-র দরজায় কড়া নেড়ে সাইরাসের বক্তব্য ছিল, কর্পোরেট দুনিয়ার ইতিহাসে এমন অন্যায় ভাবে কাউকে সরানোর পদক্ষেপ বিরল। যা টাটাদের সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডারদের টুঁটি টিপে ধরারই চেষ্টা। সেই আবেদনে সাড়াও মিলেছিল। এমন ভাবে মিলেছিল যে, টাটাদের সাম্রাজ্যে যথেষ্ট ‘ঝাঁকুনি’ লেগেছে বলেই সেই সময় দাবি করেছিল কর্পোরেট দুনিয়ার একাংশ।
টাটা সন্সের ‘চরিত্র’ বদলের চেষ্টার বিরুদ্ধে আপত্তি ছিল মিস্ত্রিদের। অভিযোগ ছিল, প্রাইভেট সংস্থা হলে যে কোনও সময় টাটা সন্সের শেয়ার হাতবদল করা যাবে না। যা সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডারদের অন্যায় ভাবে দাবিয়ে রাখতে সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডারদের (একটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর মধ্যে যাদের শেয়ার সব চেয়ে বেশি) এক অসাধু চেষ্টা। টাটাদের দাবি ছিল, সংস্থার স্বার্থেই এই বদল জরুরি। এনসিএলএটিতে চলা লড়াইয়ে সেই দাবি ধুলিস্যাৎ হলেও শীর্ষ আদালতে পাল্টা মামলা করে টাটারা। নালিশ, আর্থিক সমস্যা মেটাতে ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে টাটা সন্সের শেয়ার বন্ধক রেখে তহবিল তুলছিল মিস্ত্রি পরিবার। সাপুরজি-পালোনজির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে মিস্ত্রিকে সরানো কর্পোরেট আইনের হত্যা। টাটা গোষ্ঠীর দাবি, আইনি পরিসরের মধ্যে থেকেই মিস্ত্রিকে পদ থেকে সরানো হয়েছে।
এই কাজিয়ায় শেষ পর্যন্ত টাটাদের দাবিকেই মান্যতা নিয়েছে শীর্ষ আদালত। গত বছর ২৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে জানায়, ২০১৬ সালে সাইরাস মিস্ত্রিকে সরানোর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। আইন ভাঙেনি টাটা গোষ্ঠী। সব দিক খেয়াল রেখেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরে এই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জিও জানান সাইরাস। কিন্তু তা খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy