Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

আপনাদের বাড়িতে আজ জল এসেছে?

তামিলনাডুতে জলের আকাল নতুন নয়। বৃষ্টিনির্ভর এই রাজ্যে সারা বছরই জলের সমস্যা কমবেশি লেগেই থাকে। পানীয় জল প্রায় সকলেই কিনে খেতেই অভ্যস্ত। তবে রান্না এবং অন্যান্য ব্যবহার্য জলের এতটা অকুলান বহু বছর হয়নি।

প্রকল্প ভট্টাচার্য
চেন্নাই শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ০২:১১
Share: Save:

‘সুপ্রভাত’ নয়। ‘কেমন আছেন’ নয়। ইদানিং চেন্নাইয়ের সৌজন্যমূলক প্রথম প্রশ্ন—‘‘জল এসেছে?’’

তামিলনাডুতে জলের আকাল নতুন নয়। বৃষ্টিনির্ভর এই রাজ্যে সারা বছরই জলের সমস্যা কমবেশি লেগেই থাকে। পানীয় জল প্রায় সকলেই কিনে খেতেই অভ্যস্ত। তবে রান্না এবং অন্যান্য ব্যবহার্য জলের এতটা অকুলান বহু বছর হয়নি।

২০১৫ সালে চেন্নাইয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির মধ্যেও অনেকে ভেবেছিল, যা-ই হোক আগামী কয়েক বছর শহরটার জলসঙ্কট থাকবে না। কিন্তু কে জানত, তারপর থেকেই বরুণদেব মুখ ঘুরিয়ে নেবেন! নভেম্বরে যেটুকু বৃষ্টি হচ্ছিল, তাও কমে এল। ফলে মাটির তলার জল চলে গেল আরও নীচে। যেটুকু জল পাওয়া যাচ্ছিল, বড় বড় অফিস এবং ফ্ল্যাটের শক্তিশালী মোটর টেনে নিতে লাগল। আর সাধারণ মানুষের শুরু হল আকাল। জল নেই, একেবারেই। পুণ্ডি সহ চারটে বড় রিজার্ভারের জল একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। চেম্বারমবক্কম হ্রদের কাছে সিক্কারায়াপুরমের রিজার্ভার মার্চ মাসেই শুকিয়ে গেছে। সরকারি কুয়োতেও জল নেই। সরকারি জলের গাড়ি এক একটা এলাকায় জল দিলেও, সারিসারি ঘড়া এবং বালতির লাইনে তা ফুরিয়ে যায় শীঘ্রই! ছোট এবং মাঝারি দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, স্কুলে দেওয়া হচ্ছে হাফ ছুটি, এমনকি, বেশ কিছু অফিসে জোর করেই বাধ্য করা হচ্ছে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করতে। কারণ, জল নেই!

গ্রীষ্মের ছুটিতে অনেকেই বাধ্য হয়ে চলে গেলেন নিজেদের গ্রামে। দক্ষিণ তামিলনাডুতে বৃষ্টি হচ্ছে, নদীনালা আছে, তাই তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কত দিনই বা আর নিজেদের কাজকর্ম ছেড়ে জলের অভাবে পালিয়ে বেড়ানো যায়! যাঁরা টাকা দিয়ে কিনতে পারছেন, আকাশছোঁয়া দামে জল কিনে সারাদিনে ঘণ্টাখানেকের মতো জল পাচ্ছেন। আর বেশির ভাগ মানুষ, যাঁরা কিনতে পারছেন না? আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে
আছেন— যদি বৃষ্টি নামে। দু’দিন অল্প বৃষ্টি হল, কিন্তু মাটিতে পড়েই সব জল মুহূর্তের মধ্যে শুষে গেল। হিসেবমতো এখানে পুরোদমে বর্ষা জাঁকিয়ে বসতে এখনও অনেক বাকি। তত দিন যে কী ভাবে চলবে...

এই শহরে প্রতিদিন ৮৩০ মিলিয়ন লিটার জল প্রয়োজন হয়। সরকারের দাবি, বর্তমানে ৫৩০ মিলিয়ন লিটার জল সরবরাহ করা হচ্ছে প্রতিদিন। কডলুরের ভীরানাম হ্রদ, যেখান থেকে কাবেরীর জল তামিলনাড়ুতে ঢোকে, বর্তমানে খটখটে শুকনো। মেত্তুর বাঁধ বন্ধ পড়ে আছে, কর্ণাটক দিতে চাইছে না কাবেরীর জলের ভাগ।

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৮ বছর আগে যেমন রেলপথে তেলবহনকারী বগিতে ভরে জল আনা হতো, তেমনটি শুরু হবে শীঘ্রই। এই মর্মে জোলারপেটার কাছে কাজও চলছে পুরদমে। অবশ্যই তাতে চেন্নাইয়ের সমস্যা কিছুটা কমবে, কিন্তু তামিলনাড়ুর বাকি এলাকায় কী হবে! অক্টোবরের আগে তো তেমন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই!

না, অত দূরের কথা এখন কেউ ভাবছেন না। আপাতত আজ এবং আগামী কালের চিন্তা। তাই প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা হলেই এই প্রশ্নটাই শোনা যাচ্ছে, “জল এসেছে আপনাদের?”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy